প্রাপ্তি ও প্রলোভনের সত্য উপলব্ধি!
প্রকাশিত : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অমুকের তো ভালো চাকুরি হয়েছে, সে ভালো বাড়ি কিনেছে কিংবা তাদের দিন ভালো যাচ্ছে- বাহারি কথা বলে লোকে আপনার মন খারাপ করে দিতে চাইবে। আপনার ভাগ্য কারো ভাগ্যের সাথে তুলনা করে সৃষ্টি করা হয়নি। মহা পরিকল্পনাবিদের পরিকল্পনা এবং আপনার চেষ্টা- দুয়ের সম্মিলনে আপনি যেমন আছেন, যা পেয়েছেন এবং যেভাবে থাকবেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকেন। কারো সম্পদ দেখে ঈর্ষান্বিত হলে, কারো সাফল্য দেখে মুষড়ে পড়লে কিংবা কারো উত্থান দেখে দুঃখ পেলে সেটা আপনার মানসিক দীনতা। কার কীসে মঙ্গল তা কেবল দয়াময় জানেন।
কারো সাথে তুলনা করে নিজের বিচার করতে গেলে অশান্তিতে ভুগবেন। কত শত লোকে নানা কথা বলে মনকে অস্থির করে তুলতে চাইবে। আপনিও যদি সেইসব আলোচনায় জড়ান, সেসব নিয়ে ভাবেন তবে দুঃখ পাবেন। সৎপথে দুই পয়সা রোজগার হলেও সন্তুষ্ট থাকবেন। কারো আয়ের সাথে ব্যয় মিলাতে না পারলে তাকে ভাবনায় রাখা ছেড়ে দিন। সুখ অল্পে, মানসিক তৃপ্তি বাড়ে হালালে। অবৈধতার গল্পে মুগ্ধ হওয়ার রসদ নাই। মানুষ তার জন্য বরাদ্দকৃত ভাগ্যের সীমানা অতিক্রম করতে পারে না। কখনো কখনো মানুষ চেষ্টা করেও বিফল হবে। প্রার্থনা করতে হবে- যা কিছু কল্যাণকর শুধু তাই যাতে জীবনের সাথে যুক্ত হয়। যা কিছু ক্ষতিকর তা সবসময় প্রলুব্ধকর। ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য করার বোধ মানুষের মাঝে সজাগ থাকুক।
নিজেকে নিয়ে আপনি যতটা ভাবেন, আশেপাশের মানুষ তার চেয়ে বেশি ভাববে। খারাপ মানুষ আপনাকে দুঃখ দিয়ে যতটা সুখী হয়, নিজেদের কোন প্রাপ্তিতেও ততটা খুশি হয় না। সেজন্যই তারা নিজেদের চেয়ে পরকে নিয়ে বেশি ভাবে। তারা আপনার বিফলতায় কথা শোনাবে। অন্যদের গল্প বলে আপনার পথ রোধ করে দাঁড়াবে। অবৈধ আয়ে কে কত সম্পদ জমিয়েছে, অন্যায় ক্ষমতায় কার দাপট কত- তা শুনিয়ে শুনিয়ে আপনার মধ্যেও নেশা ধরাতে চাইবে। তাতে আপনি যদি মুগ্ধ হন তবে বরবাদের সূচনা করলেন। যেদিন থেকে কারো প্রতিযোগী হয়ে উঠলেন সেদিন থেকে সব শান্তি খোয়ালেন। স্বস্তি হারালেন।
আদর্শিকভাবে অমুকের মত সুন্দর চরিত্রের, উত্তম মানসিকতার হওয়ার জন্য চেষ্টা করা উচিত। তবে কারো মত সম্পদের পাহাড় গড়তে হবে, যেকোনো উপায়ে ক্ষমতার কেন্দ্রে যেতে হবে- এসব ন্যাক্কারজনক চিন্তা। অন্যায় পথের প্রতিযোগিতা মানুষকে পশুসুলভ চরিত্রে রূপান্তর করে। সম্পদ কম থাকুক কিন্তু সম্মান বাড়ুক। মানুষের ভালোবাসা পেতে ভালো মন-মানসিকতার পরিচয় দিতে হয়। সততা জিইয়ে রাখতে হয়। একজন ভালো মানুষ ব্যর্থ হলেও সে সম্মানিত। অন্যায়ভাবে কিংবা জোরপূর্বক অর্জন সবসময় পরিত্যাজ্য হওয়া উচিত।
একটা ভালো জীবন গড়ার চেষ্টা করা খুব জরুরি। একজন সৎ মানুষ হিসেবে নিজেকে আশ্বস্ত করা দরকারি। সরকারি সম্পত্তিও নিজের সম্পদের মত পাহারা দিয়ে রাখতে হবে। ভোগের জন্য একজন মানুষের কতখানি লাগে? মানুষ যা সঞ্চয় করে তার অধিকাংশের আড়ালে কলকাঠি নাড়ে লোভ। সম্পদের মোহ মানুষকে অন্ধ করে। মানুষকে ঠকানো, কারো অধিকার হরণ করা কিংবা কাউকে অসম্মানিত করা- এসব মানুষ লোভে ডুবে করে। যখন মানবীয় গুণাবলি হারিয়ে যায় তখন মানুষ যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।
অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের ঝোঁক মানুষকে একসময় নেশা ধরায়। তখন তার মধ্যে হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। হালাল-হারামের পার্থক্য করতে যখন ভুলে যায় তখন মানুষ কাউকে ঠকিয়ে হায়েনার মত উল্লাস করে। কাউকে আঘাত করে খুব তৃপ্ত হন। অন্যায়ের দায় শোধ করতে হবেই। ন্যায়ের ঋণ থাকবে। ব্যক্তি কিংবা রাষ্ট্র- কাউকে ঠকালে সেটা সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হবে। দুনিয়ার জীবদ্দশা শেষ কিন্তু জীবনের শেষ নয়! ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পরেই চূড়ান্ত মুক্তি। ন্যায়বিচারকের কাছে যারা আটকে যাবে, তাদের দুনিয়াতে যতকিছুই থাকুক- সে জীবন ব্যর্থতাতেই গেলো।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com