মজুদ পর্যাপ্ত, অতিরিক্ত পণ্য কেনার দরকার নেই জনগণের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২২ মার্চ ২০২০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্যের মজুত রয়েছে। অযথা আতঙ্কিত হয়ে বেশি করে পণ্য কিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো গর্হিত কাজ। সবাইকে এ ধরনের অপতৎপরতা থেকে বিরত থাকতে হবে। গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা-১০ আসনে জাতীয় সংসদ উপনির্বাচনে ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্র ভোট দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত করতে না পারে, সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং জনগণকে নজরদারি বাড়াতে হবে। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি যে আতঙ্কিত হয়ে কিছু লোক অতিরিক্ত মাত্রায় খাদ্যদ্রব্য কিনে সংরক্ষণ করছে। তবে আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে আমাদের কোনো খাদ্য সমস্যা নেই। আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। তাই আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত খাদ্যদ্রব্য কেনার দরকার নেই। তিনি বলেন, তিনি ইতিমধ্যে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী, অর্থসচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে আগামী এক বছরের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য কেনার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। সুতরাং এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি গুদামগুলোয় সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন গম ছাড়াও ১৭ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। এর পাশাপাশি, বেসরকারি রাইস মিলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশস্য রয়েছে। তাই, আমি সকলকে যতটুকু প্রয়োজন, ঠিক ততটুকু খাদ্যদ্রব্য কিনতে অনুরোধ জানাই। শেখ হাসিনা বলেন, ভোক্তারা অতিরিক্ত নিত্যপণ্য কিনলে বাজারে চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তিনি বলেন, যাদের পর্যাপ্ত অর্থ আছে, তারা একসঙ্গে অনেক পণ্য কিনতে পারে। কিন্তু সাধারণ ও সীমিত আয়ের মানুষদের একসঙ্গে এত পণ্য কেনার মতো সামর্থ্য নেই। কাজেই অন্যের কষ্ট বাড়ানোর কোনো অধিকার কারও নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি টেলিভিশনে দেখলাম যে একজন বলছেন, তিনি ৩০ কেজি লবণ কিনেছেন। আমি জানি না তিনি এই লবণ কত দিনে খাবেন। এর আগে অনেকেই বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ কিনেছিল। তখন এর দাম বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু পেঁয়াজ পচনশীল হওয়ায় সেগুলো তাদের আবর্জনার স্তূপে ফেলতে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কেউ করোনার প্রাদুর্ভাবের অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুত করতে না পারে। অতিরিক্ত পণ্য কিনে বাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা ঠিক হবে না। আমরা চাই সবাই স্বাভাবিক জীবন যাপন করুক। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমাদের মাটি আছে, আমাদের সব আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত রাখতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চীনে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা তখন চীন থেকে ৩১৫ জন শিক্ষার্থীকে দেশে ফিরিয়ে আনি এবং কোয়ারেন্টাইনে ১৪ দিন রাখার পর তাদের ছেড়ে দেই। বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে বিদেশ থেকে আগতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,যদি কাউকে এই ভাইরাসে সংক্রমণ বলে সন্দেহ করা হয়, তবে তাকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হচ্ছে। যারা বিদেশ থেকে দেশে ফিরছেন, তাদের পরিবারের সদস্য ও অন্যদের নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই অন্তত ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও আইইডিসিআর সতর্ক আছে এবং দেশে প্রাণঘাতী ভাইরাসটিকে নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এই সব পদক্ষেপ নিচ্ছি, যাতে মানুষ সতর্ক থাকে এবং এ ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি যে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভালো। সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগীদের জন্য বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতাল করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চিকিৎসক ও নার্সসহ হাসপাতালগুলোতে কর্মরত অন্যান্যদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করেছি। আমরা চিকিৎসক ও নার্সদের মাস্ক ও পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুয়েপমেন্ট (পিপিই) আমদানি ও তৈরি করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার টেলিভিশন, বেতার ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রাণঘাতী ভাইরাস সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করতে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি আশা করি দেশবাসী সরকারের নির্দেশনা মেনে চলবেন। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার জনগণকে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে এক স্থানে কয়েকজনের সমাগমকে নিষিদ্ধ করেছে। তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনেক অনুষ্ঠান বাতিল করেছি এবং এর মধ্য দিয়ে আপনারা বুঝতেই পারছেন যে আমরা জনগণের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের প্রতি কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি।

আপনার মতামত লিখুন :