‘সমাজকল্যান’ কার্যালয়ে তালা টাঙ্গানো হয়েছে আ’লীগের সাইনবোর্ড

প্রকাশিত : ১২ আগস্ট ২০২১

দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় বহরমপুর ইউনিয়নের আদমপুর বাজারে ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন ‘সমাজ কল্যাণ’ নামের একটি সামাজিক সংগঠনের কার্যালয় দখল হয়ে গেছে। ইউপি নির্বাচণে পরাজিত সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো, আনোয়ার হোসেন মৃধা কার্যালয়টি তালাবদ্ধ করে দলীয় সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কার্যালয়টি দখলমুক্ত করতে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান রোববার দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত ভাবে আবেদন করেছেন।

আবেদনে বলা হয়, ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯ ওয়ার্ডের জনগনকে সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে ১৯৮৯ সালে স্থানীয় ১৪ জন ব্যক্তি দানপত্র দলিল মূলে ৬ শতাংশ জমি দান করে। পরবর্তীতে এলজিইডির অর্থায়নে একটি টিনসেট ভবন নির্মান করা হয় সেখানে। সেই থেকে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগন ওই কার্যালয়ে ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের জনগনকে সেবা দিয়ে আসছে। বিগত দিনেও সমাজকল্যাণ কার্যালয়ের নামে ওই ভবনের অনূকুলে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছিল, গত অর্থবছরে সংস্কারের জন্য দুই লক্ষ টাকা বরাদ্দ পায় সমাজ কল্যান কার্যালয়টি।

এদিকে ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন মৃধা দলীয় সমর্থন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে ইউপি নির্বাচনে অংশ নেয়। কিন্তু তিনি পরাজিত হওয়ার পরেই স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে সমাজকল্যাণ কার্যালয়ে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে কার্যালয়টি তালাবদ্ধ করে রাখে। এই অবস্থায় ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের উপকারভোগীরা সেবাপেতে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় কার্যালয়টি দখলমুক্ত করে তিনটি ওয়ার্ডের জনগনের সেবা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে আবেদন জানিয়েছেন তিনি ।

বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান সোহাগ জানান, তৎকালীন সময়ে ইউপি কার্যালয় থেকে ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ড দুরবর্তী হওয়ায় ওই ওয়ার্ডগুলোর জনগন ইউপি কার্যালয়ের সেবা পেয়ে আট কিলোমিটার গ্রামীন পথ ধরে হেটে অথবা নৌকায় যেত হত। এ কারনে জনগনের সেবা পৌছে দিতে ইউপি কার্যালয় থেকে উদ্যোগ নিয়ে আদমপুর বাজারে একটি কার্যালয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থানীয় ১৪ জন ব্যাক্তি বহরমপুর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ের পক্ষে চেয়ারম্যানের অনুকূলে দানপত্র দলিল মূলে ৬ শতাংশ জমি দান করেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকেই কার্যালয়ের নামকরণ করা হয় সমাজ কল্যাণ কার্যালয় । সেই থেকে ইউপি চেয়ারম্যান যিনিই ছিলেন, তিনি ওই কার্যালয়ে থেকে তিনটি ওয়ার্ডের জনগনের সেবা দিয়ে আসছিল।

এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন মৃধা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে বলেন, ওই কার্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ওই কার্যালয়ে দলীয় কর্মসূচিসহ দলীয় নির্বাচনী প্রচারনার কাজেও কার্যালয়টি ব্যবহার হয়ে আসছিল। এখনও দলীয় দলীয় কার্যালয় হিসেবেই রয়েছে বলে শুনেছি। তবে তালাবদ্ধ কিংবা দলীয় সাইবোর্ড টাঙ্গানোর ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতেই নির্বাচিত হয়েই বর্তমানর চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ তুলছেন।

এদিকে দশমিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ লিটন ওই কার্যালয়টি তাদের দলীয় কার্যালয় বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিগত দিনে ওখানে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। আমরা জানি কার্যালয়টি দলীয়। তবে দশমিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল আজিজ মিয়া বলেন, আসলে আমার জানা মতে কার্যালয়টি ইউপি কার্যালয়ের অধীনে। উপজেলা পরিষদ থেকেও কার্যালয়ের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এখন যদি কেউ দলীয় কার্যালয় দাবি করে তা তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। এর দায়ভারও তাঁকেই নিতে হবে। বিতর্কিত কোন কাজই দল সমর্থন করবে না বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দশমিনা উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল আমিন বলেন, সমাজ কল্যান কার্যালয় দখলের ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

আপনার মতামত লিখুন :