ঢাকা থেকে নোয়াখালীর পথে ধর্ষণবিরোধী লংমার্চ

প্রকাশিত : ১৬ অক্টোবর ২০২০

সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও নারীর প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ঘটনা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রতিবাদে ঢাকা থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা পর্যন্ত লংমার্চ কর্মসূচি শুরু করেছেন কয়েকটি বামপন্থী ও নারী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাহবাগ থেকে লংমার্চটি শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে ৯টি দাবি নিয়ে এ লংমার্চ শুরু করে। তারা ধর্ষণবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে নোয়াখালীর দিকে অগ্রসর হয়।

লংমার্চে অংশগ্রহণকারী ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, ‘আমাদের এই লংমার্চ ধর্ষণ ও অবিচারের বিরুদ্ধে হওয়ায় আশা করি পুলিশ তাতে বাধা দেবে না, তবে কিছু ছাত্র সংগঠন বাধা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সহ-সভাপতি সাদিকুল ইসলাম সাদিক বলেন, ‘প্রায় ৪৫০ জন নেতা-কর্মী এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। প্রথমে গুলিস্তান থেকে সাতটি বাসে যাত্রা শুরু হবে, পরে নারায়ণগঞ্জ থেকে আরও পাঁচটি বাস যুক্ত হবে৷ এদিকে, লংমার্চকারীরা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে একটি সমাবেশ করেছে এবং শনিবার নোয়াখালীর মাইজদীতে আরেকটি সমাবেশ করবে।

৯ দফা হলো: সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ-নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ, নিপীড়ন বন্ধ ও বিচারে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে, পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর সামরিক-বেসামরিক সব প্রকার যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে, হাইকোর্টের নির্দেশনানুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি, বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতনবিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। সিডো সনদে বাংলাদেশকে স্বাক্ষর ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সব আইন ও প্রথা বিলোপ করতে হবে, ধর্মীয়সহ সব ধরনের সভা-সমাবেশে নারী বিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।

সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। পর্নগ্রাফি নিয়ন্ত্রেণে বিটিসিএল এর কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে। সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক চর্চায় সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে, তদন্তকালীন সময়ে ভিকটিমকে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ভিকটিমের আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে অনিষ্পন্ন সব মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করতে হবে, ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-১৫৫(৪) ধারাকে বিলোপ করতে হবে এবং মামলার ডিএনএ আইনকে সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কার্যকর করতে হবে, পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যে কোনো প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পরিচ্ছেদ, ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ চয়ন পরিহার করতে হবে, গ্রামীণ সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় গৃহবধূর শ্লীলতাহানির ঘটনার পর অক্টোবরের শুরু থেকেই দেশজুড়ে ধর্ষণ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়।

এদিকে, ধর্ষণের ক্রমবর্ধমান এই ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সংশোধিত ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০০’ জারি করেন। দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবির মধ্যে সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন :