অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রাত দিন ছুটেন তারা

প্রকাশিত : ২৯ জানুয়ারি ২০২১
ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকেই অক্সিজেনের অভাবে করোনার রোগীর মৃত্যু বাড়তে থাকে। অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে অক্সিজেনের দাম বাড়িয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। সেইসঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার চলে যায় জনগণের নাগালের বাইরে। দ্বিগুণের চাইতেও বেশি দামে দিয়েও পাওয়া যাচ্ছিল না অক্সিজেন সিলিন্ডার। এমন দুর্দিনে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায় ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক স্বাধীনতা, সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে সবুর খান কলিন্স ও রফিকুল ইসলাম সবুজ বিনামূল্যে ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’ কার্যক্রম শুরু করেন। রোগীদের বাড়িতে গিয়ে সিলিন্ডার পৌঁছে দেন তারা। সেবা দিতে গিয়ে সাদসহ তার বৃদ্ধ বাবা-মা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারপরেও থেমে থাকেননি তারা। মানবিক কার্যক্রমে নিজেদের যুক্ত রেখেছেন এখনো পর্যন্ত।

মাত্র ৬টি সিলিন্ডার দিয়ে করোনার তীব্র প্রকোপের মধ্যে ২৫ জুন থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে চট্টগ্রামে, ময়মনসিংহ কুরিয়ার যোগে সারাদেশে এ সেবা চালু করা হয়। এছাড়াও কক্সবাজার, সিরাজগঞ্জ ও খুলনায় অক্সিজেন সেবা চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর এ কাজে সারাদেশে সহায়তা করছেন ১২০ জন। শুরুতে শুধু করোনা রোগীদের সেবা চালু থাকলেও বর্তমানে যে কোনো রোগী চিকিৎসকের পরামর্শপত্র দেখিয়ে এই সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। ২০০ দিনে এই স্বেচ্ছসেবক টিম ৩ হাজার ৩ শত ৪২ জনকে সেবা দিয়েছেন।

‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’র উদ্যোক্তা সাদ বিন কাদের চৌধুরী বলেন, করোনায় আক্রান্ত সব রোগীর ক্ষেত্রে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয় না। করোনা আক্রান্ত রোগীর এক পর্যায়ে শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাপক সমস্যা দেখা দিলে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। শুধু করোনায় আক্রান্ত রোগী নয়, অন্যান্য রোগীর জন্যও অক্সিজেনের প্রয়োজন হতে পারে। এমতাবস্থায় অক্সিজেন মজুত করা ও এর মূল্য বেশী হওয়ায় অনেকে তাত্ক্ষণিকভাবে অক্সিজেন গ্রহণ নিশ্চিত করতে পারছেন না। তখন মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজন কি হতে পারে সেটিকে প্রাধান্য দিয়ে এই অবস্থা হতে উত্তরণের জন্য আমরা বিনামূল্যে ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’র উদ্যোগ গ্রহণ করি।

তিনি বলেন, যতদিন এই অন্ধকার কেটে না যাবে ততদিন আপনাদের পাশে থাকার দৃপ্ত শপথ নিয়েই আমরা এই কার্যক্রম শুরু করেছি এবং সেটি অব্যাহত থাকবে। করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন সাদও , সে সময় সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার জন্য ভয়ের একটি সময় গিয়েছিল তখন। বিশেষ করে আমার আম্মু-আব্বুর জন্য। তাদের বয়স হয়েছে। কোনো ধরনের ঘটনাই তখন আমার জন্য সুখকর ছিল না। হয়তো মানুষের দোয়ায় সে পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি।

সেবা সম্পর্কে রফিকুল ইসলাম সবুজ বলেন, আমরা যখন অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে কোভিড-১৯-এ আক্রান্তদের পৌঁছে দিই তখন তাদের মুখের হাসি আমাদেরকে অভিভূত করে। তবে সবসময়ই যে ভালো আচরণ করে এমন না; কিছু মানুষ এমন অপ্রত্যাশিত আচরণ করে যেন মনে হয় আমরা তাদের কর্মচারী। সেবা থেকে উপকৃত হয়েছেন এমন একজন রিয়াদুল ইসলাম। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন।

তিনি জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন যে কোনো সময় কমে যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় হাসপাতালেও তাত্ক্ষণিকভাবে অক্সিজেন সেবা মেলে না। কিন্তু ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’র মাধ্যমে দিন বা রাতের যে কোনো সময় এই সেবাটির নিশ্চয়তা রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী পর্যায়ে এ ধরনের সেবা সত্যিই আশাব্যাঞ্জক। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতিতে তারা অনেকের কাছে অক্সিজেন সেবা পৌঁছে দিয়েছে, যাদের এটি খুবই উপকারে এসেছে।

 

আপনার মতামত লিখুন :