সুলতান মেলায় আন্তর্জাতিক চিত্রকলা প্রদর্শনী
প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারি ২০২০

সাগর কর্মকার, প্রতিনিধি : বিশ্ব বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৯৫তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে নড়াইলে হয়েছে ১৩ দিন ব্যাপী “সুলতান মেলা ও শিল্প প্রদর্শনী”। এস এম সুলতান ফাউনডেশন ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে প্রতি বছরের মত শিল্পী সুলতানের ভক্ত নড়াইল বাসী সুলতানের শরণে আয়োজন করে সুলতান মেলা ও শিল্প প্রদর্শনী। এর অংশ হিসেবে মেলার সবচেয়ে বড় আয়োজন আন্তর্জাতিক চারুকলা প্রদর্শনী এবং আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বছর সুলতান মেলার ব্যাপক আয়োজন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে আয়োজিত।
মেলার তৃতীয় দিন চিত্রা নদীর পাড়ে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ চত্বরের সুলতান মঞ্চে আয়োজিত হয় আন্তর্জাতিক চিত্র কর্মশালা। কর্মশালায় সম্মেলন ঘটে দেশি-বিদেশী অনেক শিল্পীর, যার মাধ্যমে চমৎকার ভাবে আদান-প্রদান ঘটে শিল্প ও সংস্কৃতির। এ সময় আন্তর্জাতিক চারুকলা প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে সাতজন শিল্পীকে পুরস্কার দেয়া হয়। তারা হলেন- বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন চিত্র শিল্পী মাহফুজা বিউটি, ইলিয়াস হোসেন, নবরাজ রায়, শারমিলা কাদের এবং ভারতের শিল্পী শ্যামলী কর্মকার, সুপ্তি রায় ও রুপালি রায়। এছাড়া জিম্বাবুয়ে থেকে আগত চিত্রশিল্পী হাজভিনাই ব্রিজেট মুতাসাকে বিশেষ সুলতান সম্মাননা প্রদান করা হয়।আবার অথিতি শিল্পী হিসাবে শিল্পী তপু খান, শিল্পী শামিম রেজা ও শিল্পী ফাহমিদা খাতুন প্রদর্শনীতে অংশ নেন।
এই চিত্র প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ, ইউএসএ, জিম্বাবুয়ে, ভারতসহ মোট ১১টি দেশের ১৫০টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। সুলতান মঞ্চের পাশে ভিক্টোরিয়া কলেজের দর্শন বিভাগের হলরুমে চলছে এই প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে বিশিষ্ট জিম্বাবুয়েন শিল্পী হাজবেনি ব্রিজেট মুতাসার শিল্পকর্মে সাদা গোলাপি লাল রঙের ট্রেকচারে মাঝে ভেসে উঠে আফ্রিকান শিশুর মুখমণ্ডল। যা তার দেশি সমাজ ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। কর্মশালায় তার শিল্প কর্মে উঠে আসে দুই দেশের সংস্কৃতি, বিভিন্ন রঙের বলিষ্টো ব্রাশের টানের মাঝে একটি মেয়ের দুটি অপূর্ব চোখ। তিনি উল্লেখ করেন, সুলতানের শিল্পকর্ম সম্পর্কে তিনি পূর্বে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জেনে উৎসাহিত হয়ে সুলতান মেলা ও তার জন্মস্থান দেখতে আসেন।
শিল্পী শামিম রেজার ভিন্নধর্মী শিল্পকর্মের উপস্থাপনায় দেখা যায় বাংলার ফোক মতিভেফ্র সমূহ প্যাচওরক ও কাঁথার আদলে ফুটে উঠেছে। তার শিল্পকর্মে উজ্জ্বল রঙ ও বিভিন্ন রকমের পুতির উপস্থাপন দেখা যায় । শিল্পী ফাহমিদা খাতুনের হলুদ-নীল জল রঙয়ের পেইন্টিং এ নীলের মাঝে নীল বাঙ্গালি বধূর রূপ ফুটে উঠেছে। প্রাচ্য রীতির এই পেইন্টিংয়ে বাঙ্গালি বধূকে ঘিরে আমাদের সমাজের মানুষের স্বপন ও বেদনাকে তিনি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, একজন চিত্র শিল্পীকে কেন্দ্র করে এত বড় আয়োজন বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না। তার শিল্পে গ্রাম বাংলার চিত্রের সহজ-সরল উপস্থাপন, আর মানুষের প্রতি তার ভালবাসার কারনেই তা সম্ভব হয়েছে। তিনি সুলতানের শিল্পে মুগ্ধ হয়ে বার বার নড়াইলে ছুটে আসেন।
টেরাকোটা শিল্পী তপু খানের অপূর্ব সুন্দর টেরাকোটার মাঝে ভেসে উঠেসে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতি চিত্র। প্রদর্শনীতে অংশ গ্রহণকারী আরো বিশিষ্ট শিল্পীরা হলেন জার্মানি শিল্পী অনিল ও নেহাঙ্কা দনাও, আমেরিকান শিল্পী জিম মেথেও, ভারতীয় শিল্পী কাজল ভট্টাচার্য ভাদুরি, নেপালি শিল্পী ডাল বাহাদুর রাই, বাংলাদেশী অনাদী বৈরাগী, ইলিয়াস হোসেন, তরুণ ঘোষ, সামির বৈরাগী আর অনেকে দেশী-বিদেশী শিল্পীরা গ্রহণকারী করেন। প্রদর্শনীতে বিভিন্ন মাধ্যমের শিল্পকর্ম স্থান পায়, যেমন পেন্সিল, জলরং, এক্রিলিক, প্যাচওরর্ক, মিক্স মিডিয়া ও ভাস্কার্য। শিশু শিল্পীদের চিত্রকর্মেও প্রদর্শনীতে স্থান পায়।
সুলতান মেলার আন্তর্জাতিক চারুকলা প্রদর্শনী ও আর্ট ক্যাম্পের সদস্য সচীব চিত্রশিল্পী সমির কুমার বৈরাগী বলেন, ‘এতগুলো দেশি-বিদেশি চিত্রকরের অংশগ্রহণে ঢাকার বাইরে বড় পরিসরে আন্তর্জাতিক চারুকলা প্রদর্শনী বিস্ময়কর। এটা আমাদের তথা নড়াইলবাসীকে গর্বিত করেছে।’ সব মিলিয়ে গোটা সুলতান মঞ্চ প্রাঙ্গণে উৎসবের আমেজ বিরাজ করেছে।