গণপিটুনির নামে নৈরাজ্য: বিচারব্যবস্থার বিপজ্জনক বিকল্প
প্রকাশিত : ১৭ মার্চ ২০২৫

ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা- ইতিহাসের জঘন্যতম ক্রাইম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। আপনি ভালো হলেও আমি লোক ভালো না ভাই। আমার বাড়ি বাংলাদেশে! ব্যক্তিগত শত্রুতা, জায়গাজমি নিয়ে বিরোধ কিংবা মতের অমিল- প্রতিশোধ নিতে শিশু বা নারীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ তুলে মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলার রেওয়াজ চালু হবে। এটা হবেই। বিকৃত মানুষের এখানে অন্ত নাই।
এদেশে প্রতিবেশীকে ফাঁসানোর জন্য স্ত্রীকে দিয়ে রেইপ কেস করানো হয়! শত্রুকে দমনের জন্য নিজের সন্তানকে হত্যা করে মামলা করা হয়। সেই দেশে কেবল ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ তুলে মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অধিকার- এটা প্রতিষ্ঠিত হতে দিয়েন না। গোটা সমাজকে এই অন্যায্য ভোগাবে। সামান্য সামান্য বিরোধেও এই হাতিয়ার অপব্যবহার করে মানুষ মানুষকে বাঁচতে দেবে না।
এই সমাজে মানুষের চেয়ে অধিক বর্বরতা কিংবা জঘন্য নৃশংসতা অন্য কোনো প্রাণী ধারণ করে কিনা সন্দেহ। ধর্ষণ প্রমাণিত হলে দণ্ড হিসেবে আইনের মধ্যে থেকে ফাঁসি দিন। প্রকাশ্যে ফায়ারিং স্কোয়াডে নিন। ধর্ষণের আইনকে আরও কঠোর করুণ। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করুন। কিন্তু কেবল মৌখিকভাবে অভিযোগ তুলে, কোন সাক্ষ্য প্রশাণ ছাড়াই মানুষকে হত্যার বৈধতা দিলে কত নিরীহ মানুষের প্রাণ যে বেঘোরে যাবে- সেটার ইয়ত্তা নাই।
মানুষের মধ্যে মিথ্যার যে দাপট, যে পরিমাণ উগ্রতা তাতে কাউকেই সরলভাবে বিশ্বাস করা যায় না, কাউকেই না; আপন কিংবা পর- কেউই না। ধরে নিচ্ছি এই দেশের মাত্র ১০% লোক খারাপ। তবে তারা এতো খারাপ যে তা কল্পনাতীত। সেই পরিবেশে মানুষ হত্যার অধিকার কোনো মানুষের হাতে তুলে দিয়েন না। অন্যায় হবে, গুরুতর অপরাধ। আইন, আদলত দিয়ে হলেও এটা আটকান। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মব নৈরাজ্যের সূচনা করে। ভুক্তভোগী না হলে বাস্তবতা ঠাহর করতে পারবেন না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহকে কঠোরভাবে নিয়মের মাঝে রেখে সমাজ পরিচালনা করুন। সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির আন্দোলন করুন এবং অপরাধের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ুন।
গণপিটুনি, জনতার রুখে দেওয়া- এসব বিচ্ছিন্নভাবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে না। রাষ্ট্রীয় স্থায়ী কাঠামোকে কার্যকরী করা দরকার। মানুষ যখন তার স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তখন তার মধ্যে ন্যায়বোধ কাজ করে না। গণপিটুনি এক ধরনের মব জাস্টিস। আর মব জাস্টিস মগের মুল্লুকের প্রতিরূপ- অন্তত বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশে। অন্যায় দ্বারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় বিচার হয় না। একজন নিরপরাধকে কষ্ট দেওয়া হাজারো ধর্ষককে ছেড়ে দেওয়ার চেয়ে বড় অন্যায়।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com