ওরা গরিবের দুঃখ বুইজ্জা পাশে দাড়াইছে

প্রকাশিত : ২১ এপ্রিল ২০২০

উত্তম কুমার হাওলাদার,কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি,২১এপ্রিল।। ‘‘করোন ভাইরাসের কারনে এ্যাহন আর কাম কাইজ নাই। পোলাপান লইয়া ঘরে বইয়া থাহি। হাতে টাহা পয়সাও নাই। দুই দিন আগে দু¹া চাউল পাইছি। হেই চাউল রাইন্দা, আলু ভর্তা আর ডাইল দিয়া তিন বেলাই খাইছি। কলেজের ছত্ররা সবজির দোহান দেছে। হেইন্দা সবজি আনছি। এ্যাহন এইয়া রাইন্দা মাইয়া পেলা লইয়া খাইতে পারমু কয়দিন। মুই ওগো লই¹া আল্লার কাছে দেয়া করমু। ওরা গরিবের দুঃখ বুইজ্জা পাশে দাড়াইছে’’। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের উদ্যোগে বিনামূল্যে সবজি বাজার থেকে সবজি নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে স্বামী পরিত্যাক্তা রওসানার বেগম এমন কথা বলেন।
করোনা ভাইরাস সংক্রমে কর্মহীন হয়ে পরা পৌর শহরের খাদ্য গুদামের পাশে আন্ধারমানিক নদীর পাড়ে অস্থায়ী ভাবে বসাবাসরত অপর এক স্বামী পরিত্যাক্তা নারী হোসনেআরা বেগম বলেন, চার মেয়ে রেখে সাত বছর আগে তার স্বামী মারা গেছে। বিভিন্ন কাজকর্ম করে কিছু টাকা যোগার করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ঘরে দুই মেয়ে আছে। অন্যের বাড়ি ঝি’য়ে কাজ করে দুই বেলা খাইতে দিতে হয় তাদের। এখন করোন ভাইরাসের কারনে সেই কাজও নেই। মাইয়া পোলা লইয়া ঘরে বসে আছি। দুই দিন আগে ১০ টাকা কেজি দরে কিছু চাল কিনেছিলাম। কি দিয়ে যে খাবো তা বুঝতে পারছিলামনা। পাশের বাসার ইব্রাহীম ভাইয়ের স্ত্রী তহমিনা ভাবি বলেন কলেজের ছাত্ররা বিনামূল্যের সবজি বাজার দেছে ওখানে যেয়ে দেখি। তার কথা মত এসে বেগুন, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, ঢেড়ষ, পুই শাক, কাচা মরিচ, করোলা দেছে ছাত্ররা। এদের মতো অনেকেই এ মানবতার সবজি বাজার থেকে তাদের চাহিদা মত ফ্রি সবজি নিয়ে গেছেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কলাপাড়া সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজ শাখা ছাত্রলীগের উদ্যোগে পৌর শহরের মাদ্রাসা রোডে এলাকায় কর্মহীন হয়ে পড়া হতদরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে সবজি বাজার বসিয়েছেন। সেখানে প্রায় ১০ প্রকার সবজি রাখা হয়েছে। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পরা মানুষগুলো দুরত্ব বজয় রেখে তাদের চাহিদা মত ফ্রি সবজি নিয়ে যাচ্ছেন। এ ফ্রি সবজি বাজারের উদ্যোক্তাদের সূত্রে জানা গেছে, প্রথমদিন বিনামূল্যে এ সবজি বাজার থেকে প্রায় দুইশতাধি পরিবার তাদের চাহিদা মত সবজি নিয়ে গেছে। দ্বিতীয় দিনেও একই পরিমান সবজি দেয়া হয়েছে। তবে এই চলমান ফ্রি সবজি বাজার সপ্তাহের দুইদিন সকাল থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সবার জন্য উন্মুক্ত। এই সংকট মুহুর্তে এর ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকবে বলে তারা জানান।

সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সধারন সম্পাদক হাসানুজ্জামান অমি গাজী বলেন, সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মিলে এ বাজারটি চালু করেছি। এর পুরো অর্থ আমরাই জোগান দিয়েছে। এর আগে কর্মহীন অনেক মানুষকে সহযোগিতা করেছি। তাদের শুধু আলু আর ডাল দিয়ে ভাত খেতে দেখেছি। এখন ফ্রি সবজি বাজার চালু করেছি। এ বাজারে যে কোন কেউ সবজি নিতে পারবে। আমার শুধুই মানবতার সেবা করে যাচ্ছি। যতদিন করোনার এমন পরিস্থিতি থাকবে , ততদিন বিনামূল্যের সবজি বাজারটি চালু রাখতে চাই।
মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের সাবেক ভিপি ও যুবলীগ নোতা জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, মানবতার সেবায় যে উদ্যোগটা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ নিয়েছে এটি খুব সুন্দর। আমিও সেখানে গিয়েছিলাম। এরাই আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। তবে এ বাজারটি হলো মানবতার সবজি বাজার বলে তিনি জানান।

মাদ্রাসা রোডের অধিবাসী শিক্ষক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এদের মত করে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে এই মহাদুর্যোগে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট লাঘব হতো। তিনি আরও বলেন, আশা করছি এই ধরনের কার্যক্রম সামনে আরো অব্যাহত থাকবে সেই কামনা করছি। কলাপাড়া বন্দর ব্যবসায়ি সমিতির সাবেক অর্থ সস্পদক মো.ফরিদ উদ্দিন বিপু বলেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পরা মানুষের মাঝে আনেকেই চাল ,ডাল আলু তেল বিতরন করেছে। এখান কলাপাড়া কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ফ্রি সবজি বাজার চালু করেছে। এটি একটি ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ। আগে আলু ভর্ত দিয়ে ভাত খেতে হতো। এখন ওইসব কর্মহীন মানুষ সবজি দিয়ে ভাত খাবে।

 

আপনার মতামত লিখুন :