কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি- ক্রেতা শুণ্যতায় ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে কৃষকের তরমুজ

প্রকাশিত : ২৮ এপ্রিল ২০২০
ছবি সংগৃহীত

আনোয়ার হোসেন আনু / এসকে রঞ্জন, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: নভেল করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কুয়াকাটা সমুদ্র উপকুলীয় এলাকার তরমুজ চাষীরা। তরমুজের ভরা মৌশুমে বাজারজাত করতে না পেরে লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে তরমুজ চাষীদের। প্রতিটি ক্ষেতেই এখন পরিপক্ক বড় বড় তরমুজ রয়েছে। এসব তরমুজ স্থানীয় বাজারেও বিক্রি করতে পারছে না চাষীরা।

এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পরেছে কৃষকরা। বিভিন্ন এনজিও, ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে সমুদ্র উপকুলের শত শত তরমুজ চাষিরা তরমুজ চাষ করে এখন হতাশায় দিন পার করছেন তারা। এক্ষতি কৃষকরা কেমন করে কাটিয়ে উঠবেন এমন দূঃসচিন্তায় ঘুম নেই তরমুজ চাষীদের। সারা দেশ লকডাউনের পাশাপাশি তরমুজ চাষিরাও লকডাউন হয়ে এখন ঘরে বসে সৃষ্টি কর্তার কাছে এ মাহামারি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য হাতজোড় করে মোনাজাত করছেন। কৃষকরা জানান, এমন সময় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে তরমুজ কেনার জন্য কৃষকের বাড়ি বাড়ি ভীড় জমাতো। সেখানে একজন ক্রেতাও আসছেনা কৃষকের কাছে। এ অবস্থায় তরমুজ চাষীরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়,কুয়াকাটার মম্বিপাড়ায়,মিশ্রিপাড়া, গঙ্গামতি,কাউয়ার চর,খাজুরা সহ উপকূলের বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ২হাজার হেক্টর জমিতে এবার তরমুজের চাষাবাদ হয়েছে । ইতোমধ্যে ক্ষেতের ফসল কোথাও পেকেছে , আবার অনেক ক্ষেতে পাকার উপক্রম হয়েছে। শত শত তরমুজ চাষিরা তরমুজ চাষ করে এখন মাথায় হাত রেখে বসে আছেন। করোনার লকডাউনের কারণে চরম বিপাকে পড়ছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর তরমুজ চাষিরা। ক্রেতা নেই। স্থাণীয় কোন বাজরেও উঠাতে পারছে না লকডাউনের কারনে। কেউ কেউ বাজারে নিয়ে গেলেও ক্রেতা শুন্যতায় আবার ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে বাড়িতে।
নভেম্বর মাস থেকে ডিসেম্বরে এর চাষাবাদ শুরু করে কৃষক। গাছে ফলন ধরা থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফল পরিপক্ক হয়। এ বছর প্রথম অবস্থায় ক্ষেত ঘূর্নিঝড় বুলবুলের আঘাতে লন্ডভন্ড হলে কোন কোন কৃষক জানুয়ারীর শেষের দিকে,আবার অনেকে ফেব্রƒয়ারীর প্রথম সপ্তাহে দ্বিতীয়বার চাষাবাদ শুরু করে।

সমুদ্র উপকুলীয় এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির তরমুজের মধ্যে বিগফ্যামিলী, জাম্বু জাগুয়ার, ড্রাগন ও বøাকটাইগার প্রজাতির তরমুজের ফলন ভাল বিধায় এগুলোর চাষাবাদ বেশী করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এ এলাকায় শতকরা আশি ভাগ কৃষক বিগফ্যামিলী প্রজাতির তরমুজই বেশী চাষাবাদ করে থাকেন। বিগত বছরের তুলনায় এবছর ব্যাপক ফলন হয়েছে। এসব তরমুজ ঢাকা, রাজশাহী, চট্রগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, বরিশাল সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার আড়ৎদাড়রা ক্ষেত থেকে তরমুজ কিনে ট্রাক বোঝাই করে নেন এলাকায়। তরমুজ পাকতে শুরু করলে শতশত ট্রাক অপেক্ষমান থাকে উৎপাদিত এলাকায়। এবছর করোন ভাইরাসের ভয়ে আড়ৎদারও আসছে না তরমুজ ক্রয়ে। সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে লোন নিয়ে তরমুজ চাষ করেছেন চাষীরা। কৃষকের ক্ষেতের বড় বড় পাকা তরমুজ ফেটে নস্ট হয়ে যাচ্ছে।

এমন দৃশ্য দেখে চোখের পানি ফেলছেন দরিদ্র কৃষকরা। তরমুজ চাষী আঃ রহিম (৪৬) বলেন, এনজিও থেকে লোন নিয়ে অনেক কষ্টে তিনি ৪ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। শুরুতেই বৃষ্টিতে কয়েকবার নস্ট হয়েছে। নতুন করে জমিতে সার অষুধ দেয়ার পরে কছিুটা ঠিক হলেও এখন বিক্রী করতে পারছেন না। কোন ক্রেতা আসছেনা। তরমুজ পেকে ক্ষেতে নস্ট হচ্ছে। কেউ কোন খবর নিচ্ছে না। তিনি কি করবেন ভেবে কূল পাচ্ছেন না। কৃষক রহিম এখন এনজিওর লোনের টাকা কিভাবে শোধ করবেন এনিয়ে দূঃসচিন্তায় আছেন। তরমুজ চাষী সাইকুল ইসলাম জানান, প্রতিবছর তরমুজ বিক্রি করে খবচের টাকা উঠেও বিঘা প্রতি ৫০-৬০হাজার টাকা লাভ করেছেন। এবছর তার উল্টো লোকসান গুনতে হচ্ছে। এখন করোনা ভাইরাসের কারণে কোন ক্রেতা আসছেনা। এ অবস্থায় এনজিওর লোন মওকুফ সহ সরকারের সহযোগীতা না পেলে তাদের সংসার নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে।

 

আপনার মতামত লিখুন :