জলবায়ু আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্রের আসল নেতৃত্ব চায় বাংলাদেশের তরুণরা

প্রকাশিত : ১৩ এপ্রিল ২০২১

মার্কিন প্রসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘লিডার্স সামিট অন ক্লাইমেট’ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনকে সামনে রেখে একটি নয়া সবুজ-শক্তির অর্থনীতিতে বিশ্বব্যাপী উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্রের সত্যিকারের নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশের একদল তরুণ জলবায়ুযোদ্ধা। জলবায়ু সংকটজনিত ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবিলার জন্য তাঁরা এক খোলা চিঠির মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসনের কাছে বিশেষ অর্থ তহবিল প্রদানেরও অনুরোধ করেছেন।

মার্কিন রাষ্ট্রপতির জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরিকে সম্বোধন করে চিঠির সোজা সাপটা বার্তা ছিল, বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে জীবাশ্ম জ্বালানীতে নির্মিত আপনাদের সম্পদ থেকে ক্ষতিপূরণ ও আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তি প্রসারে সহায়তা করতে ব্যবহার করুন।

“ জলবায়ু সংকটের কারণে আমাদের দেশ, বিশ্বজুড়ে কোটি তরুণ-যুবার ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমরা ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে আর ফাঁকা প্রতিশ্রুতি চাই না। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসল জলবায়ু নেতৃত্ব চাই’, চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যতের সুরক্ষার প্রতীক হিসাবে কপ২১ সম্মেলনে শিশু নাতনীকে কোলে নিয়ে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষর করার মুর্হুতটিও জন কেরিকে চিঠিতে স্মরণ করিয়ে দেয় বাংলাদেশি তরুণ জলবায়ুযোদ্ধারা ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘লিডার্স সামিট অন ক্লাইমেট’ শীর্ষ সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রপতির জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরির ঢাকা সফরকালে প্রেরণকৃত তরুণ জলবায়ুযোদ্ধাদের খোলা চিঠি আন্তজার্তিক গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে তা নিয়ে সাড়া পরে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। পরিবেশবাদী যুব নেটওর্য়াক ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিটি গত বৃহস্পতিবার রাতে ই-মেইলের মাধ্যমে বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোাবাল চেঞ্জ অফিসের সমুদ্র ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ ও বৈজ্ঞানিক ব্যুরোতে পাঠানো হয়।

হোয়াইট হাউসে বসার ঠিক এক মাস পর আন্তর্জাতিক জলবায়ু চুক্তি বা প্যারিস চুক্তিতে প্রত্যাবর্তন করে বাইডেন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তিতে ফিরে আসার পর সাবেক মাকির্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত নিযুক্ত হন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন প্যারিস চুক্তি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছিল। জলবায়ু পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতি বছরে একশত বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠন করার পাশাপাশি ২০৩৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎ খাতকে দূষণমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন।

বাইডেন ইতোমধ্যে জলবায়ু তহবিলে প্রদানের জন্য বাজেটে দুই বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছেন। বিশ্ব ধরিত্রী দিবসকে সামনে রেখে তিনি বিশেষ ভালো কোনো ঘোষণা দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন জলবায়ু কূটনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২২-২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘লিডার্স সামিট অন ক্লাইমেট’ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০টি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানরা ভার্চুয়ালি যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।
প্যারিস চুক্তিতে পুনরায় ফিরে আসা এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য জন্য মার্কিন রাষ্ট্রপতি বাইডেনকে স্বাগত জানিয়ে ওই চিঠিতে বলা হয় জরুরীভিত্তিতে পরিবেশবিধ্বংসী জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে।

তরুণ জলবায়ু কর্মীদের চিঠিটিকে ‘অনুপ্রেরণামূলক’ বলে অভিহিত করেছে মার্কিন স্বরাষ্ট্র বিভাগের সমুদ্র ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ ও বৈজ্ঞানিক বিষয়ক ব্যুরো।

তরুণদের মহৎ প্রচেষ্টাকে শুভকামনা জানিয়ে মার্কিন নীতি এবং জনসাধারণের প্রচার কার্যালয়ের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অফিসার জেমস ডিউই অনুরোধগুলো জন কেরি এবং তার দলের কাছে পৌঁছে দেবেন বলে এক ইমেইল বার্তায় জানিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে,‘ যে ধনী দেশগুলো কয়েক দশক ধরে পরিকল্পিত অবহেলা ও নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে দিয়ে জলবায়ু সংকটকে তীব্র করেছে। তবুও জলবায়ু সংকটের প্রভাব ভোগকারী উন্নয়নশীল ও ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর কোটি কোটি মানুষকে সহায়তা করার জন্য খুব সামান্যই অবদান রেখেছে শিল্পোন্নতরা। ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু সংকটের জন্য দায়ী এবং বর্তমানেও সর্ববৃহৎ কার্বণ উদগীরণকারী দেশ।

জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশের বিপুল পরিমানে ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে উল্লেখ করে তরুণরা বলেন, ‘ জরুরীভাবে জলবায়ু কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্যারিস চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ‘আমরা এমন এক প্রজন্ম যাদের পূর্বের চেয়ে আরও মারাত্মক জলবায়ু সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে এবং ইতিমধ্যে এর বিরুপ প্রভাব ভোগ করছি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এমন পর্যায়ের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে যা আমরা এর আগে কখনও দেখিনি। বিশ্বজুড়ে তরুণ হিসেবে, আমরা জলবায়ু সংকটে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার অবসান দাবি করি, যা আমাদের ভবিষ্যতকে চরমভাবে বিপন্ন করে তুলছে।’’

চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘‘ আমাদের দেশের ক্ষয়-ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বাইডেন প্রশাসন যদি অর্থ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে রাজি হয় তাহলে এই ক্ষতির কিছুটা প্রশমন করার সম্ভাবনা রয়েছে।’’

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়কালে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ২১ নামের একটি সম্মেলনে জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্বনেতারা। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ২০০টি দেশ এতে স্বাক্ষর করে।

কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার হুমকি দেন। তবে তাঁর এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি ওবামা প্রশাসন জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিলে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব নেয়ার পর বাজেটে বরাদ্দ দেয়া বাকি দুই বিলিয়ন ডলার আর তহবিলে দেয়া হয়নি। বিদায়ি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই অর্থ বরাদ্দ বাতিল করে দিয়েছিলেন।

তরুণ জলবায়ুযোদ্ধাদের চিঠিতে বলা হয়েছে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত সমস্ত জীবাশ্ম জ্বালানী অবকাঠামো বিশ্বের দুর্বল জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশগুলোকে বিরুপভাবে প্রভাবিত করে। জীবাশ্ম জ্বালানী পুড়িয়ে গড়ে তোলা সম্পদ নিয়ে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু বড়ো কার্বন নিঃসরণকারী দেশ। তারা যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে তাদের দেশে এটা কমতে পারে, পাশাপাশি অন্যান্য দেশকেও কমানোর জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশে তারা উদ্বুদ্ধ করতে পারে।’’

চিঠিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি অবকাঠামো তৈরির জন্য বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোর সমর্থন কামনা করে কয়লা ও গ্যাসকে বাতিল করে বাংলাদেশ সরকারকে গ্রিন নিউ ডিল গ্রহণের আহবান জানায় তরুণরা।

আপনার মতামত লিখুন :