সিলেট নগরে পুলিশ ফাঁড়িতে যুবকের মৃত্যু, বরখাস্ত ৪

প্রকাশিত : ১৩ অক্টোবর ২০২০

সিলেট নগরে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন (৩০) নামে এক যুবক নিহতের ঘটনায় ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া, তৌহিদসহ চারজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরো তিনজনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। সোমবার (১২ অক্টোবর) পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে হত্যার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, সাময়িক বরখাস্তকৃত চারজনের মধ্যে রয়েছেন ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবর হোসেন ভূঁইয়া, তৌহিদ, টিটু ও হারুনুর রশিদ। তাদের মধ্যে এএসআই পদবীর একজন রয়েছেন। তবে প্রত্যাহারকৃত তিনজনের নাম দিতে পারেননি তিনি। সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) সৌমেন মিত্র বলেন, পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনের ঘটনায় এসআই আকবরসহ চারজনকে বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহারের খবর জানতে পেরেছি।

এদিকে, সরেজমিনে সোমবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সিলেট নগরের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে এসআই আকবর, কনস্টেবল তওহীদ (যার মোবাইল দিয়ে নিহতের মায়ের মোবাইলে ফোন করা হয়) আরো দু’জনকে বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। পুলিশ হেফাজতে রায়হানকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে নগরের আখালিয়া এলাকাবাসীর উদ্যোগে ওই স্থানে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। তারা হত্যায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।

রোববার (১১ অক্টোবর) সকালে রায়হানের মৃত্যু হয়। পুলিশের দাবি, নগরের কাস্টঘর এলাকায় ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে রায়হান নিহত হন। কিন্তু স্বজনদের দাবি, তাকে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে আরো উল্লেখ করেন, তার স্বামীকে কে বা কারা বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে পুলিশি হেফাজতে রেখে তার হাত-পায়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করে এবং হাতের নখ উপড়ে ফেলে। পুলিশ ফাঁড়িতে রাতব্যাপী নির্যাতনের ফলে আমার স্বামী মারা যান।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, তাদের আড়াই মাস বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। গত ১১ অক্টোবর ভোর ৪টা ৩৩ মিনিটের দিকে নিহতের মায়ের নম্বরে ফোন যায়। ফোন রিসিভ করেন রায়হানের সৎ বাবা হাবিবুল্লাহ। ফোন রিসিভ করতেই রায়হান বলেন, ‘আমাকে বাঁচাও, টাকা নিয়ে বন্দরফাঁড়িতে আসো’। হাবিবুল্লাহ ভোর ৫টা ৩০ মিনেটের দিকে টাকা ফাঁড়িতে পৌঁছান। তখন দায়িত্বরত এক কনস্টেবলের কাছে রায়হানের খবর জানতে চাইলে বলা হয় রায়হান ঘুমিয়ে এবং যারা তাকে ধরে এনেছে, তারাও চলে গেছে সকাল সাড়ে ৯টায় আসতে বলা হয়।

এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় ১০ হাজার টাকা নিয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে যাবার কথা বলে ওই কনস্টেবল। পুলিশের কথামতো নিহতের সৎ বাবা হাবিবুল্লাহ টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে গিয়ে রায়হান কোথায় জানতে চাইলে বলা হয়, রায়হান অসুস্থ হওয়ায় তাকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার সৎ শ্বশুর হাসপাতালে গিয়ে রায়হানের মরদেহ দেখতে পান।

আপনার মতামত লিখুন :