কুয়াকাটা দখল দৌরাত্বে সিকদার গ্রুপ

প্রকাশিত : ১ মার্চ ২০২১

আনোয়ার হোসেন আনু, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শুধুমাত্র বায়না চুক্তিপত্র দলিল সম্পাদন করার মাধ্যমে কুয়াকাটার রাখাইন পল্লী “কেরানীপাড়ার” গতিপথ বন্ধ করে নির্মাণ করা হচ্ছে সিকদার গ্রæপের অভিজাত আবাসিক হোটেল। ফলে সংকুচিত হচ্ছে আড়াইশ’ বছরের বেশী সময় ধরে বসবাসরত আদিবাসী রাখাইনদের আদি জন্মস্থান কেরানীপাড়া। বেদখলে গেছে দেবালয়ের সম্পত্তি। ওই প্রতিষ্ঠান দেবালয়ের সম্পত্তিতে নির্মাণ করেছে ওশান ভিউ নামের একটি বহুতল আবাসিক হোটেল। আদিবাসী রাখাইনদের বিরোধীয় জমিতে ভবন নির্মাণে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছেন না সিকদার গ্রুপ।

স্থানীয়দের মতে সিকদার গ্রæপ কৌশলে গিলে খাচ্ছে কেরানীপাড়া। যার ফলে আদিবাসীদের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও কৃষ্টি কালচার হুমকীর মূখে। এ সম্পতি নিয়ে রাখাইনদের দুই পক্ষের আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। যার মামলা নং-৫৮৯/২০২০। উক্ত বিরোধীয় সম্পতির আকার আকৃতি পরিবর্তণসহ ভবন নির্মানের উপর পটুয়াখালী যুগ্ম জেলা জজ,১ম আদালত গত ৪ জানুয়ারী ২০২১ ইং নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

এছাড়া সম্প্রতি সৈকত লাগোয়া সাড়ে ৩ একর সরকারী জমিতে সিকাদার রিসোর্ট এ্যান্ড ভিলাসের নামে দখল করে দেয়া হয়েছে কংক্রিটের উচু দেয়াল। সমুদ্রের বালিয়াড়িতে গড়ে তোলা হয়েছে কফি হাউজের নামে পাকা স্থাপণা। সরকারী জমি দখল করে বহুতল ভবন ও দেয়াল নির্মাণ করলেও রহস্যজনক কারনে ভূমি প্রশাসনসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিরব রয়েছে।
রাখাইনদের জমি ক্রয় বিক্রয় করতে কুয়াকাটা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। রাখাইনদের জমি বিক্রি করতে হলে রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েল ফেয়ার ও রাখাইন সমাজ কল্যান সমিতির অনুমতিপত্র প্রয়োজন রয়েছে। প্রভাব ও টাকার বিনিময় এসব পেয়েও যান তারা। আর এসব জমি বেচাকেনার সাথে জরিত রয়েছে রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।
কুয়াকাটা পর্যটনের অলংকার আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়। তাই এদের টিকিয়ে রাখতে সরকার প্রনোদনাসহ নানা সূযোগসুবিধা দিচ্ছে। তারপরও এক শ্রেনীর অসাধূ ভূমি দালাল চক্রের খপ্পরে পরে ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে রাখাইন সম্প্রদায়।

ভুক্তভোগী কেরানী পাড়ার রাখাইন জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন কর্মী ও ভুমি অধিকার বঞ্চিত লুমা মগনী বলেন, জমিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার প্রতিটি মুহুর্ত আমাদের পল্লীর বাসিন্দাদের হৃদয়ে ক্ষরণ হচ্ছে। থানা পুলিশের কাছে সহযোগিতা চাইলে তারা উল্টো সিকদার গ্রæপের হয়ে কাজ করছে। লুমা রাখাইন আক্ষেপ করে বলেন, তাদের সম্প্রদায়ের কতিপয় অসাধু লোকজন জমির ভূয়া মালিকানা দাবী করে সিকদার গ্রæপের সাথে বায়না দলিল করেছে। আর এই বায়না দলিলের বলে দেবালয়ের সম্পত্তি দখল করে ন্যাশনাল ব্যাংক এবং ওশান ভিউ নামে বহুতল আবাসিক হোটেল নির্মান চলমান রয়েছে। এতে বাধা দিলে হুমকী দেয়া হচ্ছে পাড়া থেকে তাড়িয়ে দেয়ার। তিনি আরও বলেন,কেরানীপাড়ার দুই দিক দখলে নিয়ে গেছে সিকদার গ্রæপ। আদিবাসী রাখাইনদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অস্তিত্ব রক্ষায় এ কাজ বন্ধ রাখার দাবী আদিবাসী রাখাইনদের।

