জনস্বাস্থ্যের হুমকি প্রতিরোধে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত : ১৬ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলার জন্য সম্মিলিত দক্ষতা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সার্ক দেশগুলোর মধ্যে সহযোগীতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে, দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্যের জন্য যেকোনো হুমকি মোকাবিলা ও প্রতিরোধ করার জন্য একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর ইউএনবি’র। রবিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সার্কভুক্ত দেশগুলোর একটি ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে এ প্রস্তাব দেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে যেকোনো জনস্বাস্থ্য হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও লড়াই করার জন্য একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা সবাই যদি সদয়ভাবে একমত হন, তবে বাংলাদেশ এই জাতীয় সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে খুশি হবে।’ বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষিতে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য একটি যৌথ কৌশল গ্রহণে সার্কভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনার উদ্যোগ নেন।

নরেন্দ্র মোদি এবং শেখ হাসিনা ছাড়াও, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি, আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী ড. জাফর মির্জা নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধি হয়ে এ ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলার জন্য সার্কভুক্ত সব দেশকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে এবং এ বিষয়ে একে অন্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে।

‘সম্মিলিত ক্ষমতা, দক্ষতা এবং উৎস ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের সকলকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে,’ যোগ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী আরও প্রস্তাব দেন, ‘এ সংলাপ অব্যাহত রাখতে সার্কভুক্ত দেশগুলোর স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও সহযোগিতার সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য এ ধরনের ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিতে পারেন। তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্যের এই হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সার্ককে একটি শক্তিশালী কৌশল গ্রহণ করতে হবে।

কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে কঠোর নজরদারি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সফলভাবে করোনাভাইরাসের প্রবেশ প্রতিরোধ করেছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত বিদেশ ফেরত তিনজন বাংলাদেশি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং ইতিমধ্যেই তারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এছাড়া ইউরোপ থেকে আসা নতুন আরও দুই করোনা আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। ‘স্থানীয়ভাবে আমাদের দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়নি,’ যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল মন্ত্রণালয়ের সকল স্তর থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়ার জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সম্ভাব্য সকল মিডিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বত্র ব্যাপক সচেতনামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ‘আমার দলের সকল স্তরের কর্মীরা জনসচেতনতা বাড়াতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে,’ বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালসহ নবনির্মিত চারটি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া কোভিড-১৯ রোগীদের বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য রাজশাহীতেও একটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে।’

বর্তমান বিশ্বে সকল দেশই পরস্পরের সাথে সংযুক্ত রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্কভুক্ত দেশগুলোকে বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সমস্যার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। এসময় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনার উদ্যোগ নেয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আপনার মতামত লিখুন :