আমতলীতে খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষের মানবেতর জীবনযাপন!

প্রকাশিত : ১৩ জুলাই ২০২১

মাইনুল ইসলাম রাজু, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবে বরগুনার আমতলী উপজেলায় ৫১ হাজার ৪৪৬ জন হতদরিদ্র খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সরকারীভাবে এদের সাহায্যের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী খেটে খাওয়া শ্রমজীবিরা।

জানাগেছে, মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার গত ১ জুলাই থেকে বিধি নিষেধ আরোপ ও কঠোর লকডাউন ঘোষনা করেছে। ওই বিধি নিষেধে মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কঠোর লকডাউন মানতে গিয়ে উপজেলার দরিদ্র, হতদরিদ্র, রিক্সাচালক, ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষ কর্মহীন হয়ে পরে খেয়ে না খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

পরিসংখ্যান অফিস সুত্রে জানাগেছে, উপজেলায় মোট জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৫ হাজার ২১০ জন। এরমধ্যে দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে উপজেলার ২৫.০৭% মানুষ। ওই হিসেবে উপজেলায় ৫১ হাজার ৪৪৬ জন মানুষ হতদরিদ্র খেটে খাওয়া শ্রমজীবি। তারা দিন আনে দিন খায়। কাজ না জুটলে তাদের খাবারও জুটে না। লকডাউনের কারনে এদের অধিকাংশ আয় রোজগার হীন ও কর্মহীন হয়ে পরেছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কঠোরভাবেই লকডাউন পালনে উপজেলা প্রশাসন, নৌ, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা মাঠে কাজ করছে। সড়কে চলতে না কোন যানবাহন। তারপরেও প্রশাসনের নজর এগিয়ে পরিবার পরিজনের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দেয়ার জন্য শহর ও গ্রাম- গঞ্জের অলিগলিতে কিছু ব্যাটারীচালিত রিকসা ও ইজিবাইক চলাচল করছে।

ব্যাটারী চালিত রিক্সা চালক আলম, জাফর ও রফিক বলেন, লকডাউনের শুরুতে কয়েক দিন আমরা রিক্সা চালাইনি। আগে যা আয় রোজগার করেছি তা দিয়ে এতদিন বউ পোলাপান লইয়া খেয়ে পড়ে বাড়ীতেই অবস্থান করেছি। এখন সংসারে টানাপোড়েন শুরু হওয়ায় খেয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। তাই বাধ্যহয়ে আমরা লকডাউনের মধ্যে রিক্সা নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছি। গোপনে প্রশাসনে চোঁখকে ফাঁকি দিয়ে শহরের অলিগলিতে এখন রিক্সা চালিয়ে যা রোজগার করি তা দিয়ে কোনমতে সংসার চালাই।

শ্রমজীবি দিন মজুর আঃ গনি, বাবুল, হারুন ফকির বলেন, কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা কোন কাজ পাচ্ছি না। ঘরে অলস সময় কাটাচ্ছি। রাস্তার বের হলেই প্রশাসন ধরে জরিমানা করে। এখন বাড়ীতে বসে খেয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। দ্রæত সরকারীভাবে আমাদের মত শ্রমজীবিদের মাঝে সরকারীভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি।

পরিবহন শ্রমিক মজিবর ও শানু মিয়া বলেন, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় গাড়ি নিয়ে বের হতে পারছিনা। আয় রোজগার বন্ধ। সরকারীভাবেও কোন প্রকার সহায়তা পাইনি। এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে কিভাবে চলবো তা ভেবে পাচ্ছিনা। আমার মত অনেকেই তাদের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

যান্ত্রিকযান ত্রি-হুইলার মাহেন্দ্রা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ জহিরুল ইসলাম খোকন মৃধা বলেন, কঠোর লকডাউনের কারনে আমতলীর অভ্যান্তরিন রুটে মাহেন্দ্র চলাচল বন্ধ থাকায় এর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় ৬০০টি শ্রমিক পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ সকল পরিবারের মাঝে সরকারীভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি।

উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার মোঃ রবিউল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, উপজেলায় ২৫.০৭% মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। মহামারি করোনাভাইরাস ও কঠোর লকডাউনের কারনে ওই মানুষগুলো এখন আয় রোজগারহীন ও কর্মহীন হয়ে পরেছে।

উপজেলা নির্বাহী মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, উপজেলার খেটে খাওয়া হতদরিদ্র শ্রমজীবি ও অসহায় মানুষকে সহায়তায় বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া মাত্রই তাদের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুন :