মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা

প্রকাশিত : ১৪ এপ্রিল ২০২১

আজ পহেলা বোশেখ ১৪২৮ বাংলা। বাংলা নববর্ষ। বাঙ্গালী এখন আর বাংলা নববর্ষে চালের গুড়ির পিঠাতো খায়ই না মিষ্ঠিমণ্ডাও খাওয়া ভুলে গেছে। এসবের বদলে এখন বোশেখ এলে মিষ্ঠির দোকানে কম যায়। যায় ‘ফাষ্ট ফুড’এর দোকানে কিংবা রেস্তোরাঁয়। যেমন স্বাদ, রাজমহল, মামাবাড়ী কিংবা পানসি ইত্যাদি দোকানে।

এ অবস্থার মধ্যে করোণা মহামারি আকার নেয়ায় এবারের বোশেখে উৎসব হবার কোন প্রশ্নই উঠে না। গত বছরও করোণার শুরুতে বোশেখ এসেছিল কিন্তু করোণার কারণে বাঙ্গালী স্বাদরে গ্রহন করতে পারেনি। এবারও আনন্দ বিনোদনে মেতে উঠা হবে না। রবি ঠাকুরের সেই বন্দনা গীতি “এসো হে বৈশাখ এসো এসো…মুঝে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা…’গেয়ে গেয়ে রাস্তায় শোভাযাত্রা নিয়ে নামা হবেনা। কেনো জানি মনে হয় করোণা অনেক কিছুকেই বদলে দিয়ে যাবে। এমন না হলেই ভাল।

আমার মনে আছে বোশেখের প্রথম প্রহরে না হলেও প্রথম দিনের পড়ন্ত বিকেলে হয় যেতাম ব্যোমকেশ ঘোষের বাসায় অথবা রাধিকা মোহন গোস্বামীর বাসায়। এক সময়ের শহরের দুই দিকপাল। দু’জনই ফেলে আসা অতীতের দুই সুখ্যাত সামন্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। ব্যোমকেশ ঘোষ পেশায় ছিলেন আইন ব্যবসায়ী(মোক্তার) আর রাধিকামোহন গোস্বামী ছিলেন পেশায় ডাক্তার(হোমিওপ্যাথী) ও সাংবাদিক। ব্যোমকেশ বাবুর বাসায় দশ-পঁচিশের আসর বসতো। সৈয়দ নাসির, বিনয় দা, আজিজুর রহমান, হুমাইউন চৌধুরীদের ‘মার পঁচিশ’ উচ্চারণে মুখর হয়ে উঠতো পুরোনো দিনের স্থানীয় সমাজ সভ্যতার আলোকবর্তিকা ‘ঘোষ লজ’এর আঙ্গিনা। সে আসরে মাঝে মধ্যে আসতেন সে সময়ের খ্যাতিমান ব্যবসায়ী প্রদ্মুন্ন রায়, ব্যবসায়ী ও নাট্যশিল্পী শৈলেন্দ্র বিশ্বাস(ভুতু বিশ্বাস) ও সংগীত শিল্পী সরোজ দা।

গোস্বামী মহাশয়ের বাসায় বসতো প্রগতিশীল রাজনৈতিক আড্ডা। আসতেন অনেকেই। যাদের কথা বেশী মনে পড়ছে তারা ছিলেন, সাংবাদিক শফকতুল ওয়াহেদ, সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী, সাংবাদিক আব্দুস সালাম। মাঝে মধ্যে সাংবাদিক গজনফর আলী চৌধুরীও শরীক হতেন। বাম রাজনীতির বিভিন্ন সংকট নিয়ে আলাপ হতো। আলাপের ফাঁকে ফাঁকেই আসতো চা। অন্ততঃ বোশেখের সময় চা’এর সাথে থাকতো বাঙ্গালী ঘরানার রকমারি পিঠে। সে সকল দিন এখন বাঙ্গালীর জীবন থেকে ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে বিদেশী সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে। স্বাধীনতার পর পঞ্চাশে আমরা পৌঁছেছি ঠিকই কিন্তু শক্ত হাতে ধরে রাখতে পারছি না নিজের সংস্কৃতিকে।

এতোসবের পরও আজকের জাতীয় এ মহান দিনে বিশ্বজুড়ে মহামারি করোণা’র ভয়াবহতা থেকে মানবজীবন মুক্ত হোক, সকলের প্রার্থনায় এমন ধ্বনিই উচ্চারিত হোক।

 

আপনার মতামত লিখুন :