এক রাতেই চার শতাধিক ফিলিস্তিনি হত্যা, হামলা আরও ‘তীব্র’ হবে: নেতানিয়াহু
প্রকাশিত : ১৯ মার্চ ২০২৫

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। সবশেষ হামলায় এক রাতেই হত্যা করা হয়েছে চার শতাধিক ফিলিস্তিনিকে। আরও শত শত ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন এ হামলায়। ধসে পড়া ভবনের নিচে আটকে আছেন আরও অনেক মানুষ। গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজায় এটিই সবচেয়ে বড় ইসরায়েলি বিমান হামলা। এমন অবস্থায় গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের এ হামলা ও গণহত্যা কেবল ‘শুরু মাত্র’ বলে সতর্ক করে দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
বুধবার (১৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার ভোররাতে আকস্মিকভাবে গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। পবিত্র রমজান মাস হওয়ায় অনেক লোক সেহরি খাচ্ছিলেন, তখনই গাজায় হামলা ও বিস্ফোরণ শুরু হয়। বর্বর এই হামলায় কমপক্ষে ৪০৪ জন নিহত, ৫৬২ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়। গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজায় এটিই সবচেয়ে বড় বিমান হামলা।
হামলার পর সামনে আসতে থাকা একের পর এক ছবিতে দেখা যায়, নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে। ভোররাতে বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। পরে ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যমে সম্প্রচারিত এক টেলিভিশন ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেন, “আমরা যুদ্ধবিরতি কয়েক সপ্তাহের জন্য বাড়িয়েছিলাম, যদিও বিনিময়ে আমরা জিম্মিদের ফেরত পাইনি। আমরা দোহায় প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলাম এবং মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবও গ্রহণ করেছি, কিন্তু হামাস সকল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।”
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, উইটকফ উভয় পক্ষের কাছে একটি হালনাগাদ প্রস্তাব পেশ করেছিলেন, যেখানে ৫০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য পাঁচজন ইসরায়েলি বন্দির মুক্তি, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি, মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার এবং তিন ধাপের যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
এরপর হামাস শুক্রবার জানায়, তারা মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। একইসঙ্গে গাজা যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময়ের জন্য দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা পুনরায় শুরু করার অংশ হিসেবে একজন ইসরায়েলি-আমেরিকান সৈন্যের মুক্তি এবং চার দ্বৈত নাগরিকের মৃতদেহ ফেরত দিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু নেতানিয়াহু পাল্টা বলেন, “আমি হামাসকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম যে যদি তারা আমাদের বন্দিদের মুক্তি না দেয়, তাহলে আমরা আবার যুদ্ধ শুরু করব — এবং আমরা তা করেছি।”
এদিকে নির্মম হামলার প্রতিবাদে দেশে দেশে উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়। খোদ ইসরায়েলে হাজার হাজার মানুষ নেমেছেন রাজপথে। রাজধানী তেল আবিবের হাবিমা স্কয়ারে সরকারবিরোধী শ্লোগান দেন তারা। এছাড়া দেশটির সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে মিছিল করেন বিক্ষোভকারীরা। ইসরায়েলের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কেও হয়েছে প্রতিবাদ। টাইম স্কয়ারে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনা শ্লোগান দেন কয়েকশ মানুষ। গাজার মানুষের সাথে সংহতি জানিয়ে জর্ডানের আম্মানে রাস্তায় নেমে আসেন অনেকেই। এছাড়া ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসেও গাজায় বর্বর হামলার নিন্দা জানিয়ে হয়েছে বিক্ষোভ।