রোহিঙ্গাদের ‘অভিশাপ’ আরসা নেতা আতাউল্লাহ

প্রকাশিত : ১৯ মার্চ ২০২৫

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) নেতা আতাউল্লাহ যেন এক আতঙ্কের নাম। তার বেপরোয়া সিদ্ধান্তের কারণে লাখ লাখ রোহিঙ্গা হয়েছে বাস্তুচ্যুত। রোহিঙ্গাদের কাছে আতাউল্লাহ যেন এক অভিশাপের নাম।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) নারায়ণগঞ্জে আরসা প্রধান আতাউল্লাহসহ ৬ সদস্য গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার আসামীদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে নারায়ণগঞ্জ আদালত। এর আগে, সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসিক এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

পরে আটক আসামীদেরকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে তুলা হয়। আদালতে মামলার বাদি ১০ দিনে রিমাণ্ড আবেদন করলে আদালত ২ দফায় ১০ দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ‘আরসা’ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত রয়েছে আরসার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।

কে এই আতাউল্লাহ?

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ। পুরো নাম- আবু আম্মার জুনুনী। জন্ম ১৯৭৭ সালে, পাকিস্তানের করাচিতে। বাবা গোলাম শরীফ। সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে অষ্টম তিনি। ৬ বছর বয়সে চলে যান সৌদি আরবের রিয়াদে। ইসলামি শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষকতা করেন মক্কা ও রিয়াদে। ২০১৩ সালে আরসার প্রধান হিসেবে যোগ দেন।

অভিযোগ রয়েছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালায় আরসা। ফলাফল স্বরূপ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন অভিযান। এর জেরে নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা।

সমালোচকরা মনে করেন, তার বেপরোয়া সিদ্ধান্তে বিদ্রোহের কারণে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার জীবন বিপর্যস্ত। ফলে তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য ‘অভিশাপ’।

গণমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে মিয়ানমারভিত্তিক স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ রিচার্ড হর্সি বলেন, আতাউল্লাহ খুবই ক্যারিশমাটিক। সে সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। এমনভাবে কথা বলে যেন রোহিঙ্গাদের কষ্ট অনুভব করতে পারছে তিনি।

ধারণা করা হয়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশ চেকপোস্টে আতাউল্লাহ’র নির্দেশেই হামলা চালিয়েছিল আরসা। এরপর সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ৩০ বছর বয়সেই সে একটি বিদ্রোহী সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। শুরুতে এই সংগঠনের অল্প কয়েকটি বন্দুক ছিল, বেশিরভাগ সময় লাঠি ও ছুরি হাতেই হামলা চালাত তারা। পরবর্তীতে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র আসতে থাকে তাদের হাতে।

জানা যায়, তার বাবা করাচিতে দারুল উলুম মাদ্রাসায় পড়াশোনার পর পরিবারসহ সৌদি আরব পাড়ি দেয়। সেখানে শিক্ষকতা শুরু করে তার বাবা। এরপর এক বিত্তশালী পরিবারের নজরে আসে আতাউল্লাহ। সেই পরিবারের সন্তানদের পড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয় তাকে। পরে সৌদি আরব থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পাকিস্তানে ফিরে যায় আতাউল্লাহ।

এরপর রাখাইন গিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। গড়ে তোলে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন। সেখান থেকে লড়াইয়ের নাম করে বিরোধ সৃষ্টি করে মিয়ানমারের সরকারের সাথে।

রোহিঙ্গা নেতা মুহিব্বুল্লাহ হত্যা আতাউল্লাহর নির্দেশেই 

রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিব্বুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছিল আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির নির্দেশেই। গ্রেপ্তারের পর আরসার শীর্ষ নেতা নুর কামাল ওরফে সমিউদ্দিনের বরাতে ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর এসব তথ্য জানায় র‍্যাব-১৫।

র‌্যাব জানায়, রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনের পক্ষে থাকায় মুহিব্বুল্লাহর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল আরসা। সংগঠনের প্রধান আতাউল্লাহ তাকে মিয়ানমারে আরসার সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেন, কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কুতুপালং শরনার্থী শিবিরের এক বৈঠকে মুহিব্বুল্লাহ হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। দুই দিন পর, ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ১২ জনের একটি কিলার গ্রুপ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে মুহিব্বুল্লাহর কার্যালয়ে প্রবেশ করে এবং তাকে গুলি করে হত্যা করে।

 

আপনার মতামত লিখুন :