আসছে নির্বাচন আবারও উত্তপ্ত রাজনৈতিক ময়দান

প্রকাশিত : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২

আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি নানাভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে রাজনৈতিক মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে চেষ্টা শুরু করেছে। একটানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। তাই এবার দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাহিরে থাকা দল বিএনপি রাজনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে হাটাতে।

বর্তমান সময়ে প্রায়ই বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনামে হিসেবে দেখা মিলছে দেশের আলোচিত সাংসদ একেএম শামীম ওসমানকে। তিনি জাতীয় সংসদের নারায়ণগঞ্জ-৪ এর সরকার দলীয় সদস্য। একই সঙ্গে তেমনি সম্প্রতি প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পাওয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীও থাকছেন শিরোনামের শীর্ষে।

দেখা গেছে, গত শোকাহত আগস্ট মাস থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হতে বলেন, সাংসদ শামীম ওসমান। এরপর গত (২৭ আগস্ট) নারায়ণগঞ্জের ২নং রেলগেট এলাকায় বিশাল জনসভা করেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমান। সেখানে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা আলাদা আলাদা ভাবে জনসভায় যোগদান করেন।

অপর দিকে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীও সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। সর্বশেষ ৩১ আগস্ট (নাসিক) ৭নং ওয়ার্ড এলাকায় মিলাদ ও দোয়ার আয়োজনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। অন্য দিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ক্ষমতায় না থেকেও কয়েকমাস যাবত সারাদেশের মতন নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছেন।

এ দিকে সাবেক নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি নেতৃত্বে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির অঙ্গসংগঠন আবারও মাঠে থেকে রাজনৈতিকভাবে আগের চেয়ে সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে বলছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

দেখা গেছে সম্প্রতি ভোলা জেলায় বিএনপির দুই নেতা নিহত ও জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের নজিরবিহীন লোডশেডিং নিয়ে আন্দোলন করেছে সিদ্ধিরগঞ্জের বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ ২৪ আগস্ট ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ের ইউটার্নে সমাবেশ করেন তারা। এ দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন মাঠেঘাটে থাকলেও বিএনপিকে খুঁজতে হয় হারিকেন দিয়ে। এমন মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী।

কথা হয় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি বিএনপিকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং আগামীতেও করবে। কারণ তাদের এসব জ্বালাও পোড়াও রাজনৈতিক, আন্দোলন জনগণ পছন্দ করে না। ইদানীং তারা নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন ঝামেলা ও নাশকতা করে বেড়াচ্ছে। তাছাড়া মাঠে বিএনপির কয়েকজন নামলেই ক্ষমতায় যাওয়া যায় না।

তিনি আরও বলেন, আমরাও আন্দোলন করেছি ২০-২৫ হাজার লোক নিয়ে থানায় নেমেছি। আমাদের গাড়ি ভাংচুর কারা লাগেনি, পুলিশের উপর হামলাও করা লাগেনি। এখন তো আবার (বিএনপি) নতুন করে ককটেল মারা রাজনীতি শুরু করেছে, যেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এটা আবার এরা নতুন করে চালু করেছে। পুলিশের উপর ককটেল মারা, ইট মারা, পাথর মারা। আমার বিশ্বাস তারা আর কখনো এগোতে পারবে না।

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন মিয়া বলেন, বিএনপিতো আন্দোলন সংগ্রাম করে সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় যাবে এমন চিন্তাভাবনা করছে তারা। আমরাও চেষ্টা করবো প্রতিরোধ করার। আমরা নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। নির্দেশনা আসুক। এলেই আমরা মাঠে নামবো।

কথা হলে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি বলেন, এখন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জে। আমার ভাইয়ের রক্ত ঝরেছে। রক্ত ঝরেছে আমাদের ভাইয়ের অথচ আমরা মামলা খেলাম। রাজনীতির জন্য শাওন বুক পেতে গুলি খেয়ে রক্ত ঝরেছে, হত্যা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শাওনের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আগামীতে যারা রক্ত ঝরিয়েছে তাদের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না। এটা তারেক জিয়ার নির্দেশ। তারেক জিয়া বলেছে, যেহেতু রক্ত ঝরেছে সে রক্তের পরিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকবো। আবারও আমরা প্রাণ দিবো, আমরা আবারও মরবো কিন্তু পিছু পা হবো না।

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য সচিব শাহআলম হীরা বলেন, আমরা আশাবাদী যে আমরা একটা ভালো দিকে জনগণের ভোটের অধিকারের জন্য এগুচ্ছি। পাশ বা ফেল সেটা বড় কথা না। আমরা মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আন্দোলন করছি। জনগণ কাকে পাশ করাবেন কাকে ফেল করাবেন সেটা জনগণের হাতে। মূলত জনগণ ভোটটা যেন ঠিকমতো দিতে পারেন, সিলটা মারতে পারেন সে লক্ষে আমরা আন্দোলন করবো। জনগণ ভোট দিতে পারছে না।

তিনি আরও বলেন, তাদের ভোটের অধিকার নেই। এ দিকটা নিশ্চিত করতে চাই আমরা। আমাদের নেতাকর্মীরা যারা আছে তাদের একটাই কথা নিরপেক্ষ সরকার বা দায়িত্বশীল লোকের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পড়েই আমরা নির্বাচনে যাবো। এর আগে যাওয়ার ইচ্ছে আমাদের নেই। এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল হাই রাজুর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্যে একাধিকবার তাকে ফোন দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেনি।

 

আপনার মতামত লিখুন :