হজের আশ্বাসে সৌদিতে নিয়ে নির্যাতন, র‍্যাবের হাতে ধরা মূলহোতা

প্রকাশিত : ৮ আগস্ট ২০২২

বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান কনকর্ড এ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সি। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত আড়াই হাজার নারী শ্রমিক বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে দরিদ্র নারীদের টার্গেট করে ভালো বেতন ও বিনামূল্যে হজ করার প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হতো। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার পর প্রতিশ্রুতির কোনো কিছুই বাস্তবায়ন করা হতো না। বরং বিভিন্ন অবৈধ কাজে বাধ্য করা হত।

সম্প্রতি কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর পল্টন থানার সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্সে অভিযান চালিয়ে কনকর্ড এ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক আবুল হোসেন ও তাঁর সহযোগী আলেয়া বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন। অভিযানের সময় সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স থেকে বিদেশে পাঠানোর জন্য আনা তিন নারীসহ ৩১ টি পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান, দেশে মানব পাচারকারী চক্রের টার্গেটে পরিণত হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র ও সহজ-সরল মানুষ। তাঁদের লোভনীয় বেতনে চাকরিসহ সৌদি আরবে বিনামূল্যে হজ্ব পালন করার প্রলোভন দেখানো হতো। কিন্তু বিদেশে নিয়ে বিভিন্ন অবৈধ কাজে বাধ্য করাসহ নির্যাতন করা হতো।

র‍্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার আবুল হোসেনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানান র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বৈধ প্রতিষ্ঠান কনকর্ড রিক্রুটিং এজেন্সির আড়ালে নারী পাচার ও নির্যাতনের মতো অপকর্ম করে আসছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন আবুল হোসেন। তাঁর এ কাজের অন্যতম সহযোগী আলেয়া বেগমসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য দালাল রয়েছে। দালালদের মাধ্যমে তিনি মূলত সমাজের বেকার, অল্পশিক্ষিত, অসচ্ছল ও দরিদ্র পরিবারগুলোর তালাকপ্রাপ্ত ও অসহায় নারীদের মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে অধিক বেতনে চাকরি, বিমানে চড়ার অভিজ্ঞতা, রাজকীয় থাকা খাওয়া সুবিধা, স্মার্টফোন নেওয়া এবং সৌদিতে হজ্ব করানোর মতো ধর্মভিত্তিক লোভনীয় কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাঠাত। বিদেশে যাওয়ার পর প্রথমে তারা ভুক্তভোগীদের জানালাবিহীন কক্ষে আটকে রাখত এবং পরবর্তীতে ২ থেকে ৩ দিন পর বিভিন্ন ব্যক্তির বাসায় পাঠাত। বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর তাদের দ্বারা সব ধরনের কাজ করানো হতো। কিন্তু ঠিক মতো খেতে দেওয়া হতো না। অকারণে বেধরক মারধরের মাধ্যমে অমানবিক নির্যাতন করা হতো। এমন কি বিদ্যুতের শক দেওয়া হতো।

এই চক্রের অন্যতম দালাল হিসেবে কাজ করা আলেয়া আগে পল্টন এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক সংগ্রহের কাজ করেছেন। ২০২১ সাল থেকে আবুল হোসেনের কনকর্ড রিক্রুটিং এজেন্সিতে শ্রমিক সংগ্রহের কাজ শুরু করেন তিনি। বিদেশে পাঠানোর আগে এসব শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ও বিভিন্ন সাদা কাগজে সই নেওয়াসহ আরও নানা ধরনের কাজ করতেন আলেয়া।

আপনার মতামত লিখুন :