চলতি বছরের মধ্যেই পিলখানা হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত রায় দাবি বিএনপির

প্রকাশিত : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দোষীদের চূড়ান্ত বিচারের রায় এই বছরের মধ্যেই দাবি করছে বিএনপি। এ হত্যাকাণ্ডের বারোতম বার্ষিকীতে বৃহস্পতিবার সকালে বনানী সেনা কবরস্থানে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্মৃতিসৌ্ধে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এই কথা জানান। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘ ১২টি বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত ফয়সালা করা সম্ভব হয়নি। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা আমাদের হতাশ করেছে, দেশবাসী মর্মাহত হয়েছে।”

‘‘এই বছরের মধ্যে লিভ টু আপিল এবং আপিলের কার্যক্রম শুরু হবে বলে এমন কোনো আশা, এমন কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পারছি না। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিচার বিভাগের প্রতি আমরা আবেদন জানাচ্ছি। আমরা আশা করি, এই বছরের মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত ফয়সালা করা হবে, চূড়ান্ত রায় দেওয়া হবে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।”

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিডিআরে বিদ্রোহ দেখা দেয়। সে বিদ্রোহে ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বাহিনী সদর দপ্তরে বিদ্রোহী জওয়ানদের হাতে মারা যান ৫৭ সেনা কর্মকর্তা। রক্তাক্ত সেই বিদ্রোহে বেসামরিক ব্যক্তিসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান। ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে জওয়ানদের বিদ্রোহ। রক্তাক্ত সেই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নাম বদলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হয়।

৫৭টি বিদ্রোহের মামলা বিচার হয় বাহিনীর নিজস্ব আদালতে। সেখানে ৬ হাজার জওয়ানের কারাদণ্ড হয়। বিদ্রোহের বিচারের পর পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলার বিচার শুরু হয় সাধারণ আদালতে। ঢাকা জজ আদালত ২০১৩ সালে দেওয়া রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। এ ছাড়া ২৫৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়।

২০১৭ সালে দেওয়া রায়ে ১৩৯ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে হাইকোর্ট। ১৮৫ জনকে হাইকোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়, তিন থেকে ১০ বছরের সাজা দেয় ২২৮ জনকে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ততকালীন কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লে. জেনারেল জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে সেনা কর্তৃপক্ষের কোর্ট অব ইনকোয়ারির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানান অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হাফিজ।

তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। এর সুষ্ঠু বিচার এবং তদন্ত পূর্ব সুষ্ঠু বিচার কামনা করি। এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে দুর্বল করার জন্য। এর বেনেফিশিয়ারি কারা সেটিও দেশবাসী পরিষ্কার জানতে চায়।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে নিম্ন বিচারিক আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতাকে খালাস দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে, সবাইকে আনা হয় নাই, কয়েকজনকে আনা হয়েছে।”

‘‘এই হত্যাকাণ্ডে যারা পরিকল্পনাকারী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী তারা এখন পর্যন্ত পর্দা অন্তরালে রয়েছে। দেশবাসীর সামনে তাদের পরিচিতি স্পষ্ট নয়। আমরা সরকারকে অনুরোধ জানাবো হত্যাকাণ্ডের যারা পরিকল্পনাকারী দেশি-বিদেশি শক্তিসমূহ, ষড়যন্ত্রকারী তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হোক।”

হাফিজ বলেন, ‘‘এই হত্যাকাণ্ডে নিহত ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সঙ্গে একজন সুবেদার মেজর যিনি অফিসারদের রক্ষা করার জন্য … যাকে হত্যা করা হয়েছিল তার পরিবার এখন পর্যন্ত কোনো সুযোগ-সুবিধা পায় নাই। আমি এ ব্যাপারে সরকারের আশু দৃষ্টি কামনা করছি। একই সঙ্গে যারা নিহত হয়েছিলেন সেই শহীদ পরিবারসমূহ কষ্টে মনোবেদনার মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছেন। তাদের এবং শহীদদের আত্মার শান্তির বিধান করার জন্য দ্রুত এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার আমরা আশা করি।”

‘‘এ দেশে আমরা সুশাসন কামনা করি। এ দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন অতি অল্প সময়ের মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে- এই কামনা করি।” দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও জানান তিনি। সকাল পৌনে ১১টায় হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে দলের নেতৃবৃন্দ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। তারা নিহত সেনা কর্মকর্তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।

এ সময়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর শাহজাহান ওমর, অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মো. ইসহাক, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মনিষ দেওয়ান, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল কামরুজ্জামান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. হানিফ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সারোয়ার হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সাঈদুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. হাসান, বিএনপি নেতা শামীমুর রহমান শামীমুর, শাহ খালেদ হাসান চৌধুরী, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মতামত লিখুন :