ভালোবাসার অতুষ্টি রয়েই গেল, সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন কবরে

প্রকাশিত : ৭ জুন ২০২১

বরাবরের মতোই বাড়ি ফিরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান তুষ্টি। সব সময়ই তার খোঁজখবর নিতে বাড়িতে আসতেন লোকজন। তবে এবার পুরোপুরি ভিন্ন। তুষ্টি বাড়ি ফিরেছেন ঠিকই, কিন্তু লাশ হয়ে। তাই তাকে শেষবারের মতো এক নজর দেখতে ভিড় জমান শত শত নারী-পুরুষ। সোমবার সকাল ৯টার দিকে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার নীলকণ্ঠপুর গ্রামের ঈদগাহে তুষ্টির জানাজা হয়। এরপর দাদা আফর উদ্দিনের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

এ সময় তুষ্টির বাবা-মাসহ সহপাঠী-স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে নীলকণ্ঠপুর গ্রামের বাতাস। মেধাবী এ শিক্ষার্থীকে যে এভাবে দাফন করতে হবে তা অনেকে কল্পনাও করতে পারেননি। দাফনের সময় বাড়ির আঙিনায় কবরের পাশে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তুষ্টির বাবা আলতাফ উদ্দিন, মা হেনা আক্তার, চাচা মোফাজ্জল হোসেন ও বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের রাজু।

বিলাপ করে তুষ্টির মা বলছিলেন, ‘তুষ্টি, মা তুই কই গেলিরে। তোরে দেখার জন্য কত লোকজন আইছেরে মা। আমার সব স্বপ্ন শেষ কইরা তুই কই গেলিরে’। তুষ্টির চাচা মোফাজ্জল হোসেন বলছিলেন, ‘আর আমার ঢাকা যাওনের কোবো দরকার নাই। যার লাইগ্গে ঢাকা যাইতাম সেই তুষ্টি মা-ই নাই। ঢাকা গিয়া আর কি করবাম’। তুষ্টির আরেক চাচা প্রভাষক ইমাম হোসেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই তুষ্টির পড়াশোনার দেখাশোনা করেছেন। তুষ্টিকে দাফনের সময় তিনি শোকে নির্বাক হয়ে চারপাশে পায়চারি করছিলেন। আর নির্বাক হয়ে অপলক দৃষ্টিতে মেয়ের দাফন দেখছিলেন তুষ্টির বাবা বৃদ্ধ আলতাফ উদ্দিন।

দাফনের চিত্র দেখে তুষ্টির বন্ধু রাজুও অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করেন অন্য বন্ধুরা। রাজু বলেন, তুষ্টি ছিল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। সে আমার সঙ্গে সবকিছুই শেয়ার করতো। কিন্তু হঠাৎ এভাবে সে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে- তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। প্রতিবেশী এক নারী বলেন, তুষ্টি ছোটবেলা থেকে মেধাবী ছিলেন। তাই সবাই তাকে ভালোবাসতেন। অথচ ভালোবাসার অতুষ্টি রেখে সবাইকে কাঁদিয়ে তিনি কবরে চলে গেলেন।

রোববার সকালে রাজধানীর আজিমপুর সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের একটি ভবনের টয়লেট থেকে তুষ্টির মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। তুষ্টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। করোনার কারণে হল বন্ধ থাকায় তিনি আজিমপুর সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারে সাবলেটে থাকতেন।

আপনার মতামত লিখুন :