গত কয়েক দিন ধরে লুমা মগনীসহ কোরানীপাড়ার আদীবাসী রাখাইনরা শিকদার গ্রæপের নির্মাণাধীণ কাজ বন্ধ করতে জমির মালিকানা দাবীর প্রমাণাদি নিয়ে পুলিশসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হয়েছেন । শিকদার গ্রæপের ভুমি দস্যূতার শক্তিশালী দাপটের সঙ্গে না পেরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ গনমাধ্যম কর্মীদের কাছে এসে লুমাসহ একাধিক রাখাইনরা তাদের সহযোগিতায় পাশে দাড়ানোর আকুতি জানান। কিন্তু সিকদার গ্রæপের দখল বিষয়ে কেউ তাদের পাশে দাড়াতে সাহস পাচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই পল্লীর এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন তুলে বলেন, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির চেয়ে শিকদার গ্রæপ অধিক শক্তিশালী। এজন্য তারা কারও সহযোগিতা পাচ্ছেন না।

কেরানীপাড়ার দুই দিক বেদখলে যাওয়ায় আদিবাসীদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিও কৃষ্টি কালচার হুমকীর মূখে পড়বে এমনটা জানিয়েছেন রাখাইন উন্নয়ন কর্মী প্রকৌশলী ম্যাথুজ। ওই ওয়ােের্ডর সাবেক কাউন্সিলর তোফায়েল আহম্মেদ তপু জানিয়েছেন, কৌশলে কেরানীপাড়া গিলে খাচ্ছে শিকদার গ্রুপ। কলাপাড়া উপজেলা রাখাইন সমাজ কল্যান সমিতির সভাপতি মং চোতেন তালুকদার বলেন,কেরানী পাড়ার এমং তালুকদার,সাবেক সহকারী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মং ওয়েন গংরা ভূয়া মালিকানা সৃস্টি করে সিকদার গ্রæপের সাথে বায়না চুক্তি করেছে। সিকদার গ্রæপ ৩২৪৩ ও ৩৩৪৭ নং বায়না দলিল বলে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। তিনি বলেন,আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এসব করছে সিকদার গ্রুপ।

কেরানীপাড়ার বাসিন্দা এবং পটুয়াখালী জেলার রাখাইন বুড্ডিষ্ট ওয়েল ফেয়ারের সভাপতি এমং তালুকদারকে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন দিলে তিনি জানান একটা জরুরী মিটিং আছি। রাতে কথা হবে এরপর আর ফোন ধরে নাই বলে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কোরানীপাড়ার মাতুব্বর বাবু উচাচিং রাখাইন জানিয়েছেন, এস এ ৬৪৪ নং খতিয়ানে ৫৩৫৯ দাগে দেবালয়ের নামে ৫৭ শতক জমি রয়েছে। সেই জমিতে শুধুমাত্র বায়না চুক্তি বলে ওশান ভিউ ও ন্যাশনাল ব্যাংকের নামে বহুতল ভবন করে দেবালয়ের জমি দখলে নিয়েছে। তিনি বলেন দেবালয়ের জমি বিক্রি করার এখতিয়ার কারোও নেই।

এবিষয়ে শিকাদার গ্রæপের কুয়াকাটা প্রকল্পের জমিজমা বিষয়ক মুখপত্র মো. শাহজাহান আকন বলেন, লুমা মগনী ও এমং তালুকদার গংদের কাজ থেকে রেজিস্ট্রি দলিল ও আদালতের ঘোষণা পত্রের মাধ্যমে জমির মালিকানা বুজিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই জমিতে তারা উন্নয়ন কাজ করছেন।

মহিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কেরানীপাড়ার লুমা রাখাইনের সাথে একই পাড়ার রাখাইনদের সাথে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলমান রয়েছে। আদালতের বিষয় পুলিশ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তবুও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ সজাগ দৃস্টি রেখেছে।

কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) জগতবন্ধু মন্ডল বলেন, এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ পাই নি।তবে অভিযোগসহ প্রমাণাাদি পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুন :