জুড়ীতে স্কুল থেকে বাড়ী আসার পথে বেপরোয়া গতিতে ঘোর অন্ধকারে জীবন স্কুল ছাত্রী

প্রকাশিত : ৬ জুন ২০২১

মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার: জুড়ী উপজেলার বেলাগাঁও গ্রামের অসহায় হতদরিদ্র রিক্সা চালক মোঃ আবেদ মিয়ার মেয়ে আনিকা আক্তার রাইসা (১০) স্কুল থেকে বাড়ী আসার পথে ড্রাইভারের বেপরোয়া গাড়ীর গতিতে জীবন এখন তার ঘোর অন্ধকারে। ডান পায়ের হাটুর উপর কাটা পা নিয়ে বীভৎস জীবন যাপন করছে। জীবনের ভবিষ্যৎ যেন ঘোর অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে গ্রামের রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে পূর্বদিক থেকে আসা মিনি ট্রাক পরপর ২বার পায়ের উপর দিয়ে গাড়ী চললে তার জীবন মৃত্যুঝুঁকিতে পরিণত হয়।

দীর্ঘ ৩ মাস চিকিৎসায় বাঁচানো গেল না পা, কেটে ফেলা হলো পায়ের হাঁটুর উপর পর্যন্ত। বর্তমানে মেয়েটির জীবন চার দেয়ালে আবদ্ধ। প্রয়োজনীয় জরুরি শৌচাগার করাচ্ছেন মা-বাবা। জানা গেছে- মেয়ের বাবা হতদরিদ্র রিক্সা চালক মোঃ আবেদ মিয়া একসময় রিক্সা চালিয়ে আহার যোগালেও এখন কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছেন। মা বাড়ী বাড়ী গিয়ে কাজ করে আহার যোগাচ্ছেন পরিবারের। টানাপোড়ন এই পরিবারের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আনিকা ছোট । ছোট্ট একটি ক্ষুদ্র করে কোনমতে বসবাস করছেন তারা। কিন্তু একটি এক্সিডেন্টে তাদের পরিবারকে করে দিয়েছে নিঃস্ব । শেষ সম্বল ভিটেমাটি বিক্রি করে চিকিৎসা করতে গিয়ে আজ ঋণের বোঁঝা নিয়ে ঘুরছেন দিকবিদিক।

ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই গাড়ী চালক নজরুল ইসলাম (৩০) বিদেশে পাড়ী জমান। গাড়ির মালিক আমির হোসেন (২৫) ফারুক হোসেন (২৫) সহ প্রভাবশালী এ পরিবার তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা হাত না বাড়িয়ে সালিশ বৈঠকের ডাক দিলে উল্টো প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। এ অভিযোগে ভুক্তভোগীর পিতা মোঃ আবিদ মিয়া বিগত ১০/০৮/২০১৯ সালে একটি মামলা দায়ের করেন। জুড়ী থানা মামলা নং-৩,তা: ৬/১১/১৯ ইং,জি আর মামলা নং ১১৩/১৯,ধারা: ৩৩৮ (কি) দঃবিঃ। মামলা সুত্রে জানা যায়- গত ১৬/০৪/১৯ ইং তারিখে বেলাগাঁও প্রাইমারি স্কুল থেকে বাড়ী আসার পথে পূর্ব দিক থেকে আসা মিনিট্রাক যার নাম্বার (আর-৮৯৬৬),আনিকা আক্তার রাইসা কে সজোরে ধাক্কা মেরে তার ডান পায়ের হাঁটুর উপর দিয়ে গাড়ীর চাকা চলে যায়। এতে হাড্ডি সম্পূর্ণ ভাঙ্গিয়া চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। কয়েকজন গাড়ীর গতিরোধ করলে গাড়ীর চালক ব্যাক গিয়ারে পিছনের দিকে নিলে আবারও গাড়ির চাকা ডান পায়ের নিচের চালালে হাড্ডি ভেঙ্গে যায়।

এমতাবস্থায় গাড়ী চালক নজরুল ইসলাম (৩০),পিতা মৃত আজেবর মিয়া,সাকিন মানিকসিংহ ও গাড়ির মালিক আমির হোসেন (২৫), পিতা মকবুল আলী,সাকিন বেলাঁগাও, ফারুক আহমদ, পিতা মকবুল আলী,সাকিন বেলাঁগাও,সর্ব ডাকঘর ও থানা: জুড়ী, জেলা: মৌলভীবাজার অবস্থা বেগতিক দেখে আপোষ মিমাংসার কথা বলে কৌশলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। গাড়ীর চালকের সরকারি অনুমোদিত কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। পরিবার তাৎক্ষণিক মেয়েকে সিলেট জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করেন, পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। মেয়েটির অবস্থার অবনতি দেখায় তাকে রেফার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সেখানে প্রায় ৩ মাস চিকিৎসা গ্রহণের পর সর্বশেষ ডাক্তাররা তার অবস্থা গুরুতর বিধায় ডান পায়ের হাঁটুর উপর কেটে ফেলার পরামর্শ দেয়। মেয়েকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে ডান পাশের হাঁটুর উপর পা কাটাতে পরিবার। চিকিৎসা শেষে ২নং ও ৩নং বিবাদীর বাড়ী যাইয়া সালিশ বৈঠকের কথা বলিলে কিসের বৈঠক বলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়া তাড়াইয়া দেয়। এবং হুমকি প্রদর্শন করে বলেন, মামলা মোকদ্দমা করিলে মেয়ের পা গিয়াছে তোমার প্রাণ যাবে। তিনি ১০/০৮/২০১৯ তারিখে থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে বিবাদীগণ প্রভাবশালী থাকায় থানায় মামলা না নেয়ায় পরবর্তীতে মাননীয় আদালতে মামলা করেন।

 

আপনার মতামত লিখুন :