নৌকা না ভাসালে ভাত জুটবে না মাঝিদের পরিবারে

প্রকাশিত : ৮ জুলাই ২০২১

সরকারি বিধিনিষেধে ঘর থেকে বের হতে যতই মানা করা হোক না কেন, নৌকা না ভাসালে ভাত জুটবে না মাঝিদের পরিবারে বলেই ঘাটে আসতে বাধ্য হওয়ার কথা জানালেন নৌকার মাঝিরা। যেই ঘাটে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সচরাচর ব্যস্ত থাকতো সেই ঘাটের চিত্রই পাল্টে গেছে এবারের লকডাউনে। নৌকার মাঝিরা ঘাটে বসে থাকে যাত্রীদের অপেক্ষায় ঘন্টার পর ঘন্টা।

বৃহস্পতিবার(৮ জুলাই)সকালে শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দর ঘাট,নবীগঞ্জ ঘাট ও বুড়িগঙ্গা নদীর ফতুল্লা লঞ্চঘাট উভয় জায়গাতেই দেখা মিলেছে এমন অভিন্ন চিত্রের। ঘাটে যাত্রীর অপেক্ষায় বসে আছেন নৌকার মাঝিরা।

কঠোর লকডাউনের কারণে ঘর থেকে মানুষ কম বের হওয়ায় যাত্রী কম। শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দর ঘাট এলাকায় বসে বসে অলস সময় পার করছেন নৌকার মাঝিরা। অথচ সময় যখন স্বাভাবিক ছিল এই ঘাটেই একবার যাত্রী নিয়ে নৌকা ভেড়ানোর পর চা খাওয়ার সময়ও হত না মাঝিদের, আড্ডা তো দূরের কথা।

বন্দর ঘাটের মাঝি আক্কাস আলী বলেন, “আগে যেখানে দৈনিক ১০ থেকে ১৫টা খেপ (যাত্রী পারাপার) হত, তা এখন দুটি হতেও কষ্ট হচ্ছে। আগে একবার যাত্রী নিয়ে আসলে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই সিরিয়াল পেতাম। এখন চার ঘন্টা বসে থেকেও পাচ্ছি না। আগে প্রতিদিন গড়ে ১১ থেকে ১২’শ টাকা আয় হলেও এখন দুইশ টাকা আয় করাও অনেক কষ্টের হয়ে গেছে।”

তার কথা টেনে নিয়ে আরেক মাঝি হারুন বলেন, “এখন যা আয় হয় তাতে নৌকার তেল কেনা আর চা-নাস্তা করতেই শেষ হয়ে যায়। ঘরে গিয়ে চাল কিনলে ডাল কেনা যায় না, ডাল নিলে সবজি কেনা যায় না।” একই চিত্র দেখা যায় নবীগঞ্জ ঘাটে। যাত্রীদের অপেক্ষায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে আছে মাঝিরা।

নবীগঞ্জ ঘাটের জুলহাস মিয়া বলেন,“লকডাউনের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। আমাদেরতো নৌকা নিয়ে বের না হলে ঘরের চুলাও জ্বলবে না। তাই রোজগার কম হলেও আমাদের ঘর থেকে বের হতে হয়।

অন্যদিকে ফতুল্লা লঞ্চ ঘাটেও দেখা যায় একই চিত্র। লকডাউনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাহির বের হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় আয় রোজগার কমে গেছে নৌকার মাঝিদের। গার্মেন্টস সময় সকাল ৮টায় ও রাতে কিছুটা যাত্রী পেলেও দিনের বাকি সময় গুলো বসেই পার করতে হচ্ছে নৌকার মাঝিদের।

ইসলাম মিয়া জানায়,আগে প্রতিদিন ১০০-২০০ যাত্রী পার করতাম দিনে। এখন ২০ জনও যাত্রী পাই না।সরকারের কঠোর লকডাউন ঠিকিই পালন হচ্ছে কিন্তু আমাদের পেট কি তা বুঝবে।মাঝ খানে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আয় রোজগার বাড়লেও নতুন এই লকডাউনে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। এই অবস্থা কতদিন চলবে সেটিই দুশ্চিন্তা বলে জানায় তিনি।

করোনাকালীন পরিস্থিতিতে আয় রোজগার কমে গেলেও সরকারিভাবে সহায়তা না পাওয়ার আক্ষেপ প্রকাশ করে মাঝিরা। তারা জানায় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে সহায়তা পেলেও সরকারি কোনো সহায়তা পাননি ফতুল্লা,নবীগঞ্জ ও বন্দর ঘাটের মাঝিরা।

আপনার মতামত লিখুন :