রোহিঙ্গারা মানবতার বারটা বাজাচ্ছে

প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০২০

সাইদুর রহমান, নান্দাইল, ময়মনসিংহ:  ২৫ আগস্ট ছিল রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ দিবস। তারা যে সঙ্গবদ্ধ, তারা যে পরগাছা হয়েও বটবৃক্ষকে লাল কার্ড দেখাতে পারে, তার প্রমাণ আমার দেখেছি রোহিঙ্গা সমাবেশে। রোহিঙ্গা নিয়ে আলোচনায় আসি, রাখাইন রাজ্যে শত শত বছর ধরে বসবাসকারী একটি ক্ষুুদ্র জাতিগোষ্ঠী । এদেরকে রাখাইন রাজ্যের আদি ভূমিপুত্র বলা হয়। এটা ঐতিহাসিক ভাবে প্রমাণিত রোহিঙ্গা হলো আরাকান রাজ্যের সবচেয়ে আদিবাসিন্দা। এক সময় ব্রিটিশদের দখলে আসে বার্মা। তখন ব্রিটিশ সরকার বার্মার ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর একটি তালিকা তৈরী করে। তারা ১৩৯ টি জাতিগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করেন । তখন ব্রিটিশরা ইচ্ছকৃত হোক আর অনিচ্ছাকৃত হোক ঐ তালিকা থেকে রোহিঙ্গাদের নাম বাদ দিয়ে সবচেয়ে বেশী সর্বনাশটা রোহিঙ্গাদের করে, ব্রিটিশীয় কায়দায় । তখন থেকেই রোহিঙ্গা অন্য গ্রহের জাতিতে পরিণত হয় ।

 

রোহিঙ্গারা যেমন বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত উদ্বাস্ত মুসলিম জাতি ; তেমনি তারা বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর জাতিও। তারা আশ্রয়দান রাষ্ট্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মানবতার গলায় স্বচক্ষে ছুড়ি চালাচ্ছে! রোহিঙ্গারা মানবতার কাঁদে ভর করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তারা সাথে করে নিয়ে আসে অমানবতার বিষাক্ত ছুড়ি। তাদের প্রতি নির্মম নির্যাতনে আমরা যখন সমবেদনার হাতকে প্রসারিত করি ; তখন তারা মনের নীল নকশাকে সংকোচিত করে রাখে। এখন তারা মানবতার চৌরা পৃষ্ঠে বসে বলছে ” আমরা হবো ইসরায়েল তোমরা হবে ফিলিস্তিনি।” টেকনাফ ও উখিয়াতে বাঙালীর বর্তমানে সংখ্যা লঘু। রোহিঙ্গাদের তারা মানবিক কারনে জায়গাজমি দিয়ে আশ্রয় দিয়েছে। টেকনাফ উখিয়াতে ৩৪ টি শরণার্থী ক্যাম্প আছে । এই ক্যাম্প গুলোর আশেপাশে বাঙালীরা কি পরিমাণ নির্যাতিত তা ভোক্তভোগী ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। অনেক বাঙালীরা রোহিঙ্গা দ্বারা নির্যাতিত হয়েও লোকলজ্জার ভয়ে বলেনা। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যেমন উর্ধ্বগতি, সংকটেও তেমন প্রকট। আগে বাঙালীরা পাহাড়ে কিংবা নিজের জমিতে উৎপাদিত পণ্য নিজের চাহিদা মিটানোর পর বিক্রি করতে পারতো। এখন তো তাদের পাহাড়ও নাই, জমিও নাই! রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া জন্য সারা দেশের মানুষ মিছিল, মানববন্ধন করেছিল । আমরা যারা মিছিলে গলা ফাটিয়েছিলাম আমাদের তো বাড়ি ভিটা সবই আছে, বাড়ি নাই শুধু মানবিক মানুষ গুলোর। এখন যখন রোহিঙ্গারা দল বাঙালীদের হত্যা করে বীর দর্পণে ক্যাম্পে ফিরে যায় অথবা তাদের গরু, ছাগল, ক্ষেতের ফসল জোড় নিয়ে যায়, তার জন্য বাংলাদেশে কোন গোষ্ঠী বা সংগঠন মিছিল কিংবা মানববন্ধন করতে দেখিনি। ” যার যায় সে বুঝে, অন্যের যায় হই।” কক্সবাজারে বাঙালীদের বুক ফাটা আর্তনাথ কে শুনবে? দেশী, বিদেশী সবাই মানবতার ফেরিওয়ালা হওয়ার জন্য রোহিঙ্গার পেটে আঙ্গুল টিপে দেখে ; কোথাও খালি আছে নাকি। আর অন্যদিকে বাঙালীদের পেটেপিঠে একাকার হয়ে গেছে, তারপরও কারোও দৃষ্টিগোচর হয়না! ২০১৭ সালে আমি পত্রিকায় একটা লেখা দিয়েছিলাম, সবাই আমার বিরোদ্ধে সমালোচনার ঝড় তুলেছিল। আমার লেখার সামান্য অংশ ” আমরা যদি রোহিঙ্গাদের জন্য আবেগে কেঁদে ফেলি, আমাদের ভবিষৎ প্রজন্ম কাঁদবে সারা জীবন।”

 

একটা জরিপে দেখা গেছে অর্ধেকের বেশী রোহিঙ্গারা সমাজের বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত।রোহিঙ্গারা কারন ছাড়াই বাঙালীদের দল বেধে হালমা চালাচ্ছে । ইতিহাস বলে রোহিঙ্গারা কোন কালেও আমাদের ভালো চাইনি, ভবিষ্যৎতেও চাইবেনা। ৭১ সালে রোহিঙ্গারা পাকিস্হানের পক্ষ নিয়া যুদ্ধ করেছে । আশা ছিল বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে তারা পাকুদের সাথে থাকতে পারে। রোহিঙ্গা বিভিন্ন কৌশলে সারা দেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আবার বাংলাদেশের নামে ভিসা নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। মানবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত স্হাপনকারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে বার বার ধন্না দিচ্ছেন। আর রোহিঙ্গারা মানবতার নেত্রীকে হত্যার জন্য ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছে। হায়রে মানবতা!  রোহিঙ্গারা কেন চট্রগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা বলতে পারে ? এক সময় রাখাইন রাজ্য আর চট্রগ্রাম ছিল আরাকানের অধীনে । মাঝখানে কোন আন্তর্জাতিক সীমারেখা ছিল না। ১৯ শতকে রাখাইন রাজ্য চট্রগ্রামের মানুষের জন্য ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র ছিল। যারফলে বাংলার থেকে মানুষ যেত রাখাইন রাজ্যে আবার রোহিঙ্গারা আসতো চট্রগ্রামে । পণ্যের আদান- প্রদানের সাথে দুই জায়গার মানুষের ভাষারও আদান-প্রদান ঘটে। যে জাতি নিজের ভাষা ছেড়ে অন্য দেশের ভাষা শিখার প্রতি আগ্রহ বেশী, তারা কত ভয়ংকর হতে পারে! বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের কাছে বাংলাদেশ হয় ; সিঙ্গাপুর।সেই কারনে হয়তোবা রোহিঙ্গারা চট্রগ্রামের ভাষাটা ভালো ভাবে আয়ত্ব করে নেয়।

 

বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবতার কঠিনতম ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়েছে । রোহিঙ্গা সমস্যা জাতিগত ও ভাষাগত আন্তর্জাতিক সমস্যা । এটা বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়। এই অঞ্চলের দুই বড় ভাই, ভারত ও চীনের নীরব ভূমিকা আজ প্রশ্নবিদ্ধ । ভারত সুযোগ খুঁজে কি ভাবে তাদের দেশের ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায় । আবার পশ্চিমাদের মিয়ানমারের প্রতি সুদৃষ্টি আছে। রোহিঙ্গারা এ গ্রহের বাসিন্দা কিন্তু জাতিগত ভাবে এ গ্রহে এদের কোন নিবন্ধন নাই । এর জন্য দায়ী জাতিসংঘ । যে দেশে একটা জাতি শত শত বছর যাবৎ বসবাসরত অথচ তাদের কোন জাতিগত নিবন্ধন নেই। আবার সেই দেশের নেত্রী শান্তিতে নোবেল পায় ! রোহিঙ্গা জাতি হিসাবে তাদের নাম মিয়ানমারে তালিকা ভুক্তকরার দায়িত্ব বিশ্ববাসীর । মানবিক দৃষ্টকোন থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য । কিন্তু নিজের দেশের নাগরিকের চিন্তাটা আগে করতে হয় । পাহাড়ে, বনে জঙ্গলে রোহিঙ্গারা বসতি স্হাপন করায় আমাদের দেশের পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটতেছে। রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের পরিবেশের যে ক্ষতি করেছে ; তা রোহিঙ্গা থাকলে জীবনেও পূরণ হবে না। আর যদি গায়েবি কোন কারনে চলে যায় তারপরও পরিবেশের এই ক্ষতি ৫০ বছরেও পূরণ সম্ভব নয়।

 

