অসুস্থ বাবাকে আশ্রয় দেয়নি ছেলেমেয়ে, হাসপাতালে নিল পুলিশ

প্রকাশিত : ২৪ মে ২০২১

মৌলভীবাজার শহরের পুরাতন হাসপাতাল রোডের শাহ মোস্তফা মঞ্জিলে বাস করতেন অরুণ দেব (৭৫) । দুই ছেলে এবং এক মেয়ে তার। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন শহরের সৈয়ারপুর এলাকায়, মেয়ে জামাই শহরের একটি জুয়েলার্সের ম্যানেজার। বড় ছেলে বিপ্লব দেব সুনামগঞ্জে ব্যবসা করেন। কিন্তু বৃদ্ধকে আশ্রয় তো দেয়ইনি; অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকার খবর শুনেও এগিয়ে আসেননি কোনো সন্তানই। খবর পেয়ে পুলিশ এসে বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।

তিনি ছোট ছেলের সাথে থাকতেন। কিন্তু ১০ বছর আগে ছোট ছেলে মারা যাওয়ায় সংসারে নেমে আসে অন্ধকার। বড় ছেলে এবং মেয়ে তার কোনো ভরণপোষণ করত না। ছোট ছেলের বউ বিভিন্নভাবে কষ্ট করে যা উপার্জন করতেন তা দিয়ে শ্বশুরকে এত দিন লালন-পালন করেছেন। অভাবের কারণে তিনিও বিরক্ত। এর মধ্যে গত ৩/৪ দিন ধরে আশ্রয়হীনভাবে ভবঘুরে জীবন কাটাচ্ছিলেন অরুণ দেব। গতকাল দুপুরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে দীর্ঘ সময় পড়ে থাকেন শহরের কুসুমবাগ এলাকার একটি হোটেলের সামনে।

এই হোটেলের মালিক শেষ মুহূর্তে বিকেলের দিকে একটি রিকশায় করে ঠিকানা দিয়ে বাসায় পাঠান। কিন্তু বাসায় নিতে আপত্তি জানান ছোট ছেলের বউ। তিনি জানান, দীর্ঘ দিন লালন-পালন করেছেন এখন আর তিনি কোনোভাবেই বৃদ্ধের দায়িত্ব নিতে পারবেন না। বাসার সামনে মাটিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে আশপাশের উৎসাহী লোকজন জড়ো হন। অনেক অনুরোধ করেন কিন্তু ঘরে তুলে নেননি মৃত ছোট ছেলের স্ত্রী। এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে বৃদ্ধের বড় ছেলে সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ী বিপ্লব দেবের সাথে যোগাযোগ করেন তিনি বাবার দায়িত্ব নিতে পারবেন না বলে জানান। পরে যোগাযোগ করা হয় মেয়ে এবং মেয়ের জামাইর সাথে তারাও দায়িত্ব নিতে অপারগতা জানান।

এদিকে অসুস্থ বৃদ্ধ পড়ে আছেন মাটিতে । দ্রুত হাসপাতালে না নিলে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। পরে একজন সরকারি কর্মচারী অজয় রায় যোগাযোগ করেন ৯৯৯ নম্বরে। মৌলভীবাজার সদর থানার ওসি তদন্ত গোলাম মূর্তজা আসেন। তিনি নিজেও পরিবারের সবার সাথে যোগাযোগ করেন এবং জানান পুলিশের উদ্যোগে হাসপাতালে নেওয়া হবে তবে পরিবারের কেউ একজন অন্তত সাথে গেলে হাসপাতালে চিকিৎসা করতে সুবিধা হবে।

তারা আশ্রয় না দিলেও শুধু সাথে গেলেই হবে। পুলিশের অনুরোধেও ছেলেমেয়ে, মেয়ের জামাই এবং ছোট ছেলের বিধবা স্ত্রী কেউ রাজি হননি। পরে সন্ধ্যার পর মৌলভীবাজার সদর থানার পুলিশ সদস্যরা স্থানীয়দের সহযোগিতায় বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে এখনো পরিবারের কেউ তার পাশে যায়নি। এই ঘটনা জানাজানি হলে বাবার প্রতি সন্তানদের এমন অবহেলায় হতবাক হয়েছেন অনেকেই।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা এবং যিনি ৯৯৯ নম্বরে প্রথম যোগাযোগ করেন সেই অজয় রায় জানান, এমন ঘটনায় আমরা হতবাক। আমাদের সমাজে এমনটা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। এমন ঘটনায় সাক্ষী হয়ে মানসিক ট্রমায় আছি। কতটা জঘন্য হতে পারে মানুষ তার প্রমাণ এই ঘটনা। এই ঘটনায় বাবাকে আশ্রয় না দেয়ার পেছনে বৃদ্ধের ছেলে বিপ্লব দেব কারণ হিসেবে বলেন, তার আর্থিক অবস্থা ভালো না তাই তিনি নিতে পারবেন না। অথচ তিনি তার ৩ সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন।

অন্যদিকে মেয়ে না আসার পেছনেও মেয়ের স্বামীর আপত্তি ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। মৌলভীবাজার মডেল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) গোলাম মুর্তজা জানান, নানাভাবে বৃদ্ধের ছেলেমেয়েদের অনুরোধ করি কিন্তু কেউই এই বৃদ্ধের দায়িত্ব নিতে এমনকি একটু আশ্রয় দিতে রাজি হয়নি। পরে আমরা মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করি এবং আমার সাধ্যমতো আর্থিক সাহায্য করি। এটি একটি চরম অমানবিক ঘটনা।

আপনার মতামত লিখুন :