বেনাপোলের সড়ক বন্ধ করে রেলের পণ্য খালাসে বাড়ছে পথচারীদের দুর্ভোগ

প্রকাশিত : ৯ ডিসেম্বর ২০২০
ছবি: কুয়াকাটা নিউজ

সুমা খাতুন,বেনাপোল প্রতিনিধি: দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের সড়ক বন্ধ করে রেলের পণ্য খালাসে বেড়েছে পথচারীদের দুর্ভোগ ও মৃত্যুর ঝুঁকি। আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলেও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এই সড়ক দিয়ে।

পথচারী ইয়ামিন বলেন, আমরা নিজের কর্মস্থলে যেতে বেনাপোল ছোট আঁচড়া সড়ক ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এই সড়ক বন্ধ করে রেলের পন্য খালাস করছে বন্দরে। ফলে আমাদের কর্মস্থলে যেতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত বন্দরের দুই পাশে ইয়ার্ড নির্মাণ করে। আমাদের চলার পথটি সচল করা হোক।

পথচারী ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন দফতরে গিয়েও কাজ না হওয়ায় এ দুর্ভোগ যেন নিয়তিতে পরিণত হয়েছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, পণ্য লোড, আনলোডের জন্য বন্দরের দুই পাশে ইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। বাস্তবায়ন হলে চলমান সমস্যার সমাধান হবে।

স্থানীয় সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী সুত্রে জানা যায়, বেনাপোল বন্দরে আগে স্থলপথে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রফতানি হতো। তবে বর্তমনে খরচ সাশ্রয়ী হওয়াতে পাল্লা দিয়ে রেলপথে বেড়েছে আমদানি বাণিজ্য। তবে সংকীর্ণ রেলপথ আর ইর্য়াড না থাকায় ব্যস্ততম সড়ক বন্ধ করে বন্দরে পণ্য খালাস করছে রেল কর্তৃপক্ষ। এতে প্রায় দিন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা রাস্তা বন্ধ করে রেল দাঁড়িয়ে থাকায় পথচারীদের যাতায়াত বিঘœ ঘটছে। অভার ব্রিজ না থাকায় বাধ্য হয়ে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে নারী-পুরুষ ও শিশুরা ট্রেনের দুই বগির মাঝে দিয়ে ও নিচ দিয়ে চলাচল করছে। আবার রাস্তা পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়ছে পণ্যবাহী ট্রাকসহ সাধারণ যাত্রীবাহী যানবাহন।

এলাকাবাসীর যাতায়াত ঝুঁকিমুক্ত করতে বিভিন্নভাবে অভিযোগ জানানো হলেও কোনো কাজে আসছে না। ফলে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার পথচারীদের আতঙ্কের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের দুই বগির মাঝ দিয়ে পার হতে হচ্ছে।

দুর্ভোগের শিকার পথচারী আলামিন দৈনিক সাতনদী পত্রিকার বেনাপোল প্রতিনিধি রাসেল ইসলামকে জানান, সড়ক বন্ধ করে রেল দাঁড়িয়ে থাকায় তাদের কর্মস্থলে যাতায়াত আর ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় রাস্তা পারাপারে জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে। কখন ট্রেন ছেড়ে দেয় এ আতঙ্ক নিয়ে ট্রেনের নিচ দিয়ে চলাচল করতে হয়। প্রায় এক বছর ধরে তাদের এ কষ্ট ভোগ করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বিভিন্ন মহলে অভিযোগ জানিয়েও কোনও প্রতিকার হচ্ছে না।

আমদানি-রফতানি পণ্য বহনকারী ট্রাকচালক ও ব্যবসায়ীরা জানান, রাস্তা বন্ধ করে দীর্ঘ সময় ধরে রেল দাঁড়িয়ে থাকায় তারা বাণিজ্যিক কাজে যাতায়াত করতে পারেন না।

বেনাপোল বন্দরের রেলস্টেশন মাস্টার সাইদুর রহমান জানান, রেলের পণ্য বেনাপোল বন্দরে খালাস করার জন্য যে অবকাঠামো প্রয়াজন তা এখনও গড়ে উঠেনি। বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অনুরোধে রেলগাড়ি সড়কে দাঁড় করিয়ে পণ্য খালাস করায় পথচারীদের দুর্ভোগ হচ্ছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু হবে। তখন এ দুর্ভোগ আর থাকবে না।

বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, করোনার কারণে স্থলপথে পণ্য আমদানিতে নানা সমস্যার কারণে রেলপথে পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। এতে রেলপথে পণ্য খালাসে মানুষের কষ্ট বেড়েছে। তবে বন্দরের দুই ধার দিয়ে রেলপথ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

জানা যায়, প্রতিবছর বেনাপোল বন্দরের রেল ও স্থলপথে আমদানি পণ্য থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিক স্বার্থে এখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো আজও উন্নয়ন হয়নি।

আপনার মতামত লিখুন :