গাজীপুরে চলন্ত বাসে গৃহবধূকে ধর্ষণ, পাঁচ আসামির স্বীকারোক্তি
প্রকাশিত : ৭ আগস্ট ২০২২
গাজীপুরে তাকওয়া পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসে এক গৃহবধুকে গণধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত পাঁচ আসামি রবিবার (৭ আগস্ট) বিকালে গাজীপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। এছাড়া ধর্ষণের শিকার ওই নারীর ডাক্তারী পরীক্ষা দুপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে।
হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. এএনএম আল মামুন জানান, প্রাথমিকভাবে পরীক্ষায় ভিক্টিমের দেহে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তারপরও ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওই নারীর ডিএনএ পরীক্ষা জন্য আলামত পাঠানো হয়েছে এবং নারীর কপালে একটি আঘাতের চিহ্ন থাকায় তার মাথার এক্সরে করার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে বিকালে শ্রীপুর থানার পুলিশ গ্রেফতারকৃত পাঁচজনকে গাজীপুর আদালতে হাজির করে। গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইখলাস উদ্দিনের আদালতে আসামি সজিব ও শাহীন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
আসামি মো. রকিব মোল্লা ও সুমন হাসান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জেনিফার জেরিনের আদালতে এবং আসামি মো. সুমন খান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুবাইদা নাসরিন বর্নার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
এছাড়া ধর্ষণের শিকার গৃহবধু জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রিফাত আরা সুলতানার আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।
এরপর বিকালে গাজীপুরের পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ তার কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিং করে সাংবাদিকদের জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিরা ধর্ষণের সাথে জড়িত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের কয়েকটি টিম তথ্য প্রযুক্তি এবং বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং ঘটনার ১২ ঘন্টার মধ্যে জড়িত সব আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পেরেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল আজিজ বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ প্রথমে শ্রীপুরের কদমতলী এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করে। পরে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা থেকে অপর দুইজনকে গ্রেফতার করে এবং তাকওয়া পরিবহনের ওই বাসটি জব্দ করা হয়।
উল্লেখ্য, নওগাঁ থেকে শনিবার ভোর ৩টার দিকে গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাসে স্বামীর সঙ্গে নামেন এক নারী। ময়মনসিংহের ভালুকা স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাড়িতে যেতে অপর একটি গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
এরপর ভোর ৩টা ১০ মিনিটে স্কয়ার মাস্টারবাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে তাকওয়া পরিবহনে উঠে ওই বাসে ৬/৭ জন যাত্রীর দেখতে পান ওই দম্পতি। বাসটি ছাড়ার কিছু সময় পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের হোতাপাড়ায় পৌঁছালে বাসের দুজন যাত্রী নেমে যান। পরে রাত ৩টা ৪০ মিনিটে বাসটি মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা ফ্লাইওভার পার হয়ে কিছু দূর সামনে গেলে চলন্ত বাসে থাকা অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন লোক হঠাৎ ওই নারীর স্বামীকে মারধর শুরু করলে তাদের হাত দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করেন ওই নারী।
এসময় অজ্ঞাত লোকজন ওই নারীর মুখ চেপে ধরে রাখে এবং স্বামীকে মারধর করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এমসি বাজার এলাকায় চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিয়ে বাসে নারীকে নিয়ে ঢাকার দিকে চলে যায়। স্বামীকে বাস থেকে ফেলে দেওয়ার পর আঘাত পেয়ে স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকার বোনের বাসায় চলে যান।
শনিবার সকালে অপরিচিত একটি মোবাইল থেকে ফোন করে ওই নারী বিস্তারিত ঘটনা এবং জয়দেবপুর থানায় আছেন বলে স্বামীকে জানান। পরে স্বামী তার স্ত্রীর কাছে যান এবং বিস্তারিত ঘটনা শোনেন।