কুয়াকাটায় বেদখল সরকারী পিকনিক স্পটের কয়েক কোটি টাকার সম্পদ

প্রকাশিত : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আনোয়ার হোসেন আনু, কুয়াকাটা: জমি জেলা প্রশাসনের, বিক্রি করছে পাবলিক। গড়ে তুলেছেন আবাসিক হোটেল-বাড়িঘর। ভোগদখলীয় মালিকরা অনেকেই এসব সরকারী জমি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। হাত বদল করেছেন অনেকবার। এমন চিত্র দেখা গেছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সরকারী পিকনিক স্পটে। পিকনিক স্পটের উত্তর পাশ জুড়ে বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন বিশাল এলাকাজুড়ে সরকারী জমিতে গড়ে ওঠেছে গ্রাম। জেলা প্রশাসনের পক্ষে এসব সরকারী জমির ভোগদখলদার মালিকদের দখল ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলা হলেও কাজের কাজ হয়নি কোন। উল্টো আরো একরে একরে জমি প্রতিনিয়ত বেহাত হচ্ছে সরকারের। দিন যত যাচ্ছে এসব জমি উদ্ধার প্রক্রিয়া আরো কঠিন হয়ে উঠছে।

সমুদ্র সৈকতের জিরো পয়েন্টের পূর্বপাশে অবস্থিত পিকনিক স্পটকে ঘিরে সৌন্দর্য বর্ধন, পার্কিং জোন ও মিনি পার্ক নির্মানে জেলা প্রশাসন যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তা এখন দখল দূষণের কারনে বাস্তবায়নে দীর্ঘ সূত্রিতা দেখা দিয়েছে। দখলদার মালিক পিকনিক স্পটের সাবেক কেয়ার টেকার (অবৈতনিক) আঃ কুদ্দুসকে দখল ছেড়ে দেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মুনিবুর রহমান ইতোমধ্যে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে ভোগ দখলদারদের কোন কাগজপত্র না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছে তারা। দখলদারদের দাবী, এসব জমি নিয়ে সরকারের সাথে একটি পক্ষের মামলা রয়েছে। মামলা চলমান অবস্থায় ভোগদখল সূত্রে এই জমির মালিক তারা। সরকারের বেদখলে থাকা এসব জমির দখল বুজে পেতে দখলদারদের সাথে স্থানীয় ভূমি প্রশাসনের এ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিএস জরিপ অনুযায়ী এসব জমির মালিক জেলা প্রশাসন। নানা অজুহাতে সরকারের জমি ভোগ করছে এক শ্রেণির সুবিধাভোগী। এদের মধ্যে অনেকেরই অন্যত্র জমিজমা রয়েছে বলে স্থানীয় ভূমি প্রশাসনের দাবী। তারপরও এসব হাতে নিতে পারছে না ভূমি প্রশাসন।

জানা যায়, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের জিরো পয়েন্ট সৈকত লাগোয়া সরকারী পিকনিক স্পটের পূর্বপাশে জমি দখল করে পিকনিক স্পটের সাবেক কেয়ার টেকার (অবৈতনিক) আঃ কুদ্দুস গড়ে তুলেছেন আবাসিক হোটেল ভাই ভাই। স্থানীয় জামাল হোসেনের কাছে একটি প্লট চল্লিশ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। কুদ্দুসের দাবী, এসব জমির মালিক কাগজপত্রে তিনি নন। ভোগদখল সূত্রে। কুদ্দুস বলেন, জমি নিয়ে সরকারের সাথে একটি পক্ষের মামলা চলছে। মামলা ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত তারাই মালিক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে ডেকে নিয়ে জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য অন্যায় ভাবে চাপ সৃষ্টি করছে বলেও দাবি তার। একই ভাবে স্থানীয় তৈয়ব আলী বাড়ির পাশে ব্যাবিলন নামে একটি আবাসিক হোটেল নির্মাণ করে পিকনিক পার্টিদের কাছে রুম ভাড়া দিচ্ছে। আবুল হোসেন কাজী বসবাসের পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন সমুদ্র নীড় নামের একটি আবাসিক হোটেল। এভাবে অনেকেই বাড়িঘর ও আবাসিক হোটেল গড়ে তুলেছে সরকারী জমিতে।

সরকারী জমি দখল করে কিছুদিন পর মোটা অংকের টাকা পেয়ে সুযোগ বুঝে বিক্রি করে দিয়েছে অনেকেই- এমন অভিযোগ মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার আঃ আজিজের। তিনি জানান, আঃ কুদ্দুস, ইউনুস, আল আমিন, নিজাম সহ একাধিক ব্যাক্তি সরকারী জমি নিজেরা অবৈধ ভাবে ভোগদখলের পাশাপাশি প্লট আকারে ৪০-৬০ হাজার টাকায় জামাল হোসেন, জসিম, সেলিম, বাদল, সান্টু ও ফারুকের কাছে বিক্রি করেছে। গড়ে তুলেছেন আবাসিক হোটেল। এসব আবাসিক হোটেলগুলো সরকারী অনুমোদন ছাড়া বেআইনী ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। নিন্মমানের এসব হোটেল নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। তহসিলদার বলেন, এসব জমি সরকারী ১নং খাস খতিয়ানের আওতাভূক্ত। যার দাগ নং ৩৪২২,৩৪২৫,৩৪২৬ ও ৩৪২৮। এ জমি কখনও ব্যক্তি মালিকানা ছিল না। অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে সরকারী জমি উদ্ধারে যখনই তারা উদ্যোগ নিয়েছেন, তখনই দখলদাররা রাজনৈতিক আশ্রয় নিচ্ছে। যার ফলে উদ্ধার প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্থ হয়।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মুনিবুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, সরকারী পিকনিক স্পটের জমির অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে দখলদার আঃ কুদ্দুসকে তার হোটেল ও ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তিনি জানান, তালিকা অনুযায়ী অবৈধ দখলদার যারা রয়েছে, তাদের পর্যায়ে ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :