নওগাঁয় শ্রমিক সংকটে ধান কাটা মাড়াই দুশ্চিন্তায় কৃষক

প্রকাশিত : ২৮ এপ্রিল ২০২০

রওশন আরা শিলা,নওগাঁ প্রতিনিধি: উত্তরাঞ্চলের মধ্যে শষ্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত নওগাঁ জেলা। প্রতি বছর ইরো-বোরো মৌসুমে ধান কাটা মাড়াইয়ে কৃষকরা থাকতেন দুশ্চিন্তামুক্ত। কিন্তু এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। সময়মতো তাদের সোনালী ধান ঘরে তুলতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে গত কয়েকদিন থেকে আবহাওয়া কিছুটা খারাপ থাকায় ঘন ঘন বৃষ্টি হচ্ছে। এতে জমিতে পানি জমে যাওয়ায় ফলনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। জেলায় জেলায় লকডাউনের কারণে বাহিরের জেলা থেকে ধান কাটার শ্রমিকরা আসতে পারছেন না। যেটুকু শ্রমিক আসছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।

মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে সোনালী ধান। গত কয়েক মাসের কষ্টের ফসল ঘরে উঠার অপেক্ষায়। আহাওয়া অনুকুলে থাকায় ভাল ফলন হয়েছে। মাঠে ধান পাকতে শুরু করলেও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছেনা। ইতোমধ্যে লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, পাবনা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসতে শুরু করেছে ধান কাটার শ্রমিক। এতে সহযোগীতা করছে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন। গন্তব্যে পৌছার পর প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাদের থাকার জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। হোটেল রেস্তোরা বন্ধ থাকায় পথে খাবার দেয়া হচ্ছে। সোমবার জেলার মহাদেবপুর উপজেলার নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে রানীপুকুর মাঠে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আগত ৩৫ জন শ্রমিক ধান কাটার কাজ করছিলেন। বাড়ি থেকে আসার সময় পথে পথে ভোগান্তির কথা জানান তারা।

মান্দা উপজেলার ভারশোঁ গ্রামের কৃষক হারুন বলেন, গত কয়েকদিন থেকে হালকা-পাতলা বৃষ্টি হচ্ছে। এ বৃষ্টিতে নীচু জমিতে পানি জমে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ফলন মোটামুটি ভাল হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে বিঘা প্রতি প্রায় ২৫/২৬ মণ হবে। করোনা ভাইরাসের কারণে শ্রমিক কম থাকায় এখনো ধান কাটা মাড়াই জমে উঠেনি। যদি এভাবে বৃষ্টি চলমান থাকে তবে ফলন বিপর্যয়ের সম্ভবনা রয়েছে। সেই সাথে কৃষকদের কষ্টও বাড়বে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার শ্রমিক আব্দুল মতিন, শাহিন আলী ও মোস্তাকিম সহ কয়েকজন বলেন, ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও দুই কপি করে ছবি কেউ বা জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে জমা দিয়ে পাশ নেয়ার পর আমাদের আসার অনুমোতি মিলেছে। এছাড়াও পথে পথে ছিল ভোগান্তি। পুলিশ বিভিন্ন জায়গা আমাদের প্রাথমিক ভাবে তাপমাত্রা মেপেছেন। এরপর আসার অনুমোতি দিয়েছে। কাগজপত্র ঠিক করতে প্রায় ১০ দিন লেগেছে। যেখানে আমরা আরো ১২/১৫ দিন আগে আসতাম, সেখানে রোববারে আসছি।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু আগাম জাতের ধান কর্তন শুরু হয়েছে। আগামী ২০/২৫ দিনের মধ্যে কাটা প্রায় শেষ হবে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের ধান কাটতে জেলার ১১টি উপজেলার কৃষকদের অর্ধেক মূল্যে ৩৩ টি কম্বাইন হারভেস্ট মেশিন দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বাহিরের জেলা থেকে তেমন শ্রমিক আসতে পারেনি। এই মৌসুমে কৃষির জন্য বড় সুযোগ হচ্ছে অনেক শ্রমিক যারা অন্য পেশায় নিয়োজিত ছিল তাদের শ্রম এখন বন্ধ হওয়ায় গ্রামে অবস্থান করছে। যদি তারা কোন কর্মপায় তাহলে কাজ করতে আগ্রহী। এ সুযোগে তারা ধান কাটার কাজ করবে। তখন ধান কাটার আর সমস্যা থাকবে না। তারপরও বাহিরের জেলা থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক আসছে। তাদের শারীরিক পরীক্ষার পর কাজের অনুমোতি মিলেছে।

আপনার মতামত লিখুন :