ফতুল্লার মানুষের ধূলায় জনজীবন কবলিত!

প্রকাশিত : ১৫ মার্চ ২০২০

নিজস্ব সংবাদদাতা :  দেশের বৃহৎ শিল্পাঞ্চল নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন শাসনগাঁও বিসিক নগরীতে অবস্থিত। অসংখ্য গার্মেন্টস ও মিল-ফ্যাক্টরীর ফলে দেশের প্রতিটি অঞ্চল থেকে আসা লাখো মানুষের অবাসস্থলে পরিনত হয়েছে ফতুল্লা। প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জ। ঢাকার পাশর্^বর্তী গুরুত্বপূর্ন এই জেলার গুরুত্ব আরো বাড়িয়েছে সদর উপজেলার ফতুল্লা থানা এলাকা। কিন্তু শতব্যস্ত এই ফতুল্লাবাসীর স্বাভাবিক চলাচলে চরম প্রতিবন্ধকতা তৈরী করেছে মাত্রাতিরিক্ত ধুলা ! ধুলায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ফতুল্লা বাসীর জীবন-যাপন।

শনিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ (ডি-এন) পুরাতন সড়কের পাশে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী ফতুল্লার দাপা, যমুনা ডিপো, আলীগঞ্জ, পাগলা ও আশপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি বালুর ঘাট রয়েছে। এসব বালুর ঘাটের ফলে ধুলোর সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও ফতুল্লার পোষ্ট অফিস সংলগ্ন বালুর ঘাটের সামনে ডিএনডি প্রকল্পের কালভার্ট স্থাপন করেছে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী। কালভার্ট নির্মান কাজে রাস্তা খনন করায় সেখানকার পরিস্থিতি আরো বেগতিক। রাস্তা ও আশপাশে জমে রয়েছে ধুলো বালির স্তুপ। তা বাতাসে মিশে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়ঙ্কর বায়ু দুষন। আশপাশের দোকানপাট থেকে শুরু করে বাসা-বাড়ি, সব কিছুতেই ধুলোবালি মিশে একাকার। কেবল পোষ্ট অফিস নয়, এমন পরিস্থিতি ফতুল্লার গোটা ডিএন সড়ক জুড়েই।

বিশেষ করে রিক্সায়, মটর সাইকেল বা যাত্রীবাহী যান চলাচলের সময় ধুলোমিশ্রিত এই দুষিত বায়ু ঢুকে পড়ছে মানব দেহে। এতে করে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন পথচারী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, নির্মাণ সামগ্রীবাহি ট্রাকসহ অসংখ্য যাত্রীদের যাতায়াত রয়েছে এই সড়কে। ঢাকার সাথে সরাসরি সংযোগের এই সড়কটিতে ফতুল্লার বালুর ঘাটগুলোর অসংখ্য ট্রাক চলাচল করে থাকে। এসব খোলা ট্রাকে মালামাল পরিবহনের সময় কোনো ঢাকনা দেওয়া হয় না। ট্রাকের ফাঁকফোকর দিয়ে সড়কে বালুসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী পড়ছে প্রতিনিয়তই। মালামাল খালাসের পর পানি না ছিটিয়েই চলে যায় ট্রাকগুলো। তাই ট্রাকে লেগে থাকা ধুলাবালি গড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়। আবার সড়কে পরে থাকা এসব বালু বা নির্মান সামগ্রী বিভিন্ন গাড়ির চাঁকায় পৃষ্ট হয়ে ধুলোয় পরিনত হচ্ছে। তা বাতাসে মিশে ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে বায়ু দুষন।

এছাড়াও কন্সট্রাকশন নির্মাণ কাজের সময় ধুলো নিবারনে পানি ব্যবহার করে না নির্মান প্রতিষ্ঠানগুলো। এর ফলেও ধুলো সৃষ্টির মাধ্যমে বায়ু দুষিত হচ্ছে।

এই দুষিত বায়ুর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে ফতুল্লা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এসব ধুলিকণা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। প্রতি মূহুর্তে শ^াস-প্রশ^াসের সাথে এগুলো মানুষের শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করছে। এতে ফুসফুসে সমস্যা তৈরি হয়। হাঁপানি রোগিদের হাঁপানি বাড়িয়ে তোলে। ব্রংকাইটিস হতে পারে। চোখে ও নাকেও সমস্যা দেখা দেয়।’

রোববার দুপুরে ফতুল্লা পোষ্ট অফিস রোডে কথা হয় মোঃ ইয়ামিন , মহিবুল ,সামাদ নামের যুবকের সাথে। তারা বিরক্ত প্রকাশ করে তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকেই এখানে ধুলোবালির সাথে আমরা পরিচিত। বৃষ্টি না হলে তীব্র ধুলো আর বৃষ্টি হলে কাঁদার ভোগান্তি, এসব নিয়েই আছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘দেশে করোনার উদ্ভব ঘটলেও আমরা বিশ^াস করি, তা সাময়ীক সময়ের জন্য। কিন্তু আমাদের এই ধুলোর বিষয়টা কিন্তু সাময়ীক নয়। তাই আমার মনে হয়, এটা করোনার চেয়ে বড় ফ্যাক্টর। আমরা এর থেকে নিস্তার চাই। সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নজর দিতে হবে।’ এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ সাঈদ আনোয়ার বলেন, ‘সড়কে ধূলোবালির জন্য বায়ু দূষন হলে এর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের করনীয় কিছু নেই।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের এড়িয়ায় কোন নির্মান কাজ হলে তাদের উচিৎ পানি ছিটিয়ে নেয়া। ধূলো নিস্কাশনের জন্য সিটি করপোরেশনের পানি ছেটানো উচিৎ। তদরুপ সিটির বাইরে হলে এর দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা জনপ্রতিনিধিদেরকে নিতে হবে। এখানে সরকারী কর্মকর্তাদের কিছু করনীয় নেই। তবে, নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের উচিৎ পানি ছিটিয়ে কাজ করা।’

এ বিষয়ে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খন্দকার লূৎফর রহমান স্বপন বলেন, ফতুল্লার যমুনা ডিপো থেকে শুরু করে পাগলা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বালুর ঘাট রয়েছে। দৈনিক হাজারো বালুবাহি ট্রাক এই ঘাটগুলো থেকে বালু বহন করছে। আর ট্রাক থেকে সড়কে বালু পরে তা ধুলোয় পরিনত হচ্ছে। তাই ধুলোমুক্ত হতে হলে আগে বালুর ঘাট গুলো এখান থেকে সরিয়ে নিতে হবে। তা না হলে আমি কেন, গোটা সরকারের পক্ষেও ফতুল্লাকে ধুলামুক্ত করাম্ভব নয়। তাই প্রশাসনের উচিত এসব বালুর ঘাটের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।

তিনি আরো বলেন, ‘ঘাট মালিকরা ব্যবস্থা না নিলে আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা প্রত্যেকেই এর ভুক্তভুগি। ধুলোয় ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করেছে।  রোগ বালাই হচ্ছে। এর থেকে পরিত্রান দরকার।

আপনার মতামত লিখুন :