৩ দফা দাবিতে বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের মানববন্ধন

প্রকাশিত : ১১ অক্টোবর ২০২০

আজ ১০ অক্টোবর ২০২০ইং শনিবার সকাল ১০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্থানীয় সরকার ও ইউপি নির্বাচন নির্দলীয় করা, দুর্নীতি দমনে বিশেষ দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল গঠন করে দুর্নীতিবাজদের বিচার করা এবং চলমান নদী ভাঙ্গন রোধকল্পে নদী-শাসন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা এই ৩ দফা দাবিতে বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলন’র মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসির উদ্দিন বলেন, “স্থানীয় সরকার ও ইউপি নির্বাচনে কোন দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে নির্বাচন করা যাবে না। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার কারণে আজ আমরা ভূমিহীন কৃষক শ্রমিক মেহনতী মানুষ রাষ্ট্রীয় মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত। আমরা সাধারণ মানুষ আমাদের পছন্দের প্রার্থীকে প্রার্থী করতে এবং ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারি না। কারণ কালো টাকা ও সন্ত্রাসীদের, প্রভাবশালীদের প্রভাব খাটিয়ে দলীয় নমিনেশন নিয়ে মাস্তানী করে ভোট কেন্দ্র দখল করে ভোট কেটে নির্বাচিত হয়। যে কারণে গ্রামের সমাজসেবক, নিষ্ঠাবান ও মুরব্বীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে না। এই দলীয় প্রতীকের নির্বাচন ও দলীয় নমিনেশন গ্রাম-বাংলার ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সৌহার্দ্য বিঘিœত করে, কোন্দল সৃষ্টি করে, ভাই-ভাই, পিতা-পুত্র, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে দেয়। গ্রামে অশান্তি সৃষ্টি হয়। অপরদিকে এই নমিনেশন প্রথায় কালো টাকার ছড়াছড়ি আর গুন্ডামী ও মাস্তানীর সুযোগ সৃষ্টি করে আর মাদক নেশা সহ বিভিন্ন অপকর্মের পথ প্রশস্ত হয়। আর মুরব্বীদের হেনস্তা করে সমাজের সম্প্রীতির ভাব নষ্ট হয়। গ্রামে হানিহানির বিস্তার ঘটে। তাই গ্রামের ঐতিহ্য, ভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক মিল-বন্ধন অটুট রাখতে আমরা স্থানীয় সরকার ও ইউপি নির্বাচন রাজনৈতিক দলের দলীয় নমিনেশন প্রথা বাতিল করে আগের মত নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর দাবী জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, দলীয় নমিশেন পাওয়ার জন্য স্থানীয় নেতারা এমপি-মন্ত্রীদের বাসায় টাকা-পয়সা ও মূল্যবান উপহজার নিয়ে মিছিল করে শো-ডাউন করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে নমিনেশন নিলামে উঠে। যে বেশি মূল্যবান দাম হাকায়, নমিনেশন সেই পায়। এতে করে সমাজের সৎ যোগ্য ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিরা সমাজসেবক হতে বঞ্চিত হয়। এলাকার সৎ যোগ্য ব্যক্তিগণ এই নিলাম প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। আর নমিনেশন কেনা ব্যক্তিরা দলীয় প্রভাবে নির্বাচিত হয়ে এলাকায় দুর্নীতি ও অপকর্মের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলে।

বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলন’র প্রধান উপদেষ্টা দেশের চলমান দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, “দুর্নীতি দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত সকল দুর্নীতি মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে। বিশেষ করে মহামারি করোনার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুদান পরিবার প্রতি ২,৫০০/- (দুই হাজার পাঁচশত) টাকা করে মোবাইলে বিলির সময়কার দুর্নীতি মানবিকতাকেও হার মানিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন, কাফনের কাপড় দিলে দা দিয়েও দুর্নীতিবাজরা পাঞ্জাবী তৈরি করে। আজ তাঁর এ কথার বাস্তব চিত্র আমাদের সামনে উঠে আসছে। ক্যাসিনো থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যত দুর্নীতির মামলা হয়েছে তা অনতিবিলম্বে “স্পেশাল দুর্নীতি দমন ট্রাইব্যুনাল” গঠন করে ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করে শাস্তির বিধান করতে হবে।”

তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির চিত্র আরো ভয়াবহ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে হচ্ছে বাণিজ্য। পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট প্রদানের যে সংস্কৃতি আমাদের দেশে চালু হয়েছে তার অবসান চাই। স্বাস্থ্যসেবা বাণিজ্যি হতে পারে না। স্বাস্থ্যসেবা হতে হবে রাষ্ট্রীয় সেবা। দেশের সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে উপজেলার জনগণকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আগামী শীত মৌসুমে ভয়াবহ করোনার আক্রমণের আশঙ্কা করছি। তাই করোনা পরীক্ষা সহ সকল স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার হোক দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শ ছিল ‘গ্রাম বহুমূখী সমবায়’ গঠনের মধ্য দিয়ে প্রতিটি গ্রাম সমবায় উৎপাদন ও প্রশাসনিক ইউনিট রূপে গড়ে উঠবে। আমরা মুজিব বর্ষে তার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। আর সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েই বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলন ইউনিয়ন পর্যায়ে পাঁচশত থেকে এক হাজার পরিবার সমন্বয়ে গ্রাম বহুমুখী সমবায় গঠন করবে। বহুমূখী গ্রাম সমবায় নিবন্ধনে যেন কোন হয়রানির শিকার হতে না হয়। এ বিষয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাসহ সমবায় মহাপরিচালকের সহযোগিতা কামনা করছি।”

চলমান নদী ভাঙ্গন রোধে নদী শাসন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি মোসাম্মৎ মল্লিকা বেগম বলেন, “বাংলাদেশ নদী ভাঙ্গন একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। নদী ভাঙ্গনে দিনদিন বাড়ছে ভূমিহীনদের সংখ্যা। নদ-নদীর পানি ঘনঘন হ্রাস-বৃদ্ধিতে দেশের বন্যা কবলিত বিভিন্ন জেলাগুলতে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙ্গন। তাই দ্রুত নদ-নদীর শাসন এখন সময়ের দাবী।”

তিনি বলেন, “আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সীমান্তে দেশের ভূমি রক্ষায় প্রাণ দেয়, এবার তাদেরকে ভূমি রক্ষায় প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়তে হবে, নদী শাসন করে ভূমি রক্ষা করতে হবে। সেনাবাহিনীর দায়িত্ব ও কর্তব্য দেশের ভূখন্ড রক্ষা করা। তা বহিশত্রু হোক বা প্রাকৃতিক নদী ভাঙ্গন থেকে এক কথা। নদ-নদীর শাসন প্রকল্প আর ঠিকাদারীতে নয় আর নদী শাসনের নামে লুটপাট নয়। দেশের ভূখন্ড রক্ষায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীদের অবশ্যই তাদের উপর অর্পিত ভূমি রক্ষার এ দায়িত্ব তাদের পালন করতে হবে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করছি, আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে দিয়ে নদ-নদীর শাসন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে। যদি সেনাবাহিনী চট্টগ্রামের মেরিন ড্রাইভ করতে পারে তবে নদী শাসনও করতে পারবে। এ সক্ষমতা আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর আছে।”

মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন, ফজলুর রহমান, মান্নান মাহমুদ, ডা. নাসির উদ্দিন সহ প্রমুখ।

আপনার মতামত লিখুন :