দেশের পাঁচ কোটি লোক খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৯ এপ্রিল ২০২০

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের পাঁচ কোটি লোক খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে দেশে যাতে খাদ্য ঘাটতি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখছে সরকার। বর্তমানে ৫০ লাখ মানুষকে রেশন কার্ড দেওয়া হচ্ছে। আরো ৫০ লাখ লোককে রেশন কার্ড দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এক কোটি পরিবার খাদ্য সহায়তা পাবে। এই এক কোটি পরিবারে পাঁচজন করে সদস্য হলে পাঁচ কোটি লোক খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবে।’

গতকাল শনিবার একাদশ জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্বল্পতম সময়ের এই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “অনেক সময় আমি নিজেও এসএমএস পাই, এসএমএস করে ‘আপা, আমার ঘরে খাবার নাই’। সাথে সাথে আমরা উদ্যোগ নেই। শুধু তাকে নয়, আশেপাশে কোথাও কেউ কষ্টে আছে কি না, যারা হাত পাততে পারবে না, ঘরে খাবার নেই, চাইতে পারছে না; তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার সেই ব্যবস্থাটাও করছি।” মানুষের খাদ্যের অভাব যাতে না হয়, সে ব্যবস্থা সরকার করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সংসদ নেতা বলেন, ‘ঝড়-ঝঞ্ঝা, দুর্যোগ আসবেই এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সাহসের সঙ্গে আমাদের এসব মোকাবেলা করতে হবে। এই করোনা সংকট ঠিক কত দিন চলবে তা বিশ্বের কারোর জানা নেই। বিশ্বের অনেকেই করোনার কারণে যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছে, বাংলাদেশে যাতে দুর্ভিক্ষ না হয় সে জন্য এরই মধ্যে আমরা তিন বছর মেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন করছি। আমাদের দেশে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। এই সংকটকালে মানুষের জীবন যাতে চলে এবং সবাই সুরক্ষিত থাকে সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। দেশের একটি মানুষও যেন খাদ্যের অভাবে কষ্ট না পায় সে জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’

করোনা রোগীর চিকিৎসার সব খরচ সরকার বহন করবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। অনেক বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলায় পৃথক আইসোলেশন হাসপাতাল খোলা হয়েছে। ভবিষ্যতের জন্যও এরই মধ্যে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলা হাসপাতালে উন্নত ধরনের চিকিৎসা যাতে পায়, সেই ব্যবস্থাটাও করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকল ব্যবস্থাপনা আমরা নিচ্ছি। আমরা প্রতিটি জায়গায় বিশেষ করে স্থলবন্দর, বিমানবন্দর, নৌবন্দরসহ সব জায়গায় করোনা পরীক্ষার জন্য থার্মাল স্ক্যানার ও ইনফ্রারেড থার্মোমিটারের মাধ্যমে স্কিনিং করা শুরু করেছি। এ ছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে সব সেক্টরকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি জাতীয় কমিটি করে দিয়েছি। করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সংস্থা থেকে সহায়তা করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউকেএইড, ইউএসএইডসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে।’

করোনার নমুনা সংগ্রহে কিটের কোনো সংকট নেই বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমরা ৯২ হাজার পরীক্ষার কিট সংগ্রহ করেছি। তার মধ্য থেকে ২০ হাজার কিট বিতরণ করা হয়েছে এবং ৭২ হাজারের মতো কিট এখনো মজুদ রয়েছে। কিট সংগ্রহ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। কাজেই করোনা পরীক্ষায় কিটের কোনো অভাব হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।’ প্রতিটি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

করোনার কারণে দেশের অর্থনীতির নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কত দিন এই অবস্থা চলবে, বিশ্বের কেউই তা বলতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, দেশের অর্থনীতি যাতে গতিশীল ও প্রাণসঞ্চার হয় এবং অর্থনীতির নেতিবাচক দিকগুলো যাতে মোকাবেলা করতে পারি, সে জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। বড় শিল্প থেকে ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প, গার্মেন্ট, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর সবার কথা বিবেচনা করে এসব প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।’

দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একখণ্ড জমিও যেন অনাবাদী না থাকে সে জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান সংসদ নেতা। তিনি বলেন, ‘আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষি ঋণ দেওয়া হচ্ছে। সার-বীজসহ সবকিছু সরবরাহ করা হচ্ছে। যারা দিনমজুর তারা যেন ধান কাটতে যেতে পারেন সে জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশনাগুলো মেনে চলুন, অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি করবেন না। নিজেরা সুরক্ষিত থাকুন, অন্যদেরও সুরক্ষিত রাখুন।’ তিনি বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় দেশের মানুষ একটু বেশিই সাহসী হয়ে গেছে। এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। অথচ অনেকে ঘরে না থেকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছে, অনেকে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে সেসব জায়গাকে সংক্রমিত করছে।

 

আপনার মতামত লিখুন :