ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫
আলী হাসান তৈয়ব

ঈদ শুধু আনন্দ নয়, ইবাদত

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৩০ মার্চ, ২০২৫, ১১:৫৮ রাত

ঈদ শুধু ঈদ নয়। ঈদ শুধু আনন্দ নয়। ঈদ আনন্দ ও ইবাদত। বরং ঈদ ইবাদতের আনন্দ। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আনন্দ। কোরআন নাজিলের মাসে ইবাদত করে প্রভুর নৈকট্য অর্জনের আনন্দ। মাসব্যাপী এত এত ইবাদতের তাওফিক লাভের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া ও মহিমা ঘোষণার আনন্দ।

এই ঈদের নাম ঈদুল ফিতর। ফিতর মানে রোজা ভঙ্গ করা। তাই ঈদুল ফিতরের পূর্ণাঙ্গ অর্থ হলো মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা ভঙ্গ বা সমাপ্ত করার আনন্দ। সুতরাং ঈদের প্রকৃত আনন্দ তার, যে ম্যাসবাপী সিয়াম সাধনা করেছে। তারাবি, তেলাওয়াত, দান-সদকা, দোয়া ও নানা ইবাদতের মাধ্যমে রোজাকে সার্থক ও সুরভিত করেছে। আল্লাহতায়ালার শয়তানকে বন্দি রাখা, জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া এবং জাহান্নামের দুয়ার বন্ধ রাখার সুযোগ নিয়ে নিজেকে বানিয়েছে খাঁটি মোমিন। তাকওয়ার গুণে ঋদ্ধ ও আলোকিত মানুষ।

রমজান বিদায় হয়ে শাওয়াল মাস আসে। এ মাসের প্রথম দিনই ঈদুল ফিতর। এদিনের জন্য দেওয়া হয়েছে দুটি ইবাদত। একটি সদকাতুল ফিতর, অপরটি দুই রাকাত ঈদুল ফিতরের নামাজ। দুটোর সঙ্গেই জড়িত রমজানের রোজা। ঈদের নামাজে যাবার আগেই ফিতরা আদায় করতে বলা হয়েছে। কেননা ফিতরা মূলত রোজার ত্রুটিবিচ্যুতির কাফফারা বা ক্ষতিপূরণ। ফিতরার তাৎপর্য সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রা.) কর্তৃক বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) জাকাতুল ফিতর (সদকাতুল ফিতর) ফরজ করেছেন অনর্থক ও অশ্লীল কথাবার্তা দ্বারা সিয়ামের যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে তা থেকে পবিত্র করা এবং মিসকিনদের খাদ্য প্রদানের জন্য। ঈদের নামাজের আগে আদায় করলে তা জাকাতুল ফিতর হিসেবে গণ্য হবে। আর ঈদের নামাজের পর আদায় করলে তা অন্যান্য সাধারণ দানের মতো একটি দান হবে।’ (আবু দাউদ : ১৬০৯)

ঈদের নামাজের প্রধান অনুষঙ্গ তাকবির। আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা। রমজান মাসের পরিসমাপ্তি থেকে ঈদের নামাজে যাতায়াত এবং দুই খুতবায় এ তাকবির বেশি বেশি পাঠ করা সুন্নত। এই তাকবিরের আদেশ করা হয়েছে রমজানে সিয়াম সাধনার বিধান তুলে ধরার পরপরই। আল্লাহতায়ালা বলেন : ‘যাতে তোমরা (রমজানের রোজার) গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহর মহত্ত (তাকবির) ঘোষণা কর। আর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)। এ থেকেও বোঝা যায় ঈদ আসলে রোজা ও রমজানের পুরস্কার।

সুতরাং ঈদের উৎসব সামাজিকভাবে সর্বজনীন হলেও, শিক্ষা ও তাৎপর্য বিচারে কিংবা প্রকৃত ঈমানের দৃষ্টিকোণে এটি রোজাদারের আনন্দ। রোজাদার আল্লাহভীরুদের তাকওয়ার ট্রেনিং পিরিয়ড সমাপ্তির উৎসব। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয় এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অতঃপর নামাজ আদায় করে।’ (সূরা আলা : ১৪-১৫)।

অর্থাৎ, সেই প্রকৃত সফল ব্যক্তি যে রমজানজুড়ে সিয়াম সাধনার পর সদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে তারপর তাকবির দ্বারা আল্লাহর স্মরণ করতে করতে ঈদগাহে যায় এবং ঈদের নামাজ আদায় করে। ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘আমিরুল মোমিনিন ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.) ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায়ের আদেশ দিতেন আর এ আয়াত দুটি প্রমাণ হিসেবে তেলাওয়াত করতেন।’

সে কারণেই আমাদের চেষ্টা করতে হবে, যেন ঈদুল ফিতর বা রোজা সমাপ্তির ঈদ উদযাপন রোজার চেতনা ও চাওয়ার পরিপন্থী না হয়। ঈদের আনন্দ করতে গিয়ে যেন রমজানে অর্জিত তাকওয়া বিসর্জন দিয়ে না বসি। রোজা নেই বলে যেন এক মাসের সংযমের শিক্ষা ভুলে এদিন পাপাচারে ডুবে না যাই।

এ লক্ষে ঈদের দিনেও আমাদের প্রিয় নবী (সা.) কিছু সুন্নত শিখিয়েছেন। সেগুলোর মাধ্যমে আমরা ঈদের দিন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করব। যার মধ্যে রয়েছে— পূর্বের দুটি তথা ফেতরা প্রদান ও তাকবির বলা এবং সৌন্দর্য অবলম্বন করা তথা গোসল করা, উত্তম পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা আর ঈদগাহে যাবার আগে কিছু মিষ্টান্ন খাওয়া এবং পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া ইত্যাদি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বলুন, ‘এটা আল্লাহর অনুগ্রহে ও তার দয়ায়; কাজেই এতে তারা যেন আনন্দিত হয়।’ (সূরা ইউনূস : ৫৮)।

মনে রাখতে হবে— আমরা যদি আমাদের পুরো জীবনকে বানাতে পারি রোজার মতো। রমজানের মতো সংযম ও তাকওয়াময়, তবে আমাদের মরণও হবে ঈদের মতো। ঈদের দিনের মতো আনন্দময়। আল্লাহর দিদার আর জান্নাত লাভের মতো শ্রেষ্ঠতম প্রাপ্তির। সেটাই উদ্দেশ্য মাহে রমজানের এবং সিয়াম সাধনার। সেটাই সেরা পাওয়া একজন মোমিনের।

লেখক : খতিব, আন-নূর জামে মসজিদ, টঙ্গী, গাজীপুর

 

Link copied!