শুধু রোহিঙ্গা আসছে তাদের সাথে তা কিন্তু নয় । তারা নিয়ে আসছে ইয়াবা সম্রাট, মাদক সম্রাট, প্রশিক্ষিত জঙ্গি, আন্তর্জাতিক বিছিন্নবাদী গোষ্ঠী, মানব পাচারকারী, অস্ত্র ব্যবসায়ী। বাংলাদেশে ইয়াবা নামক সর্বনাশী মাদক এসেছে রোহিঙ্গার হাত ধরে । মানবিক কারনে রোহিঙ্গা আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে আজ হুমকি মূখে। রোহিঙ্গারা অন্য দেশের অধিবাসী হয়েও স্বাধীন বাংলাদেশে সমাবেশ করে ! এটা কিসের লক্ষন ? বর্তমানে টেকনাফ, কক্সবাজার এলাকা রোহিঙ্গাদের পদচারণে ক্ষতবিক্ষত । আগেও রোহিঙ্গা ছিল। ২০১৭ সালে ২৫ তারিখ থেকে পিঁপড়ার মতো দল বেঁধে বাংলাদেশে, প্রবেশ করে। ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিবন্ধিত হিসাব মতে পুরাতন/ নতুন মিলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আছে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৯১৩ জন। সরকারী হিসাবে গত ২০ মাসে দেড় লাখ রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। গত ১ বছরে জন্মগ্রহণ করেছে ৬০ হাজার শিশু । আরও গর্ভবতী আছে ৩৫ হাজার নারী। Save The Children জরিপে প্রতিদিন ১৩০টি রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করে। বিশ বছরের একটা মেয়ের গড়ে ৩টা করে সন্তান আছে। সরকার দেশের জনসংখ্যা কমানোর জন্য হাজার হাজার কোটি খচর করতেছে।আর রোহিঙ্গারা জনসংখ্যা তৈরীর ফটোকপি মেশিন নিয়ে বসছে। বিশ্ববাসী রোহিঙ্গা জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে কোন কথা বলেনা। জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে যেমন রোহিঙ্গারা আন্তরিক আবার খুন, হত্যার মাধ্যমে মানুষ কমাতেও বেসামাল। এত পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ১৩০ জন রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা কতৃক খুন হয়েছে।

 

 

দেশের পরিবেশ, অর্থনীতি আর রোহিঙ্গা কতৃক সামাজিক অবক্ষয়কে সহনশীল মাত্রায় রাখতে সমন্বিত উদ্যেগের বিকল্প নাই। রোহিঙ্গাদেরকে নিজ দেশে পাঠানোর স্বপ্ন বাংলাদেশ সরকারের কল্পনাবিলাসী বলা যেতে পারে। স্বাধীনের পর থেকে প্রতিটি সরকারের শত চেষ্টার পরও রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে। সুতারাং রোহিঙ্গাদেরকে বার্মা ফিরত নিবে এ স্বপ্ন বালিশের নীচে রেখে ; দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সাথে সমন্বয় করে, সময় উপযোগী পদক্ষেপ সরকারকে নিতে হবে।
আমার মতামত /

 

# প্রথমে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে। আইডি কার্ড বাধ্যতামূলক করতে হবে ।
# রোহিঙ্গাদেকে এমন একটা জায়গায় স্হানান্তর করতে হবে যেখানে সীমানা প্রাচীর তৈরী করা সম্ভব।
# জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে ওরা ওস্তাদ, তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানামুখী উদ্যেগ নিতে হবে।
# যারা বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত তাদেরকে সনাক্ত করে আলাদা জায়গায় রাখতে হবে।
# রোহিঙ্গারা যাতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জড়িয়ে যেতে না তারজন্য ক্যাম্প গুলোকে বিভিন্ন অংশ ভাগ করে হাজিরা নিশ্চিত করতে হবে।
# বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ বন্ধ করতে হবে।
# যেহেতু অপরাধটা রোহিঙ্গাদের রক্তে মিশে গেছে সহজে দূর করা সম্ভব নয়। তারজন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদী কাউন্সেলিং মাধ্যমে সামাজিক পরিচর্যা। প্রথমে কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গাকে কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে ভাগে আনতে হবে। তারপর রোহিঙ্গা দ্বারা রোহিঙ্গাকে কাউন্সেলিং করাতে হবে।
# যাতে আর নতুন করে রোহিঙ্গা প্রবেশ করতে না পারে, তারজন্য সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া সহ নিরাপত্তা জোড়দার করতে হবে।

 

বিশ্বের যে সব রাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয়ে সাহায্য ও সহযোগীতার আশ্বাসের বাণী দিয়েছেন। আমরা তাদের আশ্বাসের সুশীতল বাতাস চাই না । বাংলাদেশ এখন এই অবস্হায় আছে ” ভিক্ষা চাই না কুত্তা তাড়ান ” যে সব রাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্য সহযোগীতার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে অথবা প্রতিশ্রুতির সুমধুর বাণী শুনাতে আমাদের দেশের রাষ্ট্র প্রধানের কাছে চলে এসেছেন । আপনাদেরকে বেশী বেশী ধন্যবাদ । মানবতার হাওয়াই মিষ্টি চাই না । সবাই এই প্রতিশ্রুতি দেন যে, ৫০ হাজার করে রোহিঙ্গা নিজ নিজ দেশে এই মুহূর্তে নিয়া যাব । তাতেই আমরা মহাখুশী ।

সাইদুর রহমান: লেখক ও কলামিস্ট

আপনার মতামত লিখুন :