গাজায় রক্তগঙ্গা: বিশ্ব বিবেক কি মরে গেছে?
প্রকাশিত : ১৯ মার্চ ২০২৫

শুধু গতকালের নৃশংসতার জন্য বিশ্ব মানচিত্র থেকে ইসরাইলকে চিরতরে মুছে দেওয়া উচিত। ১৭৪ জন শিশু, ৮৯ জন মহিলা এবং ৩২ জন বয়স্ক নারী-পুরুষ গত রাতে ইসরাইলের এয়ার স্ট্রাইকে শহিদ হয়েছে। এই ধরনের অপরাধ তারা এবারই প্রথম নয় বরং ১৯১৮ সালে ইসরাইল নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্রমাগত করে চলছে। যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলমান- তার মধ্যেও এমন হামলা বর্বরোচিত, কাপুরুষোচিত এবং সকল আন্তর্জাতিক আইনের ব্যত্যয়।।
দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা, গোটা আরব বিশ্ব শরাব আর নারীতে নিমগ্ন। ঐক্যবদ্ধ আরবের ইসরাইলকে মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়া মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যাপার। অথচ ইসরাইলের সবচেয়ে বড় বন্ধু কে? মুসলিম রাষ্ট্র। সবচেয়ে বড় শত্রু কে? তাও মুসলিম রাষ্ট্র। শত্রুকে দমনের সময় বন্ধুর সমর্থন তো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া! মুসলিমদের মধ্যে এই ভেদাভেদের খেসারত দিচ্ছে ফিলিস্তিনের শিশু ও নারী।
পশ্চিমা বিশ্বের মানবাধিকারের ওয়াজ ওদের সাইনবোর্ড। ওরা মূলত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এবং অস্ত্র ব্যবসায়ী। মানবাধিকার মানে মানুষের অধিকার। সেখানে মুসলিম-খ্রিষ্টান ভেদাভেদ নাই। অথচ গাজায় এমন ধ্বংসযজ্ঞ চলমান কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব থেকে কোনো প্রতিবাদ নাই। যা আছে তা বর্বরতার পক্ষে মৌন সম্মতি। সর্বতভাবেই খুনি হত্যাকারীদেরকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনের শিশু-নারীদেরকে খুন করার বৈধ লাইসেন্স পশ্চিমারা ইহুদীদেরকে আগাম দিয়ে রেখেছে। এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নীতিমালা আলাদা। গাজার দুধের শিশুও সন্ত্রাসী এবং তাদেরকে হত্যা করা জায়েজ- পশ্চিমা মানবাধিকারের সংজ্ঞা! নয়তো এমন বর্বরোচিতভাবে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হচ্ছে, ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হচ্ছে, চিকিৎসার ব্যবস্থা নাই এবং খাদ্যের চরম ঘাটতি- পশ্চিমা বিশ্বের মানবাধিকার রক্ষার ধ্বজাধারীরা এসব দেখে না?
ফিলিস্তিনের এমন সংকটেও আরব বিশ্বের শায়খ ও শাসকরা হিজড়ার ভূমিকা পালন করছে। কেউ কেউ ইসরায়েল বিষয়ে আমেরিকার নীতির তোষামোদ করে হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে সামান্য প্রতিবাদ পর্যন্ত করছে না। কোনো কোন মুসলিম দেশ শুধু বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে দায়িত্ব সারছে! যে বায়তুল আকসা মুসলমানদের প্রথম কিবলা সেখানে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের প্রবেশাধিকার সীমিত এবং সংরক্ষিত, গোটা গাজা শহর ধ্বংসের নগরীতে পরিণত হয়েছে অথচ মুসলিম বিশ্বের মোড়লরা স্বৈরতান্ত্রিক মোড়কের রাজতন্ত্র বহাল রাখার জন্য চুপ করে আছে। ইসরায়েলের ইহুদিদের আগ্রাসনে সমগ্র ফিলিস্তিন আজ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে।
গত বছরজুড়ে সমগ্র ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী যতগুলো শিশুকে হত্যা করেছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক শিশুকে গত একদিনের এয়ার স্ট্রাইকে শহিদ করেছে। গোটা গাজায় রক্তগঙ্গা বইছে। বিশ্ব মোড়লদের বাধাহীন হয়ে ইসরাইলের এমন আগ্রাসন ও হত্যাযজ্ঞ যদি চলমান থাকে তবে ফিলিস্তিনের মসজিদুল আকসায় আজান দেওয়ার মত মুসলিম সন্তান অবশিষ্ট থাকবে না। গতকালকের কান্না বিজড়িত কণ্ঠের আজান বিশ্বের মুসলিম হৃদয়কে প্রকম্পিত করার কথা। ঘুমন্ত বিবেক এত অল্পে বোধহয় জাগ্রত হয় না? নাকে পানি যেতে কত বাকি পাঞ্জেরি?
বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হও। আল্লাহর একত্ববাদ বিশ্বাসী সকল ফেরকার মুসলিমের মধ্যকার স্বার্থ ছেড়ে, দ্বন্দ্ব ও অনৈক্য ভুলে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানো সবার জন্য ফরজ। ইসরায়েলের আগ্রাসন মোকাবিলায় সবাইকে বদর কাফেলায় শামিল হতে হবে। গোটা ফিলিস্তিনে মানবাধিকারের যে চরম লঙ্ঘন চলছে তা রুখে না দিলে কিংবা দেওয়ার চেষ্টা না করলে আল্লাহর কাছে প্রত্যেককেই কৈফিয়ত দিতে হবে। গতকাল যে শিশুরা আল্লাহর মেহমান হয়েছে তারা নিশ্চয়ই মুসলিম উম্মাহের চুপ থাকার বিরুদ্ধে স্রষ্টার কাছে নালিশ করবে।
যারা মানবতার শত্রু, মুসলমানদের জানের দুশমন এবং মানবতার ঘোর বিরোধী তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ তাদের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। সকল ইসরাইলি পণ্য বয়কট করতে হবে। যারা ইসরাইলকে নানাভাবে সহায়তা করে এবং সমর্থন জানায় তাদেরকেও এড়িয়ে চলতে হবে। শত্রুর বন্ধুও নিঃসন্দেহে শত্রু। মুসলিমকে শত্রু-মিত্র চিনতে হবে।
গোটা মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোড়া তথা ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ, আগ্রাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আরব বিশ্বের মুসলিমদের ভোগবাদ ত্যাগ করে জিহাদের ময়দানে অবতীর্ণ হতে হবে। ইমানের সর্বনিম্ন স্তর ঘৃণা। ফিলিস্তিন ইস্যুতে আজ মুসলিমগণ যেভাবে কাপুরুষোচিত ভূমিকা পালন করছে এমন দুর্বল অবস্থান তাদের পূর্বপুরুষদের ছিল না।
আরবের বর্তমান হকিকতের মুসলিমদের ঈমানী জজবা দেখলে তাদের পূর্বপুরুষগণ নিশ্চিতভাবে ধিক্কার দিতো। মানুষের পক্ষের মানব সকল আসুন- নির্যাতিত, নিপীড়িত ফিলিস্তিন বাসীদের পাশে দাঁড়ান। আজ যদি চুপ থাকেন বা এড়িয়ে যান তবে আল্লাহর দরবারে কৈফিয়ত দিতে হবে। মুক্তির জন্য কেবল নামাজ, রোজা, হজ্জ এবং যাকাত যথেষ্ট হবে না বরং জিহাদও জরুরি
বিশ্ববাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান, অচিরেই ইসরাইল কর্তৃক নিরীহ ফিলিস্তিনি, ফিলিস্তিনের অবুঝ শিশু এবং অবলা নারীদের পক্ষে দাঁড়ান। যুদ্ধের আন্তর্জাতিক নীতি অমান্য করে যারা ঘুমন্ত ফিলিস্তিনবাসীর ওপর হামলা করেছে তাদেরকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি করুন। মানবসভ্যতা এভাবে চলতে পারে না। আপনারা চুপ থাকলে আপনাদের মুখোশ উন্মোচিত হবে। মানুষ হত্যার রক্ত ও দায় আপনাদের চরিত্রেও লাগবে।
জাতিসংঘে ভূমিকা বহুলাংশে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নানান দেশে সামান্য সামান্য প্রসঙ্গে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয় অথচ ইতিহাসে বিরল এমন ধ্বংসযজ্ঞ চলার পরেও তা রোধ করতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না- এটা লজ্জাজনক। নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ পৃথিবী চাই। শিশুরা অপরাধ মুক্ত। যারা শিশুদের হত্যা করে তাদেরকে থামান এবং দমান। নয়তো এমন নৃশংস অপরাধের ক্ষতিপূরণ দোষী এবং দায়ীদের সাথে সাথে চুপ করে থাকা বিশ্ববাসীকেও শোধ করতে হবে। এমন অন্যায় ও অন্যায্য ধারাবাহিকতায় চলতে থাকলে সমগ্র বিশ্বাসী ও বিশ্ববাসীকে স্রষ্টার গজব স্বরূপ ভয়াবহ প্রাকৃতিক ও মানবিক বিপর্যয়ে পতিত হতে হবে।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com