ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫

কক্সবাজারের টেকনাফ ঈদের আনন্দ ফিকে হয়ে গেছে রোহিঙ্গাদের

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৩০ মার্চ, ২০২৫, ১১:৩৮ রাত

বছরের পর বছর বন্দী ক্যাম্পে। নেই বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ। পরিবার-পরিজন নিয়ে তাই এক ঘরে বসবাস ওদের। কক্সবাজারের টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে নেই ঈদের খুশি। নিজ দেশে ঈদ করতে না পারায় আছে তাদের চোখে-মুখে চিন্তার ভাঁজ। 

বলেছেন, বিতাড়িত হওয়ার আগে মিয়ানমারে ঈদ করার আনন্দটাই ছিল তাদের কাছে আলাদা। মা, বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সবাই যেন সে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতো। 

যদিও বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গা যেন আগামী ঈদ নিজেদের মাতৃভূমিতে উদযাপন করতে পারে-এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার সকালে নিজের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে ঈদের শুভেচ্ছা জানান ইউনূস। 

সরজমিনে এবারের ঈদের আনন্দ কেমন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে -তা জানতে পরিদর্শন করা হয় টেকনাফের আশ্রয়শিবিরগুলোতে। সেখানে গিয়ে কথা হয়  রোহিঙ্গা নাগরিক মো. ইলিয়াসের সাথে। 

 তিনি কষ্ট বুকে চেপে বলেন, ঈদ এলে আত্মীয়-স্বজন নিয়ে আনন্দে মেতে থাকতাম। কিন্তু ক্যাম্পে বসবাস করছি অনেক দিন হয়ে গেল। তাই এখানে চাইলেও পারবো না। মানুষ মার্কেটে গেলে আমাদের কান্না চলে আসে। কাপড় চোপড় নিলেও কোথায় বেড়াতে যাব? আত্মীয়-স্বজনের অনেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। সবার কাছেই ঈদের আনন্দ বন্দী। 

রোহিঙ্গা নাগরিক বাবুলের নিজের দেশে ফেরার জন্য মন কাঁদে। বলেন, নিজের দেশ ছেড়ে চলে এসেছি। ছেলেমেয়েদেরকে যেভাবে নিজের দেশে ঈদের সময় কাপড়-চোপড় কিনে দিতে পারতাম, এখানে সেটা পারছি না। মিয়ানমারে কাজকর্ম ছিল। বাংলাদেশে কোনো কাজ কর্ম নেই। ঈদের দিন অনেক আনন্দ করতে ইচ্ছে করে। কেনাকাটা-ঘুরে বেড়ানো এসব আর হচ্ছে কই? আমরা নিজ দেশে ঈদ করতে চাই। 

পঙ্গু স্বামী নিয়ে ভীষণ কষ্টে আছেন আরফা বেগম। টেকনাফ আশ্রয়শিবিরের একটি পাহাড়ে ঝুপড়ি ঘরে রোহিঙ্গা নাগরিক আরফা বেগমের বসবাস। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে আসার পর আমাদের ঘর নেই। ছোট্ট একটা ঘরে বসবাস করে আসছি। আমার স্বামী পঙ্গু। অনেক কষ্টে দিনযাপন করছি। আমার ৫টা মেয়ে রয়েছে। এইরকম একটা ঈদ এসেছে অথচ কিছুই দিতে পারিনি। খোঁজখবর নেওয়ার মতো তো আত্মীয়-স্বজনও নেই। মিয়ানমারে ঈদের সময় মার্কেটে যেতাম। কাপড় নিতাম। এখন মেয়েরা কাপড় খুঁজলে দিতে পারি না। দেশের জন্য অনেক মন কাঁদে। দেশের কথা মনে পড়লে মেয়েদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না।

তিনি আরো বলেন, গরু জবাই করে আত্মীয়-স্বজনরা খাবার ভাগাভাগি করেছি নিজ দেশে। হায়! এখানে কিনে খাওয়ারও টাকা নেই। 

ঈদের দিন নতুন পোশাক পড়লেও সবাই রোহিঙ্গা বলে উপহাস করে বলে জানালেন রশিদ আহমদ। চোখের কোণে জল রেখে বলেন, আমাদের মনে কোন হাসিখুশি নেই। ঈদের আনন্দ নেই। ঈদে আমরা নিজেরা কিছু নিব সেটা তো দূরের কথা, ছেলে মেয়েদেরকে কিছু দিতে পারিনি। টাকা কোথায় পাব? 

তিনি আরও বলেন, নিজের দেশটাকে হারিয়ে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে ঈদের আনন্দও হারিয়ে ফেলেছি। নতুন কাপড় পড়ে কাকে দেখাবো? আনন্দটাই যেন ফিকে হয়ে গেছে। এখানে আশ্রয় পেয়েছি এটুকু যথেষ্ট। ঈদের দিন আসলে কান্নায় দুচোখের পানি ধরে রাখতে পারি না।  

টেকনাফের শালবাগান, জাদিমুরা, নয়াপাড়া আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গাদের কারও মুখে নেই হাসি। সকাল থেকে আশ্রয়শিবিরের এ বাড়ি-ও বাড়ি ঘুরে কাউকে ঈদের খুশিতে পাওয়া যায়নি। 

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফসহ  ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে প্রায় ১৪ লাখের মতো। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। দীর্ঘ সময় পার হলেও একজন রোহিঙ্গাকে রাখাইন রাজ্যে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি ।

এদিকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দীর্ঘ ঈদের ছুটি, আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ জুনুনী গ্রেফতার, ক্যাম্প জুড়ে বিবদমান গ্রুপের টান টান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ানো হয়েছে তল্লাশি কার্যক্রম। 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ক্যাম্পে যেন বিশৃঙ্খলা না হয়, সেই ব্যাপারে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন বলছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে একযোগে কাজ করছে সব সংস্থা।

Link copied!