বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব শিশু কিডনী দিবস ২০২০ উদযাপিত

প্রকাশিত : ১২ মার্চ ২০২০

কিডনী রোগ প্রতিরোধ ও যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ
বাংলাদেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিপুল অগ্রগতি হয়েছে: অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ “সুস্থ কিডনী, সর্বত্র সবার জন্যÑরোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধ (করফহবু ঐবধষঃয ভড়ৎ ঊাবৎুড়হব ঊাবৎুযিবৎব: ঋৎড়স চৎবাবহঃরড়হ ঃড় উবঃবপঃরড়হ ধহফ ঊয়ঁরঃধনষব অপপবংং ঃড় ঈধৎব)” প্রতিপাদ্য নিয়ে আলোচনা সভা ও গোলটেবিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব কিডনী দিবস ২০২০ উদযাপিত হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ এই দিবসটি উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার ১২ মার্চ ২০২০ইং তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ব্লকের শহীদ ডা. মিলন হলে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনী (নেফ্রোলজি) বিভাগের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ রেনাল এ্যাসোসিয়েশন, কিডনী ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ ও কিডনী এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)-এর সহায়তায় একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিএনএসবি)-এর উদ্যোগে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিল্টন হলে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ‘শিশু কিডনী রোগের গুরুত্ব ব্যাপ্তি, চিকিৎসা ও প্রতিকার এবং শিশু কিডনী রোগের সীমাবদ্ধতা ও উত্তরণের উপায়” শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। শহীদ ডা. মিলন হলে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া স্যার।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নিবার্হী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ ও বাংলাদেশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলের প্রাক্তন দলনেতা জনাব গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও বাংলাদেশ রেনাল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কিডনী রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম। আরো বক্তব্য প্রদান করেন কিডনী ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ, কিডনী এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস) এর সভাপতি অধ্যাপক এম এ সামাদ, বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. কেবিএম হাদিউজ্জামান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আছিয়া খানম। আলোচনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ রেনাল এ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক ৮ জন কিডনী বিশেষজ্ঞ গুণী চিকিৎসককে আজীবন সম্মাননা স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।

অপরদিকে ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া স্যার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসেন, কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক। সভাপতিত্ব করেন পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিএনএসবি)-এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মাঈনউদ্দিন। আরো বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ও নবজাতক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা, অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু কিডনী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রণজিত রঞ্জণ রায়, পিএনএসবি-এর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন খান প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া বলেন, কিডনী রোগের ক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে অবশ্যই প্রতিরোধের দিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে এবং নীতি নির্ধারকদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। একই সাথে কিডনী রোগের যাথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কিডনী রোগ বিশেষজ্ঞ তৈরির উপরও জোর দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, দ্রুত কিডনী রোগ সনাক্তকরণ ও সঠিক সমেয় চিকিৎসা নিলে ক্রনিক কিডনী রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। এই রোগটি মোকাবিলায় সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নিবার্হী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিপুল অগ্রগতি সাধিত হয়েছে এবং দিন দিন আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসা পেশা অত্যন্ত কঠিন ও মহত পেশা উল্লেখ করে তিনি গুণগত মানসম্পন্ন দক্ষ চিকিৎসক তৈরির উপর গুরুত্বারোপ করেন। মানুষকে নৈতিকভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। কিডনী রোগ প্রতিরোধের জন্য তিনি জনসচেতনতা সৃষ্টি কঠিন বিষয় উল্লেখ করে বলেন, কোনো একটি বিষয়ে সমগ্র জাতিকে সচেতন করতে অনেক বছর সময় লেগে যায়।

আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও বাংলাদেশ রেনাল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কিডনী রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, অতি সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় এবং মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সক্রিয় উদ্যোগে একনেক মিটিংয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় ১০ বেড এবং মেডিক্যাল কলেজে ৫০ বেড বিশিষ্ট ডায়ালাইসিস ইউনিট প্রকল্প পাশ হয়। এরফলে অনেক কিডনী রোগী উপকৃত হবেন। এ প্রকল্পকে সফল করতে বাংলাদেশ রেনাল এ্যাসোসিয়েশন বদ্ধপরিকর। তিনি তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনী রোগের চিকিৎসার বিভিন্ন অগ্রগতি ও সাফল্যের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি হোম ডায়ালাইসিস নামে পরিচিত সিএপিডি বা ক্যাপড (ঈঅচউ) বা পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের প্রসার ঘটানোর অতি প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন।

গোলটেবিল বৈঠকে পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিএনএসবি)-এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মাঈনউদ্দিন জানান, সারা বিশ্বে প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ কিডনী রোগে আক্রান্ত। শতকরা ১০ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ক্রনিক কিডনী ডিজিজ-এ ভুগছেন। বাংলাদেশে প্রায় ৪-৫ মিলিয়ন শিশু কোন না কোন কিডনী রোগ-এ আক্রান্ত। এদেশে নতুনভাবে কিডনী রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বছরে প্রায় ৩০,০০০। আর ইন্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ-এ আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৪৭ ভাগ শিশু রোগীর ডায়ালাইসিস বা কিডনী প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হয়। কিন্তু নানাবিধ সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামোগত প্রতিকুলতার কারণে মাত্র ১০ শতাংশ রোগী এই ধরণের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ছবি: মোঃ আরিফ খান। নিউজ: প্রশান্ত মজুমদার

 

আপনার মতামত লিখুন :