দেশে ‘গৃহযুদ্ধের পরিকল্পনা’ ও ‘সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ ৭৩ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি এই মামলা করেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন খান।
জানা যায়, ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’ নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বৈঠকে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের পরিকল্পনা এবং অন্তর্বর্তী সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। গত বছর ১৯ ডিসেম্বরের ওই বৈঠকে এ ষড়যন্ত্রের নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
ওই বৈঠকে দেশ বিদেশের ৫৭৭ জন অংশ নেন। এর মধ্যে ৭৩ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং মামলায় এদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি ৫০৪ জনের পরিচয় শনাক্তে কাজ করছে সিআইডি। পুরো বিষয়টি উঠে এসেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অনুসন্ধানে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলাটি করা হলে তদন্তের দায়িত্বও সিআইডিকে দেওয়া হয়েছে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসিম উদ্দিন খান যুগান্তরকে বলেন, ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণকারী ৭৩ জনের নাম পাওয়া গেছে। অন্যদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
তিনি জানান, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম মিটিংয়ে সরকার উৎখাতে গৃহযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধের সুস্পষ্ট উপাদান মামলায় বিদ্যমান রয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিষয়টি প্রতীয়মান হওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলাটি করলে আদালত তা আমলে নেয়। বৃহস্পতিবার সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশও দেন আদালত।
সূত্রে জানা গেছে, মামলায় দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. রাব্বি আলমকে। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন-খুলনা জেলা যুবলীগের সদস্য পারভেজ খান ইমন, খুলনার খবির ইসলাম আকাশ, জয় বাংলা ব্রিগেড বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মিটিংয়ে ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’ গঠন করে একটি গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে পলাতক শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বুঝিয়ে দেওয়া এবং তা নিশ্চিতকরণের জন্য শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত যুদ্ধ করে যাবেন বলে অনেকেই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৭৭ জন ওই জুম মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেন। মিটিংয়ে শেখ হাসিনার সব নির্দেশ পালন করার ব্যাপারে সবাই মতপ্রকাশ করেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. রাব্বি আলমের হোস্টিংয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং হোস্ট, কো-হোস্ট ও অংশগ্রহণকারী নেতা-কর্মীদের আলোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় এবং এ সরকারকে দেশ পরিচালনা করতে দেবে না বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।
বৈষষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু শুরু থেকেই এই সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে।
আপনার মতামত লিখুন :