টিকটকের কাছে ১৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি
প্রকাশিত : ৫ জুন ২০২১
ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটক নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিযোগের শেষ নেই। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের টিকটক আসক্তি প্রায়ই খবরের শিরোনামে ওঠে আসে। এবার প্ল্যাটফর্মটির কাছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে নেদারল্যান্ডসের একদল অভিভাবক। তাদের অভিযোগ শিশুদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা রক্ষায় টিকটক যথেষ্ট কাজ করছে না। দ্য মার্কেট ইনফরমেশন রিসার্চ ফাউন্ডেশন বা এসওএমআই বা সোমি মঙ্গলবার এ বিষয়ে আমস্টারডামের এক আদালতে অভিযোগ জানিয়েছে। সোমির দাবি, তারা প্রায় ৬৪ হাজার অভিভাবকের প্রতিনিধিত্ব করছে।
২০১৮ সালের ২৫ মে থেকে শিশুদের যে ক্ষতি হয়েছে তা টাকার অঙ্কে নির্ধারণ করেছে সোমি। ১৩ বছরের নিচের প্রতিটি শিশুর জন্য প্রায় দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের জন্য এক লাখ এবং ১৬ ও ১৭ বছর বয়সীদের জন্য ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। টিকটকের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তারা অনুমতি না নিয়ে টার্গেটেড বিজ্ঞাপন দেখাতে অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। আইনজীবী ডুভে লিন্ডার্স নেদারল্যান্ডসের গণমাধ্যমকে জানান, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি তথ্য সংগ্রহ করছে টিকটিক- যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনের লঙ্ঘন। টিকটক কীভাবে ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করছে এটা স্পষ্ট নয়, বলেন তিনি। এসব তথ্য যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীনের কাছে পাঠানো হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন লিন্ডার্স।
আরেকটি অভিযোগ হচ্ছে, টিকটক শিশুদের বিপজ্জনক সব চ্যালেঞ্জে অংশ নিতে উৎসাহিত করে। এটা করতে গিয়ে সারা বিশ্বে কয়েকজন শিশু মারা গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন একটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, দ্য ব্ল্যাকআউট চ্যালেঞ্জ। এটি একে অপরকে শ্বাসরুদ্ধ করে রাখার প্রতিযোগিতা৷ এই চ্যালেঞ্জ থেকে একজন সরে না আসা পর্যন্ত তা চলতে থাকে। সোমির আইনজীবী লিন্ডার্স বলেন, এমন ঝুঁকিপূর্ণ চ্যালেঞ্জের কারণে মৃত্যু না হলেও এটা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি করতে পারে। টিকটকে অ্যাকাউন্ট খুলতে অপ্রাপ্তবয়স্কদের তাদের অভিভাবকদের অনুমতি নিতে হয়। আর ১৩ বছরের কম বয়সীদের সাধারণত টিকটক ব্যবহারের অনুমতি নেই।
শিশুদের রক্ষায় টিকটক যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে টিকটক। যেমন; ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের অ্যাকাউন্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ‘প্রাইভেট’ করে রাখা হয়। ফলে অচেনা কেউ শিশুদের ভিডিও দেখতে পারে না। এ ছাড়া টিকটকের মডারেটররা অনুপযুক্ত ভিডিও সরিয়ে ফেলেন এবং এমন ভিডিও নির্মাতাদের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে দেন। টিকটক ব্যবহারকারীরাও চাইলে কোনো ভিডিওর বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে পারেন। টিকটকের মালিক চীনের ইন্টারনেট কোম্পানি বাইটড্যান্স। এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৭০ কোটি।
গত এপ্রিলে ব্রিটেনের শিশু অধিকার কর্মীরা টিকটকের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের মতো প্রায় একইরকম আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেন। মে মাসের শেষে ইউরোপীয় কমিশন টিকটকের ব্যবসানীতি পর্যালোচনা করার ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া টিকটকের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনাও শুরু হয়েছে। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রেও টিকটকের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছিল।