ঝিনাইদহে প্রচন্ড গরমে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে ১১৭ হেক্টর ইরি-বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি!

প্রকাশিত : ৯ এপ্রিল ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ: প্রচন্ড গরমে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ের বাতাসে ঝিনাইদহে ইরি-বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গরম বাতাসে সবে মাত্র বের হওয়া ধানের শীষ সাদা-হলুদ বর্ণ ধারণ করে পুড়ে যাচ্ছে। জেলার ৬ উপজেলায় প্রায় ১১৭ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এবছর ক্ষেতে থাকা ধানে চিটা বেশি হবে ও ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক ও সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা। ৪ এপ্রিল বিকেলে হঠাৎ ঝিনাইদহ ৬ উপজেলার উপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ের আগে পরে বৃষ্টি না হলেও গরম হাওয়া বইতে থাকে। গরম হওয়ায় জমির ধান নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তারা। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জেলার ৬ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ধান রোপণ হয়েছে ৭৭ হাজার চারশত ৪০ হেক্টর। এদিকে ১৫ থেকে ২০ দিন পরই এসব জমির ধান কাটা শুরু হবে।

ইতোমধ্যে তাপদাহ ও ঝড়ে ১১৭ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হওয়ার জমির মধ্যে ঝিনাইদহ সদরে আট হেক্টর, কালীগঞ্জে ১০ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে আট হেক্টর, মহেশপুরে ৩০ হেক্টর, শৈলকুপায় ১৩ ও হরিণাকুন্ডুতে ৪৮ হেক্টর। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে হরিণাকুন্ডুতে। গরম হাওয়ায় ধান নষ্ট হওয়ায় অনেক কৃষকের মুখের হাসি হারিয়ে যেতে বসেছে। জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, এটা ধানের কোন রোগ না, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা যায়। তবে ঝড়ের আগে গরম দমকা হওয়ায় পুড়ে যাওয়া ধানের জমিতে এক ইঞ্চি পরিমাণ পানি মিশিয়ে পটাসিয়াম দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার কাঠালিয়া গ্রামের কৃষক স্কুল শিক্ষক শফিকুর রহমান জানান, ৪ এপ্রিল বিকেলে এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। সাথে প্রচন্ড ধুলা আর গরম হওয়া বইতে থাকে। বৃষ্টি না হওয়ায় চলছে টানা তাপদাহ। ঝড়ের দু’দিন পর মাঠে গিয়ে দেখা যায় কিছুকিছু জমিতে সবুজের পরিবর্তে ধানের শীষ সাদা হয়ে যাচ্ছে।

ফলে এবার ধানের ফলন কম হবে।কালবৈশাখী ঝড়ে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিকেলে হঠাৎ কালবৈশাখীর ঝড়ের পর দুধভরা ধান শুকিয়ে হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন গরম বাতাসের কারণে এমনটি হয়েছে। ঝড়ে জমির বোরো ধান নষ্ট হওয়ায় হারিয়ে গেছে কৃষকের মুখের হাসি। শিষ দেখলে বিশ দিন অর্থাৎ, ধান গাছের শিষ বের হওয়ার বিশ দিন পর ধান কাটা যায়। কাল বৈশাখীর গরম ঝড়ো হাওয়ায় গ্রামের কৃষকদের আর বিশ দিন পর ধান কাটা হলো না। কৃষকরা বলছেন, জমির বোরো ধানক্ষেত ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে সবুজের পরিবর্তে সাদা হতে দেখা গেছে। ঝড়ের বাতাস ছিল প্রচন্ড গরম। ওই বাতাস বিলের যে এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সেসব এলাকার দুধভরা ধান নষ্ট হয়েছে। রোদের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সবুজ ধানক্ষেত সাদা হতে শুরু করে। তারা ধানক্ষেতে গিয়ে দেখতে পান দুধভরা ধান শুকিয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে। ধান গাছে শিষ বের হওয়ার পর দুধভরা অবস্থায় ৩৫ ডিগ্রীর উপরে বাতাসের সঙ্গে তাপমাত্রা থাকায় ধানের শিষ নষ্ট হয়েছে।

বাতাসের সঙ্গে অতিমাত্রায় তাপমাত্রার কারণে দুধভরা শিষের ফুল পড়ে যাওয়ায় পরদিন রোদের তাপে সম্পূর্ণ শিষ শুকিয়ে গেছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাঘুটিয়া গ্রামের কৃসব রবিউল ইসলাম রবি জানান, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে আমার ১৩ বিঘা জমি ধান রয়েছে। কয়েকদিনে এমনিতে এ অঞ্চলের প্রচন্ড তাপদাহ চলছে। এরমধ্যে গত কয়েকদিন আগে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ে দুই দিন পর মাঠে গিয়ে দেখি যেসব জমির ধানে দুধভাত ছিল সে সব ধানের শীষে সাদা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। ফলে ফলনে কিছুটা কম হতে পারে ধারণা এই কৃষকের। মহেশপুর উপজেলার ভৈরবা গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, চলতি ইরি-বরো মৌসুমে মাঠে ৩০ বিঘা জমিতে ধান রয়েছে। সম্প্রতি গরম হাওয়া আর কালবৈশাখী ঝড়ে প্রতিটা জমির জাগায় জাগায় ধান সাদা বর্ণ হয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে।

বিশেষ করে ঝড়ের পরেই এই চিটার পরিমাণ বেশি দেখা যাচ্ছে। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহায়মেন আক্তার জানান, এবার কালীগঞ্জে ১০ হেক্টর জমির থান নষ্ট হয়েছে। যে কারণে কুষকদের ফলন কম হবে ও চিটা বেশি হবে। আমরা আশা করবোাাগামীতে ধানের এ লোকসান পুুষিয়ে দিতে সর্বাত্নক চেষ্টা কবো ও ফলন যাতে বেশি সে বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করবো। ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন জানান, এরইমধ্যে আমরা মাঠে গিয়ে ধানের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছি। এ অঞ্চলে টানা তাপদাহের পর গত ৪ এপ্রিল বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ের আগে গরম দমকা বাতাস বয়ে যায়। অতিমাত্রায় গরম বাতাসের কারণে দুধভাত হওয়া শীষগুলো পুড়ে যায়। এ ছাড়া ধান গাছে শীষ বের হওয়ার পর দুধভরা অবস্থায় ৩৫ ডিগ্রীর উপরে বাতাসের সঙ্গে তাপমাত্রা থাকায় কিছুকিছু ধানের শীষ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

 

আপনার মতামত লিখুন :