হেফাজতের শাপলা চত্বরের মামলা সচল করার পরামর্শ

প্রকাশিত : ১২ ডিসেম্বর ২০২০

২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের ঘটনায় করা মামলাগুলো সচল করার পরামর্শ দিয়েছেন সে সময়ের পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক। তিনি মনে করেন, মামলাগুলো থামিয়ে রেখে কোনো লাভ হয়নি। রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা এবং কুষ্টিয়ায় নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে শনিবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে গৌরব একাত্তর নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে ‘মৌলবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে জাগরণ’ ব্যানারে আয়োজিত জাগরণ সমাবেশে এ পরামর্শ দেন তিনি। সাবেক আইজিপি বলেন, ‘তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা আছে। কিন্তু আজও চার্জশিট দেয়া হয়নি। কী হলো? তাদেরকে চেঞ্জ করা যায়নি। তাদেরকে আইনের মাধ্যমে প্রতিহত করতে হবে।’

১৩ দফা দাবি নিয়ে ২০১৩ সালের ৫ এপ্রিল ঢাকা অবরোধ এবং পরে ৫ মে ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ কর্মসূচি দেয় হেফাজতে ইসলাম। অবরোধ কর্মসূচি শেষে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট এবং এইচ এম এরশাদের দল জাতীয় পার্টিও সে সময় হেফাজতের কর্মসূচিতে সমর্থন দেয়। শাপলা চত্বরে ওই অবস্থান ঘিরে দিনভর পুলিশের সঙ্গে হেফাজতকর্মীদের সংঘর্ষ চলে। মতিঝিল, পল্টন ও আশপাশ এলাকায় ফুটপাতের শত শত দোকান ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করে কওমি শিক্ষার্থীরা। তাণ্ডবের শিকার হয় আশপাশের অনেক সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। সাবেক আইজিপি বলেন, ‘তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা আছে। কিন্তু আজও চার্জশিট দেয়া হয়নি। কী হলো? তাদেরকে চেঞ্জ করা যায়নি। তাদেরকে আইনের মাধ্যমে প্রতিহত করতে হবে।’

১৩ দফা দাবি নিয়ে ২০১৩ সালের ৫ এপ্রিল ঢাকা অবরোধ এবং পরে ৫ মে ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ কর্মসূচি দেয় হেফাজতে ইসলাম। অবরোধ কর্মসূচি শেষে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট এবং এইচ এম এরশাদের দল জাতীয় পার্টিও সে সময় হেফাজতের কর্মসূচিতে সমর্থন দেয়। শাপলা চত্বরে ওই অবস্থান ঘিরে দিনভর পুলিশের সঙ্গে হেফাজতকর্মীদের সংঘর্ষ চলে। মতিঝিল, পল্টন ও আশপাশ এলাকায় ফুটপাতের শত শত দোকান ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করে কওমি শিক্ষার্থীরা। তাণ্ডবের শিকার হয় আশপাশের অনেক সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। শাপলা চত্বরের সেই সমাবেশে হেফাজত আমির আহমদ শফীরও যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি লালবাগের একটি মাদ্রাসাতেই অবস্থান করেন। সেই রাতে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির যৌথ অভিযানে হেফাজতকর্মীদের মতিঝিল থেকে তুলে দেওয়া হয়। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হেফাজতের তাণ্ডবে সেদিন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ৩৯ জন নিহত হয়েছেন।

ওই অভিযানের পর আবার হাজার হাজার মানুষকে হত্যার গুজব ছড়ানো হয়। পরের দুই দিনেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়ায় হেফাজত কর্মীরা। সেখানেও প্রাণহানি হয়। এসব ঘটনায় তখন সাতটি জেলায় মোট ৮৩টি মামলা হয়। এর মধ্যে ঢাকায় হয় ৫৩টি। কিন্তু গত সাত বছরে কেবল ১৫টি মামলার অভিযোগপত্র জমা পড়েছে। বাকিগুলোর অগ্রগতি নেই। আর যেগুলোর তদন্ত শেষ হয়েছে, আটকে আছে সেগুলোর বিচার। হেফাজত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতায় নামার পর ২০১৩ সালের ৫ মের প্রসঙ্গ আবার উঠেছে। হেফাজত নেতা মামুনুল হক আরেকটি ৫ মে করার হুমকি দিয়ে প্রতিরোধের মুখে পড়েন। আবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ হেফাজতকে ওই দিনের ঘটনা স্মরণ করিয়ে বলেছেন, সেদিন অভিযানের মুখে কোনো নেতাকে পাওয়া যায়নি।

