আবারও বাড়ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি?

প্রকাশিত : ২৪ আগস্ট ২০২১

বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনা ভাইরাসের বিষাক্ত সংক্রমণ তাণ্ডবের মাঝে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সবশেষ সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলমান থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি। তবে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও এক দফায় এই ছুটি বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহামারির সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি এবং সংশ্লিষ্টদের টিকা দেওয়া কার্যক্রম চলমান থাকায় আপাতত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে চায় না মন্ত্রণালয়। তবে সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে পিছিয়ে পড়া পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ প্রত্যাশিত হারে নেমে না আসা পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে না। তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের টিকা দেওয়া শেষ হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা আসবে। কেননা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড রয়েছে।’

সচিব বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষের পাঠদান উন্মুক্ত করতে সবাইকে টিকা দেওয়ার কাজও শেষ করা প্রয়োজন। এ দুটি সন্তোষজনক পর্যায়ে না এলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া সম্ভব হবে না। সেজন্য চলমান ছুটি আরও বাড়ানো হতে পারে। এ দিকে, মন্ত্রণায়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন- করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে চলমান ছুটি আরও এক মাস বৃদ্ধি করা হতে পারে। এ বিষয়ে চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে ঘোষণা আসতে পারে।

মহামারির ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। সর্বশেষ আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই সাধারণ ছুটি বিদ্যমান। ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে দাবি সবচেয়ে বেশি জোরালো। এমতাবস্থায় গত ১৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যাপারে আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এখন কেবল সহনীয় পরিবেশ-পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে সংক্রমণ প্রত্যাশিত পর্যায়ে না নামলে চলমান ছুটি আরও বাড়ানো হবে।’

এ দিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ পাঁচ শতাংশে নেমে আসার বিষয়টি অনিশ্চিত এবং প্রকৃতির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এ কারণে টিকা দেওয়ার প্রতি বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। গত ৭ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ২২২ জন শিক্ষক-কর্মচারী আছেন। তাদের মধ্যে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৪২৬ জন টিকা নিয়েছেন। বাকি আছেন প্রায় ৮৪ হাজার। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধিত ৩৪ হাজারের বেশি শিক্ষকের মধ্যে ৩০ হাজার টিকা পেয়েছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৬১ শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। যাদের মধ্যে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ৭৯ হাজার ৯১৪ জন। আর উভয় ডোজ পেয়েছেন ৬ হাজার ৭২ জন।

টিকাদান প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৯৫ শতাংশ শিক্ষকই টিকা পেয়েছেন। শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম চলছে। পিছিয়ে পড়া সেমিস্টার ও পরীক্ষা শেষ করতে আগামী মাস (সেপ্টেম্বর) থেকে সীমিত আকারে সশরীরে পাঠদান শুরু করতে নির্দেশনা দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’

আপনার মতামত লিখুন :