ঈদে কোটি পরিবার পাচ্ছে ১০ কেজি করে চাল উপহার

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ, ২০২৫, ১০:০৯ দুপুর

পবিত্র রমজানে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ট্রাকসেলের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। ঈদের পর নতুন করে ট্রাকসেল চালু হবে কিনা এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কর্মকর্তারা। তবে ঈদ উপলক্ষে উপহার হিসেবে এক কোটি নিম্নবিত্ত পরিবারকে বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল দিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি আঞ্চলিক কার্যালয় ঢাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যুগ্ম পরিচালক (অফিসপ্রধান) হুমায়ুন কবির পবিত্র রমজানে ৬৪ জেলায় ট্রাকসেলের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম সফলভাবে শেষ হওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ট্রাকসেল কর্মসূচি শেষ হলেও স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি অব্যাহত থাকবে। নতুন করে ট্রাকসেল চালুর বিষয়টি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। টিসিবি শুধু সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় ৬৩ লাখ কার্ডধারী সুবিধাভোগীর বাইরে টিসিবি সুবিধাভোগীর আওতা বাড়ানোর লক্ষ্যে রমজানে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে সারা দেশের জেলা সদরে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করে সরকার। বৃহস্পতিবার তা শেষ হয়েছে।

টিসিবির কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ৫০, চট্টগ্রামে ২০, অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে ১০ এবং ৫৬ জেলা শহরে ৫টি করে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি করে টিসিবি। প্রতিটি ট্রাকে ৪০০ জনের পণ্য সে হিসেবে প্রতিদিন ৪১০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে এক লাখ ৬৪ হাজার মানুষের কাছে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করে টিসিবি।

জুলাই বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা মহানগরের ৫০টি ও চট্টগ্রাম মহানগরের ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে টিসিবি। গত ৩১ ডিসেম্বরের পর এ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এক মাস ৯ দিন বন্ধ থাকার পর ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে মাহে রমজান উপলক্ষে পাঁচ পণ্য ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করে আসছিল টিসিবি। এ দফায় টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন), দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পান। এর মধ্যে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম ১০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০, চিনি ৭০, ছোলা ৬০ ও আধাকেজি খেজুর ১৫৫ টাকায় বিক্রি করে সংস্থাটি। মূলত রমজান মাস উপলক্ষে ছোলা ও খেজুর বিক্রি করা হয়।

এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঈদ উপলক্ষে উপহার হিসেবে এক কোটি নিম্নবিত্ত পরিবারকে বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করছে সরকার। এছাড়াও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় মার্চ ও এপ্রিল মাসে ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে দেশের ৫০ লাখ পরিবারকে।

এদিকে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল আমদানি করছে সরকার। ভিয়েতনাম থেকে আরও ২৯ হাজার টন চাল এসেছে। চাল নিয়ে এভি ওবিই ডিনারেস নামের জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে। ২২ মার্চ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার ও জনসংযোগ কর্মকর্তা ইমদাদ ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ভিয়েতনাম থেকে জি টু জি ভিত্তিতে মোট ১ লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে দুটি চালানে মোট ৩০ হাজার ৩০০ টন চাল ইতোমধ্যে দেশে পৌঁছেছে। জাহাজে রক্ষিত চালের নমুনা পরীক্ষা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এবং চাল খালাসের কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, দেড়দশকের মধ্যে চলতি মাহে রমজানে নিত্যপণ্যের দামের নিম্নমুখী প্রবণতায় রেকর্ড গড়েছে। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুলাই নাগাদ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোনো রমজানেই নিত্যপণ্যের দাম কখনও কমেনি, বরং পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। এতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবনধারণ কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। এবারই প্রথম অন্তর্বর্তী সরকারের নানামুখী উদ্যোগে নিত্যপণ্যের দামের নিম্নমুখী প্রবণতায় জনজীবনে স্বস্তি ফিরেছে।

Link copied!