এখনও ত্রাণ পৌঁছেনি পটুয়াখালী রাঙ্গাবালীর বিচ্ছিন্ন ৪টি দ্বীপ চরে

প্রকাশিত : ২০ এপ্রিল ২০২০

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: শাহ আলম গাজী (৪৮)। পেশায় একজন জেলে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন প্রায় এক মাস। এর মধ্যে তার ঘরে যায়নি কোন প্রকার ত্রাণ সামগ্রী। পুঁজি যা ছিল তা দিয়ে এতদিন খেয়েছেন। এখন ঘরে কোন খাবার নেই। হাত পাতারও যায়গা নেই। কারণ সে থাকেন দ্বীপ চরে। তাই গত কয়েকদিন ধরে তিন সন্তান ও স্ত্রীসহ না খেয়ে আছেন।

কোথাও যাওয়ার রাস্তা নেই। দ্বীপ চরের গন্ডি পেরাতে হলে নৌকা কিংবা ট্রলারে যেতে হবে। কেউ যানলে বিপদ হতে পারে, তা ভেবে ঘরেই পরিবার নিয়ে অনাহারে দিনকাটছে তার। শাহ আলম গাজীর বাড়ি পটুয়াখালীর সাগর বেষ্টিত রাঙ্গাবালী উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ‘চরকাশেম’। শুধু শাহ আলম গাজী নয়! তার মতো অনাহারে এবং অর্ধহারে আছেন ওই দ্বীপের অন্য সবাই। যারা সকলেই নিম্ন আয়ের মানুষ।

চরকাশেম দ্বীপ ছাড়াও রাঙ্গাবালী উপজেলার চরনজির, কলাগাছিয়া ও চর আন্ডায় এখনো পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছেনি। তাই সেখানকার মানুষের কষ্টে দিন কাটছে। বর্তমানে দ্বীপচরগুলোতে হাহাকার চলছে। রাঙ্গাবালী উপজেলার এই চারটি দ্বীপে প্রায় এক হাজার পরিবারের বসবাস। করোনা ভাইরাসের লকডাউনের সময়কাল প্রায় এক মাস হলেও দ্বীপগুলোতে পৌঁছেনি কোন প্রকার ত্রাণ সামগ্রী।

সরকারী বা বেসরকারীভাবে কেউ এগিয়ে আসেননি তাদের পাশে। তাই দ্বীপের মধ্যে বাসিন্দারা আটকাকলে না খেয়ে কাতরাচ্ছেন। ‘চর কাশেম’ দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, চরকাশেম দ্বীপে বসবাসকারী লোকজন জেলে ও দিনমজুর পেশায় নিয়োজিত। করোনা ভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে কর্মহীন তারা। প্রথম দু’একদিন ভালো কাটলেও কয়েকদিন যেতে না যেতেই অনেকের কষ্টে দিন কাটতে শুরু হয়। ঘরে চাল থাকলে, ডাল নেই! আবার ডাল থাকলে, তেল নেই। এভাবে অভাব লেগে যায়। তবুও আশেপাশের সবাই মিলে শেয়ার করে চলছিল কিছুদিন। কিন্তু গত এক সপ্তাহ যাবৎ অবস্থা খুব করুন হয়ে দাড়িয়েছে।

অধিকাংশ লোকের ঘর এখন খাবার শূন্য। ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে আনেকেই না খেয়ে আছেন। কিন্তু তাদের খোঁজ নেয়ার মত কেউ নেই। তাদের কান্নার আওয়াজ নদীর ওই পারে গিয়ে পৌঁছেনা বলে দাবী চরকাশেম বাসীদের। তাদের প্রশ্ন, শহরের লোকেরা ত্রাণ পেলে চরের লোকেরা কেন ত্রাণ পাবেনা? না খেয়ে আর কতদিন কাটাতে হবে। কবে ভাঙবে এই লকডাউন? চরকাশেমের বাসিন্দা সালেহা খাতুন বলেন, ‘আমি আগে মাছ ধইরা সংসার চালাইতাম। করোনায় আমার কাম-কাইজ বন্ধ।

ঘরে চাউল নাই। তিন দিন আগে ভাত রানছি। হেই ভাত এই কয়দিন ধইরা অল্প অল্প কইরা খাই। আইজ সকালে ভাত ষ্যাশ হইয়া গ্যাছে। দুপারে উপাস আছিলাম, এ্যাহন রাইতেও উপাস থাকতে হইবে। জানিনা কয়দিন এরম উপাস থাকমু। কেউ আমাগো একটু খোঁজও লয়না। আমরা এই চররের মধ্যে আছি, নাকি মরছি দেহার কেউ নাই।

আমরা কি এই দ্যাশের জনগননা? ’ এভাবেই প্রতিবেদকের সাথে কষ্টের কথা গুলো বলছিল চরকাশেম দ্বীপের আন্য বাসিন্দারাও। এব্যাপারে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ চরকাশেম ও চরনজীর সহ কয়েকটি দ্বীপের বিষয় আমি শুনেছি। এবিষয়ে খুব শীগ্রই ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশাকরি রাঙ্গাবালীর কেউ না খেয়ে থাকবেনা।

 

আপনার মতামত লিখুন :