জলোচ্ছাস ও ঢেউয়ের তান্ডবে বিপদজনক কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত

প্রকাশিত : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০

উত্তম কুমার হাওলাদার,কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি।।পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সৈকতে যত্রতত্র পড়ে থাকা পরিত্যক্ত ব্লক, কংক্রিট, ইট, সুরকী ও গাছের গুড়ি এখন পর্যটকদের কাছে বিপদজনক। জোয়ারের সময় পর্যটকরা সমুদ্রে গোসলে নামলে প্রতিনিয়ত দূঘর্টনার কবলে পড়েন। সৈকতে ওঠা-নামা সম্মুখভাগ জিরো পয়েন্টসহ প্রায় ১শ’ মিটার বেলাভুমিতে এখন দৃশ্যমান। দেখভালের দায়িত্বে থাকা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি ও পৌরসভার এগুলো অপসারন করার কথা থাকলেও তারা দেখে না দেখার মতো ভান করছে। ঝুঁকিপূর্ণ জোনটিতে কোন প্রকার সর্তকতামূলক বা নির্দেশনামূলক চিহৃ না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আগত পর্যটকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চলতি বর্ষা মৌসুমে প্রচন্ড ঢেউয়ের ঝাপটায় বালু ক্ষয়ে সম্প্রতি বালুর ওপর জেগে ওঠে পরিত্যক্ত ব্লক, কংক্রিট, ইট, সুরকী ও গাছের গুড়ি। ঝড়, জলোচ্ছাস ও ঢেউয়ের তান্ডবে উপড়ে পড়েছে বড় বড় গাছ। গাছ আপসরন হলেও গুড়িগুলো পড়ে রয়েছে যত্রতত্র। এতে পর্যটকদের চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটা সৈকতের প্রবেশদ্বারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এর অর্থায়নে বায়ো-গ্যাস প্ল্যান্ট কাম রেস্ট হাউস ২০০৭ সালের নভেম্বরে সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। পরে এলজিইডি ওই ক্ষতিগ্রস্থ ভবনটি নিলামে বিক্রি করে দেয়। এ ভবনটির বেশ কিছু ভাঙ্গা অংশ সৈকতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এর ফলে সৈকতে পর্যটকরা নির্বিঘেœ হাটাচলা করতে পারছেনা। প্রতিনিয়তই আঘাত পাচ্ছে পর্যটকরা এমন আভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।

ফটোগ্রাফার রুবেল জানান, পর্যটকদের এমন বিড়ম্বনা থেকে নিস্তার দিতে তারা নিজেদের উদ্যোগে ঝুকিপুর্ণ স্থানগুলোতে বাঁশ পুতে লাল কাপড় টানিয়ে দিয়েছিলেন। প্রচন্ড ঢেউয়ের তোড়ে তা এখন আর নেই। পর্যটক ফারজানা বলেন, জোয়ারের সময় সৈকতে গোসল করতে গিয়ে কংক্রিটের ভাঙ্গা অংশে ডান পা কেটে গেছে। পাঁচ দিনের ট্যুরে এসে আহত হয়ে ওইদিনই পরিবারের কাছে ফিরতে হয়েছে। তবে পর্যটকদের কথা বিবেচনায় রেখেই কুয়াকাটা সমুদ্্র সৈকত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।

ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) এর সেক্রেটারি জেনারেন মো.আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, সৈকতের সম্মুখভাগে পড়ে থাকা কংক্রিট খন্ডগুলো প্রমাণ করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন পর্যটক বান্ধব নয়। জোয়ারের সময় সমুদ্রে গোছল করতে নেমে প্রতিদিনই কোন না কোন পর্যটক আহত হচ্ছে। এছাড়া যত্রতত্র পড়ে থাকা পরিত্যক্ত বøক,কংক্রিট,ইট,সুরকী ও গাছের গুড়ি সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। এগুলো অপসারনের দাবী জানিয়েছেন তিনি। কুয়াকাটা পৌর মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা বলেন,অবিলম্বে সৈকতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কংক্রিট খন্ডগুলি সরিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন,গত বছর আমরা কিছু ভাঙ্গা অংশ অপসারন করেছিলাম, চলতি বছর আবারও বালু নিচের চাপা পড়া কংক্রিট ও বøক ক্ষয়ে বেলাভূমিতে জেগে ওঠেছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোন’র চলতি দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক বদরুল কবির বলেন, সৈকতের সম্মুখভাগের ঝুঁকিপূর্ণ ওই স্থানে পর্যটকদের নামতে নিরুৎসাহিত করলেও পর্যটকদের মধ্যে বিরুপ মনোভাব সৃষ্টি হয়। ট্যুরিস্ট পুলিশের ওই কর্মকর্তা পরিত্যক্ত বøক, কংক্রিট, ইট সুরকী অপসারনের তাগিদ দিয়েছেন বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, পর্যটকদের সমস্যা নিরসনে পড়ে থাকা ওইসব কংক্রিট ও ব্লকগুলো পাউবো’র সাথে কথা বলে অচিরেই অপসারন করার ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুন :