পদ্মায় পানি বৃদ্ধিতে শরীয়তপুরের জাজিরার কুন্ডেরচর ইউনিয়নে ভাঙন শুরু

প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট ২০২১

পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শরীয়তপুরের জাজিরার কুন্ডেরচর ইউনিয়নে গত পাঁচ দিনে প্রায় ১৫০ মিটার এলাকা নদীতে ধসে পড়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় অন্তত ১০০টি বসতঘর, ফসলি জমিসহ গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন বেশি হয়। এতে ভাঙনকবলিত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার শিল্পী বলেন, আজ বুধবার সকালে পদ্মানদীর পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুন্ডেরচর ইউনিয়নের বাবুর চর, ব্যাপারী কান্দি, খাঁ কান্দি, লুডু মাদবর কান্দি, আপতু ব্যাপারী কান্দি ও মৃধা কান্দি গ্রামের পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় অন্তত ১০০টি বসতঘর, ফসলি জমিসহ গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে এসব ভাঙনকবলিত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আতঙ্কিত পরিবারগুলো তাদের ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।

লুডু মাদবর কান্দি গ্রামের আব্দুল মান্নান রাঢ়ী বলেন, কয়েক দিন ধরে আমাদের এখানে নদী ভাঙন শুরু হইছে। আমাদের আশপাশের সব বাড়ি ঘর ভেঙে গেছে। আমাদের টাও নদীতে নিয়ে গেছে। এত দ্রুত ভাঙছে যে, ঘর সরাইয়া অন্য জায়গায় নেওয়ার সুযোগ পাই না। এমনে ভাঙতে থাকলে আমাদের এলাকায় কোনো বাড়ি ঘরই থাকবো না। আমরা এখন বাজারের পাশে একটা খালি জায়গায় নিয়ে ঘরগুলো রাখছি। শহরবানু বলেন, সারাটা জীবন গেল ভাঙতে ভাঙতেই। এই জীবনে কতবার যে বাড়ি ঘর ভাঙছে তার কোনো হিসাব নাই। মেম্বার চেয়ারম্যানরা আসতো কিছু চাল ডাল দিয়া যাইতো ওই পর্যন্তই শেষ। আর কেউ কোনো খোঁজখবর নিত না। প্রতিবারই বর্ষা আইলে ভাঙে।

ভাঙতে ভাঙতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। আর কোন ত্রাণ বা সাহায্য সহযোগিতা চাই না। এখন চাই শুধু নদী ভাঙন থেকে বাঁচতে।সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আমাদের এইখানে যেন বেড়িবাঁধ কইরা দেয়। তাইলে আমরা পয়- পোলাপান নিয়ে থাকতে পারুম। এনজিও এসডিএস’র জোনাল ম্যানেজার মো. মনির হোসেন বলেন, গত শুক্রবার থেকে কুন্ডেরচর এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দেয়। শুরু থেকেই এসডিএস নদীভাঙা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কোনো বাহন পাচ্ছিল না আমরা তাৎক্ষণিক তাদেরকে দুটি ট্রলারের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এ ছাড়া আমাদের কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, গত পাঁচ দিনে ১৫০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে চলে গেছে। আমরা এর আগে ওই এলাকায় জিওটিউব ফেলে ভাঙন রোধ করেছিলাম। বর্তমানে ভাঙন রোধে আমরা জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলবো। জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ইতিমধ্যে আমি মেম্বার চেয়ারম্যানদের বলেছি তালিকা করে পাঠানোর জন্য। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের তালিকা পেলে আমরা তাদের ত্রাণ সহায়তাসহ অন্যান্য সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করব। এছাড়া আমি নিজেও ভাঙন কবলিত এলাকায় যাব এবং পরিদর্শন করে এসে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

 

আপনার মতামত লিখুন :