ওই সময় পুলিশের আইজিপি ছিলেন শহীদুল হক। জানান, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় রক্ষা পেয়েছেন হেফাজত নেতারা। সাবেক পুলিশ প্রধান বলেন, ‘৫ মে আমি যখন প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম যে শফি হজুরকে রেখে সবগুলোকে ধরে আনি, তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন না না থাক, দরকার নাই। হেফাজত নেতা মামুনুল হককে উদ্দেশ করে সেদিনের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে শহীদুল হক বলেন, ‘হেফাজত কর্মীরা সেদিন কত কোরআন পুড়িয়েছে, এখানে মিডিয়ার যারা আছেন তারা দেখেছেন, তখন তো আপনি (মামুনুল) কোনো কথা বলেন নাই। আর নাসিরনগরে (ব্রাহ্মণবাড়িয়ার) কে ফেসবুকে কী বলল তা নিয়ে বাড়ি ঘর পোড়ালেন। ভাস্কর্য ইসলামবিরোধী বলে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দলগুলোর বক্তব্যেরও জবাব দেন আইজিপি। বলেন, তারা সব সময় ভালো কিছুর বিরোধিতা করেছে। শুরুতে বলে হারাম, কয়েকদিন পরে নিজেরাই ব্যবহার করে।

বিরোধিতাকারীদের দাবি, ভাস্কর্য ধর্ম অনুমোদন করে না। যদিও সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি মাওলানা জিয়াউল হাসান কোরআনের আয়াত উল্লেখ করে দেখিয়েছেন, ইসলামে ভাস্কর্য নির্মাণে নিষেধ নেই। শহীদুল হক বলেন, ‘এই কাঠমোল্লারা সব কিছুর বিরোধিতা করে। যখন মাইক আসলো, তারা বলল এটাতে কথা বলা হারাম। যখন টিভি আসলো তখন তারা বলে এটা শয়তানের বাক্স। দেখা যাবে না। কিন্তু আজ তারাই সেখানে ছবি দেখানোর জন্য পাগল হয়ে উঠে। এই কাঠ মোল্লারা ব্রিটিশ শাসনের সময় মুসলামদের ইংরেজি শিখতে দেয়নি। এ কারণে তারা পরে পিছিয়ে যায়। হেফাজত নেতা মামুনুল হককে ইসলাম নিয়ে আরও পড়াশোনা করার পরামর্শও দেন শহীদুল হক। বলেন, ‘আপনি তো ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, হাফেজ হয়েছেন। আপনি ইসলাম নিয়ে রিসার্চ করেন। আপনি কেনো ইসলাম নিয়ে ব্যবসা করেন। আপনি কেনো কাঠ মোল্লাদের মতো ভাস্কর্য নিয়ে ধান্ধা করেন।’

তিনি বলেন, ‘ইসলাম একটা শান্তিপ্রিয় ধর্ম। কিন্তু আপনারা ধর্মের নামে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। ধর্মটাকে নষ্ট করে দিছেন উগ্রবাদী করে। এই হেফাজতরা ইসলামকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ক্ষমতায় গেলে সব ভাস্কর্য অপসারণ করার বিষয়ে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুলের বক্তব্যেরও জবাব দেন শহীদুল। বলেন, আপনারা তো ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে দাঁড়ালে ভোট পান না। এত জনগণ করেন কেন? সমাবেশে যুবলীগ নেতা মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, ভাস্কর উত্তম বড়ুয়া, গৌরব ৭১ এর সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন, সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস, সাবেক সংসদ সদস্য সানজিদা খানম, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, শহীদ বুদ্ধিজীবী আলিম চৌধুরীর মেয়ে চক্ষু চিকিৎসক নুজহাত চৌধুরীসহ অন্যান্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য শেষে শাহবাগে মৌলবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কবিতা আবৃত্তি ও দেশাত্মবোধ গান পরিবেশন করা হয়।

 

আপনার মতামত লিখুন :