পোশাক খাতের সংকট উত্তরণে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি

প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল ২০২০

মহামারি করোনাভাইরাসের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। এ মন্দার ফলে দেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগের যোগানদাতা, তৈরি পোশাক খাত একটি বড় ধরনের ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে হলে শ্রমিক, মালিক ও সরকার – এই তিন পক্ষকেই সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের প্রতি জোর দিয়েছেন তারা। তবে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিক- শ্রমিকের সঙ্গে বোঝাপড়ার একটা দূরত্ব এখনো রয়ে গেছে বলে মনে করেন তারা।

রানা প্লাজা ট্রাজেডির সপ্তমবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘কোভিড-১৯: সংকটের মুখে শ্রমিক ও মালিক – সরকারি উদ্যোগ ও করণীয়’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব পরামর্শ উঠে আসে। ফ্রেডরিখ-ইবার্ট-স্টিফটাং (এফইএস), বাংলাদেশ অফিসের সহযোগিতায় এই ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানটি হয়।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এই ভার্চুয়াল আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন। তিনি বলেন, সীমাবন্ধতার মধ্যে শ্রমিক কাজ করেন, সেই সীমাবদ্ধতার মধ্যে মালিকও কাজ করে, সরকারও করে থাকে। আমরা আলোচনায় দেখতে পাচ্ছি মালিক শ্রমিকের বোঝাপড়ার গ্যাপ এখনো রয়ে গেছে। এটা চিরাচরিত থাকে। একটা শিল্প তখনই ভালো করতে পারে যখন এই গ্যাপটা না থাকে কমে যায়। তখনই কিন্তু সেই শিল্পটার বিকাশ হয়। সংকট সুযোগ করে দেয়। আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে সেই সুযোগকে ব্যবহার করার। এই সুযোগকে ব্যবহার করতে হলে আমাদের মালিক শ্রমিক বায়ার, সরকার এবং নাগরিক সমাজ সকলকে এক সঙ্গে মিলে সমস্যাকে মোকাবেলা করতে হবে।

বৈশ্বিক এই মন্দার মাঝে পোশাক খাতের কার্যাদেশগুলো যেন অন্য দেশগুলোতে চলে না যায় সেক্ষেত্রে উদ্যোক্তা ও ক্রেতাদের দরকষাকষি অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আপাতত এই সংকট কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সকল পক্ষকেই সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন ড. ফাহমিদা।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সেখানে বলা হয়, চলামান মহামারির কারণে রপ্তানি আয়ের ওপরে যে প্রতিঘাত পড়েছে তার ফলে শ্রমিকদের জীবনমানের ওপর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এই সমস্যা নিরসনে পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সংগঠন ও শ্রমিকদের মাঝে যথাযথ সমন্বয় প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যদিও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি সাময়িক টানাপোড়েন চলছে, কিন্তু তাতে করে এই দুই দেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। বর্তমানে রপ্তানিখাতে যে স্থবিরাবস্থা বিরাজ করছে, ভবিষ্যতে তা কাটিয়ে উঠে ব্যবসার সুযোগ ধরে রাখার প্রতি উদ্যোক্তাদের মনোযোগী হতে হবে।’

বিজিএমইএর সহ-সভাপতি আরশাদ জামাল দীপু বলেন, ‘উদ্যোক্তা ও কারখানার মালিকরা বৈশ্বিক এই মহামারির ফলে সৃষ্ট সংকট গভীরভাবে বিশ্লেষণ করছে। এই অভিজ্ঞতা সবার জন্য নতুন। রানা প্লাজার মতো ট্রাজেডি ছিল জাতীয় পর্যায়ের সংকট কিন্তু এখন আমরা একটি বৈশ্বিক সংকটের মুখে পড়েছি। এজন্য হয়তো কিছু সমন্বয়ের ঘাটতি দেখা গিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তা ও কারখানা মালিকরা দেশের আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা করবে।’

এমন সংকটেও বড় বড় ক্রেতারা অর্ডার ক্যানসেল করছে সিপিডির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বায়ারদের কিছু বলার সুযোগ আছে কি না সংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সিপিডি একটা গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং আমরা অ্যাকশন ওরিয়েন্টেট গবেষণা করি। সুনির্দিষ্ট সুপারিশ উস্থাপন করে থাকি। সেটা নীতি নির্ধারক এবং যারা শিল্পের স্ঙ্গে সম্পৃক্ত আছে তাদের তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। সীমিত সক্ষমতার মধ্যেও এটা আমরা করি।

আপনার মতামত লিখুন :