মাদকে কালো থাবায় বেকায়দায় পড়েছে ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকল

প্রকাশিত : ১২ মার্চ ২০২০

তারেক জাহিদ, ঝিনাইদহ: মাদকে কালো থাবায় বেকায়দায় পড়েছে মোবারকগঞ্জ চিনিকল। গত কয়েক বছরের একাধিক শ্রমিক কর্মচারী এই মাদকের কারণে মারা গেছে। সর্বশেষ মারা গেছে কবির হোসেন নামে মিলের এক ট্রাক্টর হেলপার। বুধবার রাজশাহী বনভোজনে গিয়ে বাসের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় সে। এদিন যাওয়ার পথে কবির সহ তার সহযোগীরা অনেকে মদ পান করে বলে অন্য সহযোগীদের কাছ থেকে জানা গেছে। কবির হোসেন কালীগঞ্জ পৌরসভাধীন বাবরা গ্রামের মৃত কামাল হোসেনের ছেলে। তার বাবাও মোবরকগঞ্জ চিনিকলের একজন কর্মচারী ছিলেন। কবিরের মৃত্যুর পর উঠে আসে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অবস্থিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম এ ভারি শিল্পটির অনেকেই মাদক ও জোয়ার সাথে জড়িত। বিশেষ করে যারা মিলের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব দেন। ফলে বিষয়টি নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বলে জানিয়েছেন মিলটির শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম রসুল।

তার দাবি, আমরা আর চাই না মাদকের কারণে মিলের কোন শ্রমিক অকালে ঝরে যাক। পথে বসুক তার পরিবার। তাই আজকের পর থেকে মিলের কোন কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারী মাদকের সাথে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ঘোষণা দেন। এর আগে মারা যায় মোচিক শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম নবি ও সেলিম কাজি। কথিত আছে রবিউল ইসলাম নবি ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে মাদক সেবন করার পর হৃদরোগে আক্রান্ত মারা যান। এ ছাড়া জোয়া খেলে সর্বস্ব হারিয়ে স্ট্রোক করেন মিলটির সাবেক সভাপতি সেলিম কাজি। বুধবার সন্ধ্যায় মৃত কবির হোসেনের জানাযার অনুষ্ঠানে মোবারকগঞ্জ চিনিকলের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম রসুল মাদক নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, এই মাদকের কারণে একের পর এক মিলের শ্রমিককে হারাতে হচ্ছে। মাদকের কারণে আর যে কোন শ্রমিককে হারাতে না হয় সেজন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। এ ছাড়া তিনি ঘোষণা দেন এরপর থেকে মিলের কেউ যদি মাদক সেবন করে তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের একাধিক শ্রমিক কর্মচারী জানান, ঘটনার দিন মিলের পরিবহন শাখার শ্রমিক-কর্মচারীরা তিনটি বাস নিয়ে বনভোজনে যায় রাজশাহী।

বনভোজনে যাওয়া এ দলের নেতৃত্বে ছিলেন মিলের সহ-সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফি, দপ্তর সম্পাদক সাহেব আলী ও পরিবহন শাখার মেম্বার নজরুল ইসলাম। যাওয়ার পথে কবির মারা গেলে তাকে একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তার সহযোগীরা রাজশাহী বনভোজন শেষ করে রাতে বাড়ি ফেরে। তার আগেই একদিন বিকালে কবিরের মরদেহ দাফন শেষ করে পরিবারের লোকজন। পিকনিকে যাওয়া অনেকেই জানিয়েছে এক সহযোগীর মরদেহ বাড়িয়ে পাঠিয়ে অন্য সহযোগীরা রাজশাহী আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে। কিভাবে এত নিষ্ঠুররতার পরিচয় দিল যে, সহযোগি মারা গেল আর তরা লাশ রেখে পিকনিক করে খেল। এটা কোন মানবতা ও কেমন সহযোগি বন্ধু তারা। এ সময় নেতৃত্ব পর্যায়ের কয়েকজন আবারো মদ পান করে। এ সংবাদ জানাজানি হওয়ার পর মিলটির শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা মাদকাসক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি করেছে। মিলের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম রসুল জানান, আমাাদের স্থানী সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। ঐতিহ্যবাহী মিলের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে আজ থেকে মিলের কেউ মাদকের সাথে জড়িত হলে ও প্রমান হলেই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুন :