সাংবাদিক নূরে আলমের বই ‘৩৬ শে জুলাই গণঅভ্যুত্থান

প্রকাশিত : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সাংবাদিক ও গবেষক মুহাম্মদ নূরে আলমের বই ‘৩৬ শে জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ গণহত্যার বিচারে ডকুমেন্ট হিসেবে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ‘৩৬ শে জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ বই সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকের যুগ্ম সম্পাদক ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীন এ আশা প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর জনমানসে জেগেছে বৈষম্যহীন, মুক্ত, মানবিক, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে আমাদের মুক্ত করেছে, তাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলা ও দেশ পুনর্গঠনের স্বপ্ন দেখছি।

বর্ষীয়ান সাংবাদিক আবুল আসাদ বলেন, বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লব-২৪ রাজনীতির ইতিহাসে এক অলৌকিক ঘটনা। ছেলেরা স্বৈরাচারের পর্বতকে ধসিয়ে দিলো খালি হাতে। বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে দেখল জীবন দেয়ার শক্তি জীবন নেয়ার শক্তির চেয়ে অনেক অনেক বড়। অভূতপূর্ব এই বিস্ময়ের কাহিনী লিখেছেন সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরে আলম তার ‘৩৬ শে জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ বইটিতে।

বইটির লেখক মুহাম্মদ নূরে আলম বলেন, ‘আমি দেখিনি ৫২-এর ভাষা আন্দোলন! আমি দেখিনি ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান! আমি দেখিনি ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ! তবে, আমি সাংবাদিক হিসেবে সহযোদ্ধাদের সাথে করেছি ২৪-এর গণবিপ্লব। আমি দেখেছি জুলাই-আগস্টে আমার ভাই-বোনদের রক্তমাখা রাজপথ! আমি দেখেছি মিছিল স্লোগানে কাঁপানো রাজপথ, আমি দেখেছি ২৪-এর কোটা আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার ওপরে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে ফেলে রাখা আমার ভাইদের রক্তাক্ত নিথর দেহ! আমরা চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার। “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার!; কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার” যে স্লোগান দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং দেশের আপামর জনগণকে জাগিয়ে তুলেছিল। আর কাঁপিয়ে দিয়েছিল স্বৈরাচারী গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার মসনদ। তরুণ প্রজন্মের এই রুখে দাঁড়ানোর আখ্যানই হলো ৩৬শে জুলাই গণঅভ্যুত্থান।’

লেখক বলেন, ‘দুঃশাসন আড়াল করার চেষ্টা করা হলেও স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দৃশ্যমান অবকাঠামো উন্নয়নকেন্দ্রিক প্রচারণার মাধ্যমেও সরকারের চূড়ান্ত পতন ঠেকাতে পারেনি। ছাত্র-জনতার এক রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ৫ আগস্ট ২০২৪ শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

কুখ্যাত গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসানের প্রাথমিক কারণ হলো, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার গুলি বর্ষণে শতশত মানুষ হত্যা। এ সময় সহস্রাধিক মানুষ নিহত ও প্রায় ৪০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।’

লেখক বলেন, শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামল জুড়ে ছিল ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা হরণ, বিরোধীদল ও ভিন্নমতাবলম্বীদের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও পুলিশি নিপীড়ন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ঋণের নামে ব্যাংক লুণ্ঠন, সরকার ঘনিষ্ঠদের ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থপাচার, সচিবালয় থেকে বিচার বিভাগ পর্যন্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক দলীয়করণ, দ্রব্যমূল্যের ব্যাপক ঊর্ধ্বগতি, ভারতের সঙ্গে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি কারণে সৃষ্ট গভীর জন অসন্তোষ।

লেখক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান সীমাহীন ক্ষোভ থেকে দেশের সাধারণ জনগণ ছাত্রদের আন্দোলনের সমর্থনে রাস্তায় নেমে আসে। ছাত্রদের আন্দোলন ৯ দফা থেকে ১ দফায় রূপলাভ করে। সমন্বয়করা সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে। ৫ আগস্ট ২০২৪ সোমবার ভোর থেকেই শাহবাগে জমায়েত হয়ে গণভবন অভিমুখে ছাত্র-জনতা মার্চ শুরু করে। সেই বিবরণ এবং ছাত্র-জনতার মনের কথাগুলো এ বইতে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এই বইয়ের পাঁচটি অধ্যায়ে ২৪-এর গণবিপ্লবের ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। আন্দোলনকালে ইতিহাসের কুখ্যাত স্বৈরাচার গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা, তাঁর দলীয় সমর্থক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সহস্রাধিক ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে এবং প্রায় ৪০ হাজার লেঅক আহত হয়। অসংখ্য মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। প্রায় ২ হাজার ছাত্র-জনতা এক চোখ বা দুটো চোখের আলো হারিয়ে ফেলে চিরদিনের জন্য। কেউ কেউ শতাধিক রাবার বুলেট শরীরে বহন করে বেড়াচ্ছেন। এ আন্দোলনে ১৪ জন কোরআনে হাফেজসহ ৭৮ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর শহীদ হওয়ার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে এই বইটিতে।

এই বইটিতে ঘটনাগুলোর সচিত্র প্রতিবেদন এবং শহীদ ও আহতদের পরিসংখ্যান ও বীরত্বগাঁথা বর্ণনা করা হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন :