অসুস্থতার কথা বলে ৫ মাস আগে ফ্ল্যাট ভাড়া নেন আরসা প্রধান
প্রকাশিত : ১৯ মার্চ ২০২৫

গত বছরের নভেম্বরে অসুস্থতার কথা বলে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লী টাওয়ারে বাসা ভাড়া নেন সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া মিয়ানমারের আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী। প্রথমে ৩ তলায় বাসা ভাড়া নেওয়ার পর ফ্ল্যাটটি ছোট হওয়ায় একই ভবনের ৮ম তলায় একটি বড় পরিসরের ফ্ল্যাট ভাড়া নেন তিনি। ভাড়া নেওয়ার সময় ফ্ল্যাট মালিকদের তারা জানিয়েছিলেন, আরসা প্রধান আতাউল্লাহ অসুস্থ, হসপিটালে ভর্তি হবে। বারবার হসপিটালে যেতে হয়। তাই চট্টগ্রাম থেকে এখানে ঢাকার কাছে বাসা ভাড়া নিতে ইচ্ছুক।
পেশায় চট্টগ্রামের ট্রলার ব্যবসাীয়। সেই থেকেই তারা বসবাস করছে এ ফ্ল্যাটেই। নামাজ পড়ার সময়, নিত্যপণ্য ক্রয়, ময়লা-আবর্জনা ফেলাসহ প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া তারা বাসা থেকে বের হতেন না। বেশি কথাও বলতেন না কারো সঙ্গে। তাদের গ্রেপ্তারের খবরে হকচকিয়ে গেছেন এলাকাবাসী। কিছুতেই মানতে পারছেন না পাশের দেশের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রধান তাদের এলাকায় থাকতেন।
এর আগে গত ১৬ ও ১৭ মার্চ র্যাব-১১ দুটি টিম নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ভূমিপল্লী আবাসিক এলাকায় এবং ময়মনসিংহের নতুন বাজার মোড়ে অবস্থিত গার্ডেন সিটিতে অভিযান চালিয়ে আরসার কমান্ডার আতাউল্লাহ(৪৮) ও সেকেন্ড ইন কমান্ড মোস্তাকসহ ১০ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তারা দুজন ছাড়া বাকিরা হলেন মনিরুজ্জামান (৩৩), সলিমুল্লাহ (২৭), মোসা: আসমাউল হুসনা (২৩), মো. হাসান(১৫), আসমত উল্লাহ (২৪), মো: হাসান (৪৩), মোসা: শাহিনা (২২), মোসা: সেনোয়ারা (১৭)।
র্যাব জানায়, অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে ৫১ লক্ষ ৩৯ হাজার ১শ টাকা, ইউএস ডলার ও রিঙ্গিতসহ আরও কিছু বৈদেশিক মুদ্রা, আরসার কমবাট ইউনিফর্ম, মোবাইল ফোন, চাকু, স্টিলের চেইন ও ঘড়িসহ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ৬ জনকে সোপর্দ করে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই দুই মামলায় তাদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
আরসা বাহিনীর প্রধান আয়াতুল্লাহ তার অসুস্থতার কথা বলে বাকি সদস্যদের নিয়ে প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লী টাওয়ারের মো. কবিরের মালিকানাধীন ৩ তলার ফ্লাটে উঠেন। এ বিষয়ে মো. কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওনার বাড়ি চট্টগ্রাম, ওনি খুবই অসুস্থ। তারা বেশি দিন থাকবে না। বারবার ডাক্তার দেখাতে হয় তাই ভাড়া নিতে চান। সঙ্গে তার ভাই আর পরিবার থাকবে। চট্টগ্রামে তার ট্রলারের ব্যবসা আছে। এসব কথা বলে আমার কাছ থেকে বাসা ভাড়া নিয়েছে। এ সময় ওনাদের সাথে একজন বিশেষ বাহিনীর লোক বলে পরিচয় দেন। উনিই এখানে তাদের নিয়ে আসছিল। সঙ্গে ২ দুইজন সাংবাদিকও আসছিল। তবে তাদের নাম পরিচয় আমি জনি না।
তিনি আরও বলেন, ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার পর বিশেষ বাহিনীর পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি ওনাদের (আরসা সদস্য) বেডিং পত্র কিনে দিয়েছিল। ভাড়া দেওয়ার পর তারা মাসের ভাড়া ঠিকমতোই দিতো। আমার এখানে নভেম্বরে ভাড়া নিয়ে ২ মাস ছিল। ফ্ল্যাট ছোট বলে এই বাড়ির ৮ তলায় ভাড়া উঠেন তারা।এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে একই বাড়ির ইতালি প্রবাসী আব্দুল হালিম সরকারের মালিকানাধীন ৮ তলার ফ্ল্যাটে ভাড়া উঠেন।
ইতালি প্রবাসী আব্দুল হালিম দেশের বাইরে থাকায় তার বেয়াই মো. খোরশেদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ভাড়ায় সেই ফ্ল্যাটে উঠেন তারা। মো. খোরশেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমে ৩ তলার কবির ভাইয়ের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে তারা। ২ মাস পর আমার বেয়াই হালিম ভাইয়ের ফ্লাটের কাজ শেষ হলে সেটা ভাড়া নিতে চায় বলে দারোয়ানকে জানায়। দারোয়ান আমাকে বলেছে তাদের নাকি ছোট ফ্ল্যাট হবে না তাদের বড় ফ্ল্যাট দরকার। তাই হালিম ভাইয়ের ৮ তলার ফ্ল্যাটটা ভাড়া চাচ্ছে। এরপর ২০ হাজার টাকা ভাড়ায় আমি ভাড়া দিয়ে দেই।
ভূমিপল্লী টাওয়ারের দারোয়ান মো. এমরান ঢাকা পোস্টকে জানান, পাঁচ মাস আগে ৩ তলায় ফ্ল্যাট ভাড়া দেন তারা। বাসা থেকে কম বের হতো এই পরিবারের সদস্যরা। আমরা ভেবে ছিলাম তারা আলেম পরিবার তাই বাসা থেকে কম বের হয়। মহিলা ও বাচ্চাসহ ৯ জন সদস্য থাকতো। তিনি (আয়াতুল্লাহ) সব সময় মসজিদে নামাজ পড়তো। আমাকে একবার বলে ছিল তাদের বাড়ি চট্টগ্রাম। মাঝে মাঝে গৃহস্থালির ময়লা ফেলতে বের হতেন।
পাশের ছায়া ভবনের দারোয়ান মো. আবুল কালাম বলেন, আয়াতুল্লার সঙ্গে আমার প্রায়ই কথা হতো। নামাজে যাওয়ার সময় তার সঙ্গে দেখা হতো। তিনি এমন লোক কোনো সময়ই ধারণা করতে পারি নাই। আমাগো লগে থাইক্কা গেলো আমরাই কইতে পারলাম না। অথচ তারে নিয়া কয়েক বছর আগে নিউজ দেখছিলাম। সে সময় তার আরও বেশি দাড়ি ছিল। কিন্তু এখন কম থাকায় চিনতেই পারি নাই।