ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ঐতিহাসিক গাজী, কালু ও চম্পাবতীর মাজারে ওরস সম্পন্ন

প্রকাশিত : ১৩ মার্চ ২০২১

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ: লাখো লাখো আষেকান ভক্ত মুরদীদের উপস্থিতিতে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ঐতিহাসিক গাজী, কালু ও চম্পাবতীর মাজারে ওরস সম্পন্ন হয়েছে। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ১ দিন ব্যাপী এ ওরস অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ওরসের ৪/৫ দিন আগ থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাজী, কালু, চম্পাবতীর ভক্ত ও বিভিন্ন আশেকানরা মাজার এলাকায় এসে জড়ো হতে থাকে। প্রায় ৪০ বিঘা জমি জুড়ে মানুষের উপচে পড়া ভীড় ,ভক্তদের জিকির,নাচ গান,হিজড়াদের নাচ গান চলে সারারাত। ওরসের দিন সকাল থেকে রাত যতই বাড়তে থাকে দূর দুরান্ত থেকে নারী, পুরুষ শিশু ,কিশোর বৃদ্ধ সহ বিভিন্ন বয়সের দর্শনার্থীদের আগমনে ততই ভীড় বাড়তে থাকে।

এ সময় প্রায় লাখো মানুষের উপচে পড়া ভীড়ে কোথাও পা রাখার ঠাই পাওয়া যায় না। কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার বাদুরগাছা গ্রামে ঐতিহাসিক গাজী কালু চম্পাবতীর মাজার অবস্থিত। বারবাজার বাসষ্টান্ড থেকে ১ কিঃ মিঃ দুরে মাজার আস্তানায় পৌছাতে দর্শনার্থীদের ভীড়ের কারণে প্রায় ১ ঘন্টা সময় লাগে। সকলেই মাজার এলাকায় এসে ধর্মমত নির্বিশেষে শ্রদ্ধাঞ্জাপন করে। বৃহস্পতিবার রাত ৯ টায় মাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায় মাজার টি ৩৩ শতক জমির উপর অবস্থিত। কিন্তু ৩৯ বিঘা জমি জুড়ে বসেছে বিভিন্ন দোকান পাট। কোথাও মাইজ ভান্ডারী ,গাজীর গান,ভক্তদের কাউয়ালী দেহতত্ব, হিজড়াদের নাচ গান ও আশেকানদের জিকিরে এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। কোথাও কোথাও স্থানে আগরবাতী মোমবাতী জ¦ালিয়ে মগ্ন ছিল জিকির ও প্রার্থনায়। ওরসে আগত হিজড়ারা জানায় ,তারা এখানে দীর্ঘ ৩৯ বছর ধরে আসা-যাওয়া করছে।

হিজড়ারা নিজ খরচে রান্নাবান্না করে দর্শনার্থীদের হাতে সিন্নি হিসাবে বিতরন করে। ওরসে খুলনা, ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বগুড়া, যশোর, বেনাপোল, বাগেরহাট, সাতক্ষিরা, রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট সহ ভারত থেকে আসা ভক্তদের মধ্যে কথা হয় পাহাড়ী, জমিলা খাতুন, কমলা বানু, শেফালী বেগম, তাহেরা খাতুন, সিদ্দিকুর রহমান, কোবাদ আলী, বরকত, রহিম উদ্দীন, আবু সালেহসহ অনেকের সাথে। তারা জানায়, আমরা এ পীরের ভক্ত। এ অঅস্তানায় মান্নত করলে রোগ ব্যধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পীরকে ভালবাসি তাই মনের টানে দীর্ঘ বছর ধরে এ ওরসে এসে থাকি। ইউ পি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, ওরসের কয়েক দিন আগে থেকেই পবিত্রতা রক্ষা ও সার্বিক পরিবেশ শৃংখলা বজায় রাখতে বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ১ হাজার যুবক ছেলেদের সেচ্ছাসেবকের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়।

প্রতি বছরই এলাকার ঐতিহ্য ধরে রাখতে তারা অত্যান্ত নিষ্টার সাথে দ্বায়িত্ব পালন করে থাকে। পীর আওলীয়াদের এ মাজারটিতে আগত ভক্তদের নিকট পূর্ণ ভুমিতে পরিণত হয়েছে। ইতিহাসে জানা যায়,বৈরাট নগরের শাহ সেকেন্দারের পুত্র গাজী। কালুকে তারা এক নদীপাড়ে কুড়িয়ে পেয়ে লালন পালন করে। সংসার বৈরাগী গাজী কালুকে সাথে নিয়ে প্রায় ৭ বছর সুন্দরবনে নিরুর্দ্দেশ থাকার পর ফিরে আসেন বাদুরগাছা গ্রামে। এ এলাকার শ্রীরাম রাজার দরবারে আসলে তাদের কে ফকির ভেবে তাড়িয়ে দিলে পাশের জঞ্জলে আশ্রয় নেয়। এরপর দৈবক্রমে রাজপ্রাসাদে আগুন লাগে ও রানী অপহৃত হলে জোতিষিরা রাজাকে গাজী কালুর স্বরনাপন্ন হতে বলে। তখন শ্রীরাম রাজা গাজী কালুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে গাজী একমুষ্টি ধুলা পড়ে প্রাসাদের দিকে ছুড়ে মারলে আগুন নিভে যায় এবং অপহৃত রানী উদ্ধার হয়।

রাজা তখন ইসলাম ধর্মে দিক্ষা নিয়ে তাদের কে প্রাসাদে ডেকে নিয়ে যায়। কিছুদিন পর এক বাম্্রন রাজা মুকুট রায়ের সাথে গাজীর যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রাজা পরিষদ সহ আত্মহত্যা করে। কেবল রাজকন্যা চম্পাবতি ও তার ভাই জীবিত ছিলেন। এরপর গাজী চম্পাবতীকে বিয়ে করে। সর্বশেষ বারবাজারের বাদুরগাছা গ্রামেই তাদের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং এখানেই তাদের মাজার গডে উঠে। তাদের স্বরনে দূর দুরান্তের ভক্তবৃন্দরা প্রতি বছরই জাকজকম পূর্ণ ভাবে ওরস পালন করে আসছে।

 

আপনার মতামত লিখুন :